Wednesday, February 26, 2020

যাদুটোনার লক্ষণ ও প্রতিকার (Symptoms of Black Magic)

সূচনাঃ মানবতার জন্য এক জঘন্য অভিশাপের নাম হলো যাদুটোনা বা ব্ল্যাক ম্যাজিক। হিংসুক ও কুচক্রী ব্যক্তিরা মানুষকে শায়েস্তা করবার কাজে এই নোংরা অস্ত্রটি ব্যবহার করে থাকে। এর দ্বারা পিঠা বা গুড় নষ্ট করা থেকে শুরু করে পেটের বাচ্চা নষ্ট করা পর্যন্ত ছোট-বড় সবরকম অনিষ্টই সাধন করা হয়। রূপকথার গল্পভিত্তিক টিভি সিরিয়ালে আমরা দেখে থাকি রাক্ষসী, ডাইনী বা নাগিনী কর্তৃক রাজাকে বশীকরণ করে রাণী ও রাজকন্যাকে ভোগানো বা হেনস্তা করা, মায়াশক্তি প্রয়োগে রাজকুমারের মহামিলন ঠেকানো বা রাজকুমারীর অনাগত সন্তানকে অঙ্কুরেই বিনাশ করার প্রয়াস— এগুলো কিন্তু নেহায়েত কাল্পনিক বা অবাস্তব কিছু নয়; বরং মানব সমাজে এসবের বাস্তবতা রয়েছে। পবিত্র কুরআনে জাদুটোনার ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টির ন্যায় হীন অপকর্মের কাজে যাদুবিদ্যার ব্যবহারের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি-আমি যে কেউ কাছের মানুষজনের যে কারো দ্বারাই এ জাতীয় ফেতনার শিকার হয়ে থাকতে পারি যে কোন কারণে যে কোন সময়ে। বিশেষ করে শৈশবকালে ও বিবাহিত জীবনে মানুষ এ ধরনের ঝুঁকি বা হুমকির মধ্যে পড়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাদুর ভিকটিম নারীরাই হয়ে থাকে, আবার এই যাদুটোনার কাজটা বেশিরভাগ হয়েও থাকে নারীদের দ্বারাই।
সাধারণভাবে জিনদের জন্য মানুষের উপর আধিপত্য বিস্তার ও সরাসরি ক্ষতিসাধনের সুযোগ রাখা হয়নি। তবে কোন মাধ্যম বা উছিলা পেলে তার দ্বারা মানুষের উপর জিন শয়তানদের আগ্রাসন ঘটতে পারে। এই মাধ্যম কখনো হতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তির নিজেরই নাফরমানি ও গাফলতির দ্বারা (যেমনটি আল্লাহ বলেছেন, কেউ আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে তিনি তার উপর এক শয়তানকে চাপিয়ে দেন), কখনো হতে পারে মানুষের মধ্যেকার কোন যাদুকর কর্তৃক বিশেষ কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা পরিবারের উপর শয়তানের অনুপ্রবেশের দরজা খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে (যেমন- সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীরের অংশ, ব্যবহার্য দ্রব্য বা খাদ্যদ্রব্যের অংশ বিশেষ পদ্ধতিতে শয়তানের নাগালের মধ্যে এনে দেয়া), আবার কখনো বা হিংসুক ব্যক্তি কর্তৃক ভিকটিমের শরীর, পোশাক বা খাদ্যের উপর বদনজর প্রদানের দ্বারা সেখানে শয়তান অবতরণের পোর্ট নির্মাণের মাধ্যমে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাদুকররা জিনকে বশীকরণের মাধ্যমে মানুষের শরীর, মন ও কর্মকাণ্ডের উপর অনুপ্রবেশ ও হস্তক্ষেপে বাধ্য করে থাকে— জিন স্বেচ্ছায় বা সজ্ঞানে আগমন করে না। যাদুকরদের প্রধান ব্যক্তি বড় কোন নেতৃস্থানীয় ক্ষমতাধর জিন শয়তানের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকে এবং সেই চুক্তি ও সমঝোতার আওতায় বড় শয়তানটা ছোট ছোট জিনগুলোকে যাদুকর ও তার খদ্দেরদের আনুগত্য করতে বাধ্য করে।

বর্ণনাঃ শত্রুতামূলক যাদুটোনা বা ব্লাক ম্যাজিকের কুপ্রভাব আপনার উপর পড়েছে কিনা, কোন অশুভ শক্তির গোপন অনিষ্টকর তৎপরতায় আপনি বা আপনার পরিবার আক্রান্ত হয়েছেন কিনা, তার কয়েকটি সম্ভাব্য আলামত নিম্নরূপ:- 
১। (মহিলাদের ক্ষেত্রে) সন্তান ধারণ বা সন্তান প্রসব বাধাগ্রস্ত হওয়া 
২। (পুরুষের ক্ষেত্রে) অক্ষমতা বা দুর্বলতায় আক্রান্ত হওয়া 
৩। ক্ষুধামন্দা বা অরুচি 
৪। মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং বিনা কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকা 
৫। ঘুমের মধ্যে গলা শুকানো 
৬। সম্পদে বরকত না হওয়া এবং উপার্জিত টাকা-পয়সা হাতের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া 
৭। চেষ্টা, যোগ্যতা ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কোন চাকুরী না হওয়া 
৮। লেখাপড়া মুখস্থ করা বা মনে রাখতে না পারা 
৯। প্রচণ্ড মাথাব্যথা 
১০। মহিলাদের উরুতে দাগ ও তলপেটে ব্যথা 
১১। অনিদ্রা বা অস্বাভাবিক নিদ্রা 
১২। স্বপ্নে আক্রান্ত হওয়া; কিছু দেখা বা জানতে পারা
১৩। বিরক্তি ও ক্লান্তি 
১৪। স্মৃতিভ্রষ্টতা 
১৫। সুঁই বা পিনের মত খোঁচা
১৬। মাথা হতে পা পর্যন্ত বিভিন্ন রকম সমস্যা 
১৭। দুর্ঘটনা 
১৮। দোয়া-কালাম পাঠে অক্ষমতা 
১৯। কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনা
২০। হঠাৎ করে কোন ভালোবাসার জিনিস ঘৃণা বা ঘৃণিত জিনিস ভালোবাসায় পরিণত হওয়া
২১। অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ ও প্রতিকূলতা
২২। একনজরে কতিপয় গুরুতর লক্ষণ

এখানে উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত সমস্যাগুলো যাদুটোনা বা মানবসৃষ্ট অনিষ্ট ছাড়াও অন্য যেকোন কারণে হতে পারে। তবে এগুলোর মধ্যে কেউ দুই বা ততোধিক সমস্যার সম্মুখীন হলে যাদুটোনার বিষয়টি খতিয়ে দেখা সাবধানতার পরিচায়ক। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া সন্দেহের বশে কাউকে দোষী ভাবা ঠিক হবে না। আবার একটি পরিবারে যাদুটোনার ভিকটিমদের সবার মধ্যে সবগুলো লক্ষণ সমানভাবে প্রকাশ নাও পেতে পারে, একেকজনের উপর একেকটা লক্ষণ বেশি প্রবল হতে পারে। নিম্নে উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:- 

১। (মহিলাদের ক্ষেত্রে) সন্তান ধারণ বা সন্তান প্রসব বাধাগ্রস্ত হওয়া: কোন নারীর বিরুদ্ধে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টির পিছনে কি কি ধরনের মোটিভ থাকতে পারে বা কোন্‌ কোন্‌ ধরনের ব্যক্তিরা কি কি কারণে জড়িত হয়ে থাকতে পারে, তার সাতটি কারণ একটি ওয়েবসাইটে বর্ণিত হয়েছে এবং তার মধ্যে দুটি কারণ হলো— (ক) পরিবারের মধ্যে কেউ একজন নিজে সন্তান লাভ করতে পারছে না বিধায় আপনার নির্বিঘ্নে সন্তান লাভের বিষয়টি সে সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না (Someone in the same family is unable to conceive and hearing the good news your pregnancy could NOT handle it at all.) এবং (খ) আপনার মৃত্যু কামনা করে এমন কেউ সন্তান প্রসবজনিত দুর্ঘটনার ছলে আপনার মৃত্যু নিশ্চিত করতে চায় যাতে মানুষ এটাকে নিছক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হিসেবে গণ্য করে এবং আপনার ঐ অনিষ্টকামী ব্যক্তিকে সন্দেহ করতে বা আইনের আওতায় আনতে না পারে (Someone wants you to die in the process of pregnancy so that it looks very natural way of killing you.)। [সূত্র: http://www.maakalishwetasarojinimahakali.com/pregnant.html (বি:দ্র: সূত্রে বর্ণিত ওয়েবসাইটে নির্দেশিত প্রতিকার ব্যবস্থা ধর্মীয় দিক থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। উক্ত লিংকের আকীদা-বিশ্বাসের সাথে অত্র লেখকের কোন সম্পর্ক নেই। শুধু ডায়াগনোসিস তথা রোগনির্ণয়ের জন্য উক্ত সাইটের সহায়তা নিয়েছি মাত্র, কিন্তু চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারে তাদের সাথে আমরা একমত নই।)] 
পরিবারের মধ্যে জিঘাংসা উদ্রেক করার মতন হিংসা মূলত দুটি বিষয় নিয়ে হয়ে থাকে। একটি হলো সন্তান, অপরটি হলো সম্পত্তি। কিন্তু আসলে এই দুটো কারণকে পৃথকভাবে না বলে একটি কারণের মধ্যেও গণ্য করা যায়। কারণ, বৈষয়িক চিন্তাধারাসম্পন্ন মানুষ সন্তান কামনাও করে থাকে মাতৃস্নেহ বা মমতার বশে নয়, বরং বৈষয়িক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকেই। পরিবারের মধ্যে যত যাদুটোনা হয়ে থাকে, তার প্রায় সবই হয়ে থাকে মূলত সম্পত্তির জন্যই। কাউকে যাদুর মাধ্যমে মারতে চাওয়ার পিছনে মনের মধ্যে কাজ করে সম্পত্তি লাভের আশা, অথবা হারানোর ভয়। সম্পত্তি লাভের আশাজনিত লোভ বা হিংসার উদাহরণ হলো— কোন যৌতুকলোভী শাশুড়ী যখন বেয়াই বাড়ি থেকে প্রাপ্ত যৌতুককে অপ্রতুল ও অপর্যাপ্ত মনে করে, তখন তার মনে এই চিন্তা ঢোকে যে, অন্য কাউকে বউ করে আনলে হয়তো এর চেয়ে বেশি পেতাম। অথবা, এর কাছ থেকে যা পাওয়ার বা আদায় করার তা হয়ে গেছে, এবার একে বিদায় করে অন্য কাউকে বউ করে আনতে পারলে আরো ভালো কিছু পাওয়া যাবে। সম্পত্তি হারানোর ভয়জনিত লোভ, উদ্বেগ ও হিংসার উদাহরণ হলো— পারিবারিক সম্পত্তিটা যার নামে রেজিস্ট্রিকৃত আছে, তার যদি পরিবার ও বংশধরের আগমন ঘটে, তখন সম্পত্তির একচেটিয়া অধিকার ও মালিকানা সব ওরা পেয়ে যাবে, আমরা কিছুই পাব না। অতএব, ঐ বেটার পরিবার ও বংশধরকে আঁতুড় ঘরে বিনাশ করে দিতে পারলেই সেটা 'বুদ্ধিমানের কাজ' হবে, 'আপদ বিদায়' হবে। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ভাই-ভাবী আদৌ সম্পত্তি নিয়ে কিছু ভাবছে কিনা, সেটা জিজ্ঞেস বা যাচাই করে দেখারও প্রয়োজন অনুভূত হয় না। 
কোন সম্পদশালী পরিবারে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন হিংসুক ব্যক্তিরা সম্পদের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পথে যাকে বাধা বা হুমকি মনে করে, প্রথমে তার বিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করে। বিয়ে ঠেকানোর কাজটা যাদুর মাধ্যমেও হতে পারে; আবার প্রকাশ্য বিরোধিতা, বিবাদ সৃষ্টি ও ভাঙ্গানি প্রদানের মাধ্যমেও হতে পারে। বিয়ের পাত্রীর কাছে ছেলেকে অক্ষম এবং ছেলের পরিবারে পাত্রীপক্ষকে সম্পত্তিলোভী সাব্যস্ত করে গণ্ডগোল পাকিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেবার প্রয়াস চালানো হতে পারে। পরিবারে বিদ্যমান ঈর্ষাপরায়ণ ও বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক কাউকে পরিবারে হেয় ও বঞ্চিত করে রাখবার উদ্দেশ্যে তার বিয়ে ঠেকানোর প্রচেষ্টা এবং তাতে ব্যর্থ হলে ভিকটিমকে পারিবারিক জীবনে অসুখী ও নির্বংশ করে রাখবার জন্য আরো বড় রকমের অনিষ্ট ও নাশকতায় লিপ্ত হওয়া প্রসঙ্গে একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “We have also seen how they try to block the marriage of victims in order to bring disgrace and cause sufferings. However, what if the victim is already married? So will they spare them? The answer is ‘No’.” (সূত্র: http://symptomsofblackmagic.blogspot.com/2014/01/symptoms-of-black-magic-induced_3010.html) আর এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক, না হওয়াই বরং অস্বাভাবিক। কারণ, সম্পত্তিলোভী বা সম্পত্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন ও হিংসুক ব্যক্তিদের কাছে প্রতিপক্ষের বউয়ের আগমনের চেয়েও সন্তানের আগমন আরো বড় অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এটা ঠেকানোর জন্য তাদের প্রচেষ্টা বিয়ে ঠেকানোর চাইতেও অনেক বেশি জোরালো হবে। বউ যেখানে সম্পত্তির সরাসরি উত্তরাধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও তার আগমনের পথে ব্যারিকেড বসানো হয়, সেখানে সন্তান তো সম্পত্তির সরাসরি উত্তরাধিকারী, কাজেই সেক্ষেত্রে হিংসুকদের attitude কি হবে এবং তাদের দ্বারা কী ঘটতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আর বিয়ে ঠেকানোর পিছনেও মূল উদ্দেশ্য থাকে সন্তানের আগমন ঠেকানো, তাই সন্তান পেটে আসলে বা জন্মদানের সময় হলে বিদ্বেষপরায়ণ ব্যক্তিরা তা ঠেকাতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাবে— এমন আশংকাই প্রবল।
এ সংক্রান্ত আরো দুটি লক্ষণের কথা বর্ণিত হয়েছে অপর একটি ওয়েবসাইটে:- (ক) unable to conceive due to psychic blocks so as the woman stays barren all her life এবং (খ) blockages in fallopian tubes and/or unable to hold the pregnancy resulting in miscarriage [সূত্র: https://vedicwisdom.com/symptoms-black-magic/
মাতৃত্ববিষয়ক জটিলতায় যাদুটোনার ইন্ধন থাকার আলামত বিষয়ে আরো কিছু তথ্য অপর একটি ওয়েবসাইটে পাওয়া গিয়েছে। তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:- 
General signs and symptoms of an infertility and miscarriage spells curse: Bad dreams (nightmares about snakes, spiders, mud, needles, knives, arms, ropes, coffins, corpses, you being raped or having sex with a person of the same sex) or no dreams at all; obesity, mouth dryness, headache, hunger, fatigue, loss of interest in life and the partner, irritability, absent-mindedness, despair, darkened face skin, itch, suicidal thoughts. Worsening of these symptoms during the full moon indicates an infertility curse. 
Signs of an infertility curse (for women): False pregnancy, inability to carry a pregnancy, chronic miscarriage, missed abortion, hair loss, splitting nails, skin aging, acne, bruises and wounds which wouldn’t heal and close up (অপারেশনের ক্ষত ও ব্যথা নিরাময় না হওয়া সম্ভবত এই আলামতের অন্তর্ভুক্ত), burning palms
Objects used for casting an infertility curse (miscarriage spells): An infertility curse can be cast with the help of your photo, hair, nail clippings, cloths, saliva, sperm, sanitary pads, blood, food, water, gifts, money. Be careful if you suddenly find (near your doorstep, in your pockets, purse, wardrobes, house, etc.) objects which don’t belong to you, such as a thread with knots, ashes, eggs, black wool, beer, garbage, feathers, hairs (infertility, divorce); shells of sunflower seeds, grains, coins, vodka, salt, pins, glass, earth, expensive jewelry (usually gold), wine, watermelon and its seeds (difficult delivery); mushrooms, melon, toys, crosses, flies, butterflies, moth, flour (difficult delivery, delivery of a dead fetus and further infertility); fish, flowers (especially roses and coax-eye daisies). 
Presented with an object with an infertility curse [especially rings, amulets, chains, bracelets, flowers, clothes (skirt, pants, dresses, belts), knives, forks, soft toys, tableware], you won’t be able to get rid of it by throwing the object away. The negative magical program has already been passed on to you and needs to be removed. 
An infertility spells curse (black magic) & can be cast in a church (with the help of funeral candles) and turned upside down icons. 
Often such curses are put with the help of wedding presents, bed linen, golden rings and earrings, tableware, money. 
Who casts infertility curses (miscarriage curses and abortion spells): Often infertility curses are cast at weddings (on both newlyweds, just the husband or the wife, or the pregnant wife) by envious (হিংসুটে) friends, relatives or mean mothers-in-law. 
A powerful evil eye curse can cause infertility. 
Sometimes people cast infertility curses to improve their health. Look around. Do you have friends who can’t get pregnant for a long time and then suddenly, as if by a miracle, get pregnant and give birth to a baby? This person might have improved his health at the expense of your health by shifting his curse onto you. 
Infertility curses can be passed on from one generation to another and occur generations later. 
[Ref: https://redmercuri.com/black/miscarriage-curse_-infertility-curse_-casting_-signs_-how-to-remove-and-removal-infertility-and-miscarriage-curse_-methods_-cure_-tarot-reading_-black-magic-abortion-spells.html (সতর্কীকরণ: সূত্রে বর্ণিত ওয়েবসাইটটি এসব অনৈতিক কাজে সহায়তা করে থাকে এবং যাদুটোনার প্রতিকারের ক্ষেত্রেও অনৈতিক ও অমানবিক পন্থা অবলম্বন করে। তাই তাদের শরণাপন্ন হওয়া বা তাদের সাথে নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করা বাঞ্ছনীয় নয়।)] 
যাদুর মাধ্যমে প্রসূতি নারীর সন্তান প্রসবকালে প্রসূতি ও নবজাতক উভয়কে হত্যার চেষ্টার যাদুর শিকার আজকাল অনেকেই হয়ে থাকে। আর এ ধরনের যাদুর সত্যতা পাওয়া যায় বিভিন্ন সূত্রে। একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, "গর্ভবতী নারীদের প্রসব বন্ধ করা থেকে শুরু করে যৌনাকাঙ্খা চরিতার্থ করার মত বিভৎস সব যাদু বিধানের চর্চা হতো তখন।" [সূত্র: https://spycatbd.blogspot.com/2016/10/blog-post_99.html (সতর্কীকরণ: বর্ণিত প্রবন্ধে ধর্ম বিষয়ে বেশকিছু তথ্য আছে বিভ্রান্তিকর। তাই পুরো প্রবন্ধটির সব কথা গ্রহণ করা যাবে না।)]
কোরআনে একশ্রেণির মানুষের সম্পর্কে এরকম বিবরণ এসেছে, "আর এমন কিছু লোক রযেছে যাদের পার্থিব জীবনের কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করবে। আর তারা সাক্ষ্য স্থাপন করে আল্লাহকে নিজের মনের কথার ব্যাপারে। প্রকৃতপক্ষে তারা কঠিন ঝগড়াটে লোক। যখন ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও মানব বংশ ধ্বংস করতে পারে। আল্লাহ ফাসাদ (অশান্তি ও অনিষ্ট) পছন্দ করেন না।" (সূরা বাকারা: ২০৪-২০৫) এখানে শস্যক্ষেত্র বলতে ফসলের ক্ষেতও হতে পারে, আবার নারীদের প্রজনন অঙ্গও হতে পারে, যেহেতু কোরআনের এক আয়াতে স্ত্রীদেরকে স্বামীদের জন্য শস্যক্ষেত্র বলা হয়েছে। আর এরপর এ আয়াতে نَّسْلَ শব্দের অর্থ হয়ে থাকে বীজ, শিশু, প্রজন্ম ইত্যাদি। এতে বোঝা যায়, এই শ্রেণির অমানুষেরা ফসলের ক্ষেত যেমন নষ্ট করতে পারে, ক্ষেতের সাথে ক্ষেতের ফসলও নষ্ট করতে পারে। নারীর প্রজনন অঙ্গ যেমন নষ্ট করতে পারে, তেমনি গর্ভজাত ভ্রূণ কিংবা ভূমিষ্ঠরত বা ভূমিষ্ঠ শিশুকেও হত্যা করতে পারে। কোরআনের আয়াত থেকে আমরা এই ইঙ্গিত পেলাম যে, এই শ্রেণির দুর্বৃত্তরা মুখরোচক ও শ্রুতিমধুর কথাবার্তা বলে মানুষকে মুগ্ধ করে রাখে। আমাদের সমাজে দেখা যায়, একশ্রেণির মানুষ একদিকে আত্মশুদ্ধি ও মানবসেবার গালভরা বুলি প্রচার করে, মানুষের প্রতি উদারতা ও মমতার বাণী শোনায়, আকর্ষণীয় কণ্ঠে গল্প-উপদেশ-লেকচার শুনিয়ে শ্রোতাদেরকে মোহিত করে রাখে; অপরদিকে গোপনে এমন সব বিদ্যার চর্চায় লিপ্ত থাকে, যার দ্বারা শস্যক্ষেত্র তথা নারীর স্পর্শকাতর স্থানে সমস্যা সৃষ্টি করা যায়— দাম্পত্য সম্পর্কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি থেকে শুরু করে ভ্রূণ ধ্বংস করা এবং ডেলিভারির সময় প্রসবদ্বার আটকে দিয়ে প্রসূতি ও নবজাতককে একই সাথে হত্যা যায়। এমনকি যাদুর বাণগুলোও এরা অধিকাংশ সময় নারীর স্পর্শকাতর স্থান লক্ষ্য করেই নিক্ষেপ করে থাকে। শুধু তাই নয়, অসভ্য জিন পাঠিয়ে সম্মানহানির ঘটনাও আমাদের সমাজে অহরহ হচ্ছে এইশ্রেণির পিশাচ গুরুর ডাইনী শিষ্যদের দ্বারা। এরা শুধু হত্যার চেষ্টা ও ক্ষত সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হয় না, বরং ক্ষতস্থানে নিয়মিত জিন পাঠিয়ে উপর্যুপরি দংশন করিয়ে কাটা ঘায়ে বারবার কর্তন করাতে থাকে।
সত্যি বলতে কি, কাফেররা বরাবরই নারীদের স্পর্শকাতর স্থানকেই লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে থাকে এবং দুর্বল স্থানে নির্যাতন ও কষ্টদানের দ্বারা একপ্রকার পৈশাচিক উল্লাস অনুভব করে ও বিকৃত জিঘাংসা চরিতার্থ করে। আল্লাহ ও নবীর (সা.) ঘোর দুশমন আবু জেহেল সুমাইয়া (রা.)-কে হত্যার ক্ষেত্রেও দুর্বল স্থানে কাপুরুষোচিত আঘাতের পথ বেছে নিয়েছিল। বর্তমানেও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কাফেররা মুসলিমদের উপর নির্যাতনের ক্ষেত্রে নারীদের দুর্বল স্থানকেই লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে থাকে। নারীর স্পর্শকাতর স্থানে ক্ষতিসাধন দুইভাবে হতে পারে- সম্ভ্রমহানির মাধ্যমে এবং যন্ত্রণাদায়ক আঘাত ও ক্ষত সৃষ্টির মাধ্যমে। কাফের ও শয়তানরা সরাসরি নির্যাতনের ক্ষেত্রেও এ দুটি পন্থা অবলম্বন করে, আবার যাদুর মাধ্যমে জিন পাঠিয়ে নির্যাতনের ক্ষেত্রেও এ দুটি পন্থাই গ্রহণ করে। আর যাদুটোনা যেহেতু কুফর ও শয়তানি কাজ, শয়তানের হাতে বায়াত হয়ে কুফরে দীক্ষিত ব্যক্তিরাই যেহেতু এই কর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে, তাই তাদের কর্মকাণ্ড ও আচরণে কুফর ও শয়তানিসুলভ এই কর্মটি অন্তর্ভুক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই তো দেখা যায়, যাদুকর ডাইনীদের অধিকাংশ আক্রমণ হয়ে থাকে নারীর লজ্জাস্থানে। যত যাদুর বাণ ও ঢিল আসে, তার সিংহভাগই শুধু এক জায়গায় এসে পড়ে। এমনকি নাবালিকা অবস্থায় বাণ মেরে অসময়ে পিরিয়ডও ঘটিয়ে থাকে। একশ্রেণির যাদুকর ডাইনী ভূপৃষ্ঠের মধ্যে এতটাই নিম্নস্তরের জীবে পরিণত হয় যে, নিজের রক্তসম্পর্কের শিশুদের উপরেও লম্পট জিন পাঠিয়ে পৈশাচিক তাণ্ডব করিয়ে থাকে। ডাইনী ও পিশাচিনীরা তাদের টার্গেকৃত নারীদের সম্মানহানির জন্য দলবদ্ধভাবে খারাপ জিনদের পাঠায়। রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষের উপর এরা আগ্রাসন চালায় এবং ভিকটিমকে অবশ ও অচেতন করে সর্বনাশ সাধন করা হয়। সম্মানহানি ঘটাতে ব্যর্থ হলে স্পর্শকাতর স্থানে কামড়ে ধরে জীবনীশক্তি শুষে নিয়ে অবশ করে দেয় এবং দাম্পত্য অক্ষমতা সৃষ্টি করে। এই নাগিনীদের এ ধরনের হিংস্র ছোবল থেকে বাদ যায় না রক্তসম্পর্কের কন্যাশিশুও। কাফেরদের যাবতীয় প্রকাশ্য ও গোপন নৃশংস কর্মকাণ্ড থেকে বোঝা যায়, তাদের মত জালেম আর কেউ হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন, "কাফেররাই মূলত: জালেম।" (সূরা বাকারা: ২৫৪)

২। (পুরুষের ক্ষেত্রে) অক্ষমতা বা দুর্বলতায় আক্রান্ত হওয়া: কোরআনে যাদুটোনার উৎপত্তির ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে যাদুটোনার ব্যবহারের মূল ক্ষেত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা তারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতো। আর এই বিচ্ছেদ ঘটানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পন্থাটি হলো স্বামীকে দুর্বল করার দ্বারা স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা এবং স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক চাপ ও ভোগান্তি সৃষ্টি করা। আর দ্বিতীয় আরেকটি পন্থা হলো স্ত্রীকে বন্ধ্যা করা বা বাচ্চা নষ্ট করার দ্বারা সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ করার মাধ্যমে স্বামীর কাছে তার মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতাকে বিনষ্ট করা, যাতে স্বামীর মনে স্ত্রীকে পরিত্যাগ বা স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গে একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “If the victim is already married, then preventing him from having biological children cannot be the sole reason. After all, there are other ways of doing so also, such as making the wife barren, miscarriages etc.”। [সূত্র: http://symptomsofblackmagic.blogspot.com/2014/01/symptoms-of-black-magic-induced_9801.html] এছাড়া পুরুষকে অক্ষম করতে পারলে তা স্ত্রীর মাঝে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি এবং এর দ্বারা সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ঘটানোর কাজটি এগিয়ে নিতেও সহায়ক হয়ে থাকে। 
কোন কোন পরিবারে দেখা যায়, বিয়ের সময় যারা বিয়ে ভাঙ্গানি দেবার উদ্দেশ্যে পাত্রীপক্ষের কাছে গিয়ে পাত্রের অক্ষমতা ও দুর্বলতার কথা প্রচার করে, বিয়ের পর তারা নিজেদের অভিযোগকে সত্য প্রমাণের জন্য যাদুটোনা বা যেকোন গুপ্ত অনিষ্টের আশ্রয় নিয়ে থাকে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে এসব দুর্বৃত্তদের সৃষ্ট অদৃশ্য ফেতনার ফলশ্রুতিতে কোন দম্পত্তির মাঝে যখন বিবাহ বিচ্ছেদের উপক্রম হয়, বউ চলে যাবার জন্য উদ্যত হয়, তখন চোরের মাকে বড় গলায় বলতে শোনা যায়, “আমার মেয়েদের ভবিষ্যদ্বাণীই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।” 
দুইজন একসাথে সুস্থ না থাকা অর্থাৎ একজন সুস্থ তো আরেকজন অসুস্থ থাকা, একজনের যখন আগ্রহ থাকে তখন আরেকজনের মাঝে অনাগ্রহ ও অনীহা কাজ করা, দূরে থাকলে পরস্পরের প্রতি অনুরাগ থাকা কিন্তু কাছে থাকলে বিরাগ ও উদাসীনতা চলে আসা— এগুলোও সম্ভবত যাদুটোনার প্রভাব। বিচ্ছেদের যাদুতে একজনকে দুর্বল ও অক্ষম করে তোলা হয় এবং অপরজনের আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর করে তোলা হয়, যাতে তা শারীরিক-মানসিক-স্নায়বিক যন্ত্রণার কারণ ঘটায়।
বিচ্ছেদের যাদুতে স্বামীর উপর বাণ মেরে বা জিন চালান করে অসুস্থ ও অক্ষম করে তোলা হয়, অথবা ইফরিত জিন চালান করে স্বভাব-চরিত্র নষ্ট করে স্ত্রীর দিক থেকে মন ফিরিয়ে অন্যদিকে ধাবিত করা হয়। আর স্ত্রীর বেলায় হয় চাহিদাকে বাড়িয়ে তোলা হয়, অথবা ওয়াসওয়াসা দিয়ে ক্ষোভ ও হতাশাকে উষ্কে দেয়া হয়। উদ্দেশ্য হয় স্ত্রীকে সংসার ছাড়তে অথবা দুনিয়া ছাড়তে বাধ্য করা। চক্রান্তকারীদের লক্ষ্য থাকে, স্ত্রী চলে গেলে অথবা আত্মহত্যা করলে মানুষ জানবে, স্বামীর অক্ষমতা বা বিপথগামিতায় হতাশ হয়ে এমনটি ঘটেছে। এ কারণেই কুচক্রীরা সরাসরি বউ তাড়ানো বা হত্যা করার বদলে কৌশলে 'ধরি মাছ, না ছুঁই পানি' এবং 'সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না' টাইপের পলিসি বেছে নেয়। 
কুফরী বানের শিকার পুরুষ ও নারীর শরীরের সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে কি ধরনের আগ্রাসন ও জ্বালা-যন্ত্রণা ঘটে থাকে, তার কিছুটা আইডিয়া পাওয়া যাবে একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত পোস্টে প্রদত্ত যাদুর পুতুলের ছবি থেকে:- https://www.facebook.com/TheRuqyaServices/photos/a.580293282032266/3436065906454975/?type=3&__tn__=H-R। অবশ্য উচ্চ মাত্রার ধ্যানী যাদুকরদের পক্ষে পুতুল-টুতুল ব্যবহারের দরকার হয় না, বরং তারা দৃষ্টি ও মনের কল্পনা দিয়েই মানুষের যেকোন অঙ্গে জিন চালানি দিতে পারে। পুতুলের ছবির লিংকটা দিলাম শুধু যাদুর আগ্রাসনের প্রকৃতি ও ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য।
কোন পুরুষকে অক্ষম বা অপারগ করে তোলার কাজটি সাধারণত স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অভিন্ন শত্রুর দ্বারাই ঘটে থাকে। তবে দু’একটি ক্ষেত্রে আবার এ কাজটি স্বয়ং স্ত্রীর দ্বারাও ঘটে থাকতে পারে। যেখানে স্ত্রী নিজেই চরিত্রভ্রষ্ট ও পরপুরুষ আসক্ত হয়, সেখানে নিজের পরপুরুষগামিতাকে বৈধ ও নির্বিঘ্ন করবার জন্য এবং এ ব্যাপারে স্বামীর মুখ বন্ধ রাখার জন্য স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর সক্ষমতা বিনষ্ট করবার উদ্দেশ্যে যাদুটোনা বা অন্য যেকোন প্রকার নাশকতা সংঘটিত হওয়া অসম্ভব নয়। 

৩। ক্ষুধামন্দা বা অরুচি: ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং খাবারের প্রতি অনীহা ও অরুচি বোধ করা যাদুটোনার একটি অন্যতম লক্ষণ। যাদুটোনার লক্ষণ বর্ণনা করতে গিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এই লক্ষণটির উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- Complete loss of appetite for food (https://islamqa.info/en/240). Loss of appetite and consequently weight (http://keepingupwithyourblonde.com/how-to-know-that-we-are-victims-of-black-magick.htm). শিশুদের খাবারের অরুচি ও নিদ্রায় স্বল্পতার পিছনে বদনজরের সম্ভাব্যতা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে একটি ওয়েবসাইটে; তাহল- “Babies can be very much affected by the evil eye as well causing a fever, a loss of appetite, and lack of sleep. The evil eye gives an opportunity to jinn in one’s house to scare the victim. That is the most common explanation for children’s fears at night or in darkness.” (Ref: http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/
কোন পরিবারের মধ্যে যদি কোন শিশুর খাবারের দিকে কুনজর দেবার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়; বাচ্চার খাবার কেড়ে নেয়া ও বাচ্চাকে খাবার থেকে বঞ্চিত করবার যথাসাধ্য প্রয়াস যদি চোখে পড়ে; বাচ্চার রিজিক বন্ধ করা বিশেষত দুধ বন্ধ করবার সংঘবদ্ধ লবিং ও তৎপরতার কথা যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায়; বাচ্চার চিকিৎসার্থে খরচ হওয়া আদার রসের প্রতিটা ফোঁটা যদি গুণে রাখা হয়; আর সেই সাথে খাদ্যে অরুচির দিক থেকে যদি সেই বাচ্চাটাই সবার চ্যাম্পিয়ন হয়, খাবার খাওয়া জিনিসটা যদি তার কাছে সর্বাধিক অপ্রিয় বস্তু হয়, শারীরিক দিক থেকেও যদি ঐ শিশুটি অন্য সবার থেকে রোগা হয়; তাহলে এরূপ ক্ষেত্রে এর পিছনে যাদুটোনার বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। বিশেষ করে বাচ্চার যেই খাবারটি সর্বাধিক আলোচিত-সমালোচিত হতে দেখা গেছে, শিশুর যে খাবারটিকে সবচেয়ে বেশি বাঁকা চোখে দেখা হয়েছে, ঠিক সেই খাবারটির প্রতিই যদি শিশুর মাঝে সবচেয়ে বেশি বিতৃষ্ণা ও অনীহা জন্ম নেয়, এমনকি সেটি শিশুর খাদ্যতালিকা থেকে একপ্রকার বাদ পড়ে যায়, এবং শিশুর উক্ত খাবারটি গ্রহণের ব্যাপারে সমালোচনাকারী ও তাদের প্রিয়ভাজনেরাই সেই খাবারটি থেকে একতরফাভাবে রসনার খোরাক লাভ করতে থাকে, তাহলে একে যাদুটোনা বা বদনজরের ফল ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। 
এখানে উদ্ধৃত শেষোক্ত তথ্যটি থেকে ধারণা করা যায়, কোন বাচ্চা একাধারে দীর্ঘদিন অরুচি, জ্বর ও অনিদ্রায় ভোগা, ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তারপর দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা— এগুলোও সম্ভবত বদনজরের দ্বারা সংঘটিত। 
অবশ্য বাচ্চাদের খাবার অরুচি ও নিদ্রায় অনিয়মের পিছনে টিকার কুপ্রভাব সহ আরো অনেক রকমের কারণও থাকতে পারে। সুতরাং অরুচি মাত্রই যাদুটোনার প্রভাব হয়ে থাকবে— এমনটি সবক্ষেত্রে নাও হতে পারে। 

৪। মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং বিনা কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকা: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যাদুটোনার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে এবং এর বিবরণ কোরআনেও পাওয়া যায়, “অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে।” (সূরা বাকারা: ১০২) বলাবাহুল্য, বিচ্ছেদ ঘটানোর কাজটি সাধন করা হয় বিচ্ছেদ ঘটবার উপযোগী কারণসমূহ তৈরি করবার মাধ্যমে। অর্থাৎ, যা যা ঘটলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হবে, তা তা ঘটানোর মাধ্যমে। আর এই বিভেদ সৃষ্টির কাজটি উপরে ১ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত বাচ্চা নষ্ট করার মাধ্যমে হতে পারে, ২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত অক্ষমতা সৃষ্টির মাধ্যমেও হতে পারে, পরস্পরের মধ্যে বিরক্তি বা ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির মাধ্যমেও হতে পারে, আবার পরস্পরকে একে অপরের চোখে কুৎসিত দেখানোর মাধ্যমেও হতে পারে, আবার বাস্তবে উভয়ের চেহারা-সুরত বিনষ্ট করে দেবার দ্বারাও হতে পারে। According to Al-Hafidh Ibn Kathir, the cause of separation between two spouses through this Sihr is that each of them appears to the other as an ugly or ill-mannered person. – (Tafsir ibn Kathir: 1/144) [সূত্র: http://www.ummulhasanaat.co.za/10-types-of-sihr-manifestations
অপর একটি ওয়েবসাইটে ব্লাক ম্যাজিকের লক্ষণসমূহের মধ্যে দুটি লক্ষণ বর্ণিত হয়েছে এভাবে- (ক) Quarrels at home for no reason, with own family members, suicidal attempts. (খ) Sudden fights between husband & wife. [সূত্র: http://www.maakalishwetasarojinimahakali.com/black.html (দ্রষ্টব্য: আবারো বলি, উক্ত ওয়েবসাইটের সব বিষয়ের সাথে আমরা একমত নই।)] 
অন্য একটি ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কিছু আলামত উল্লেখ করা হয়েছে:- 
(a) Constant Conflicts, fights or quarrels arising for no reason 
(b) Your good intentions are constantly misunderstood [https://www.vedanta-occult-spells.com/effects-of-black-magic.html]
(c) Relationship issues: Fighting with your spouse and kids
(d) Friends, Relatives and co-workers do not believe you or trust you 
এখানে বর্ণিত দ্বিতীয় লক্ষণটিতে বলা হয়েছে, “তোমার ভালো উদ্দেশ্যও বারবার ভুল বুঝাবুঝির সম্মুখীন হতে থাকে।” এমনটি হতে পারে এভাবে— যেমন, আপনার জীবনসঙ্গীর শারীরিক অসুস্থতা বা আপনার আর্থিক অস্বচ্ছলতা নিরসনেই হয়তো আপনি ব্যস্ত আছেন বা দৌড়াদৌড়ি করছেন, আর সে মনে করছে, তার সমস্যার দিকে না তাকিয়ে আপনি অন্য কোন ধান্ধায় মেতে আছেন। হয়তো দেখা যাবে, সমস্যা সমাধানের নিয়তে আপনি যে কাজ করছেন, তা আরো সমস্যা বৃদ্ধি ও নতুন সমস্যা সৃষ্টির কারণ ঘটাচ্ছে। তা দেখে সে ভাববে, আপনার উদ্দেশ্যই খারাপ ছিল। অপরদিকে আপনি বারবার নিজেকে ভুল বুঝাবুঝির শিকার হতে দেখে আপনার জীবনসঙ্গীকেই অকৃতজ্ঞ ভেবে বসতে পারেন এবং হয়তো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে বসবেন যে, এরকম অকৃতজ্ঞ মানুষের ভাল চাওয়াটাও একটা পাপ এবং সেই পাপেরই শাস্তি বোধহয় আল্লাহ আমাকে দিচ্ছেন। 
তৃতীয় লক্ষণটি প্রসঙ্গে বলা যায়, যাদুর ভিকটিম অনেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের জীবনসঙ্গী ও বাচ্চাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকেন, মারধোরও করে থাকেন, পরে আবার অনুতপ্ত হন। তবে যারা স্বভাবদোষে এমনটি করে থাকে, যাদের মন-মানসিকতাই ভালো নয়, তাদের ক্ষেত্রে এমন আচরণকে যাদুর লক্ষণ বলা যায় না।
এখানে বর্ণিত শেষোক্ত লক্ষণটিতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও সহকর্মীদের কাছে আস্থা হারানো ও অবিশ্বাসের পাত্র হবার কথা বলা হয়েছে। আপনজনের কাছে আস্থা হারানোর উদাহরণ হলো, আপনি কুচক্রী যাদুকরদের সম্পত্তি দখলের অপপ্রয়াস রোধ করবার জন্য সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে ধরে রাখলেও এর জন্য আপনার পিতা আপনাকেই সম্পত্তিলোভী ভাবছেন, এমনকি আপনার দ্বারা ব্যাংক ব্যালেন্স সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা-কল্পনায় মেতে উঠলেন। তাও আবার এ ধরনের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করছেন সত্যিকার চক্রান্তকারী ডাইনীদের কাছেই। সহকর্মীদের কাছে বিশ্বাস হারানোর উদাহরণ হলো, আপনার কাজে একটু কম-বেশি হওয়াতে আপনার প্রতিষ্ঠান প্রধান ভেবে বসলেন, আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে ওনাকে বিপদে ফেলার জন্য কাজকে বিলম্বিত করেছেন বা অসমাপ্ত রেখেছেন। বন্ধু-বান্ধব বা ব্যবসায়িক পার্টনারের কাছে আস্থা হারানোর উদাহরণ হলো, টাকা ধার করে ব্যবসায় লোকসান দিয়ে আর দেনা পরিশোধ করতে পারলেন না, ফলে বিশ্বাসঘাতক বিবেচিত হলেন। মূলত যাদুকররা যাকে চোখের সামনে পায়, তাকে সম্মোহনের মাধ্যমে তার মনে ভিকটিমের সম্পর্কে ভ্রান্ত ও নেতিবাচক ধারণাকে ঢেলে দেয়। আর দূরবর্তীদেরকে প্রভাবিত করে থাকে ভিকটিমের সাথে থাকা যাদুর জিনেরা। তবে ভিকটিমের কর্মস্থলের ঠিকানা জানতে পারলে জিন পাঠিয়েও এ কাজটি সাধন করতে পারে। ভিকটিমকে ভুল বুঝাবুঝির সম্মুখীন করা হয় প্রথমত ভিকটিমের কাজে ভুল বা গোলমাল বাধিয়ে এবং দ্বিতীয়ত ভিকটিমের সহকর্মী বা বসকে বিগড়ে দিয়ে।
অনেক সময় একটা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ক্ষোভ, অনুযোগ ও ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করবার উদ্দেশ্যে অদৃশ্য যাদুটোনার মাধ্যমে একই সাথে পরিবারের সকল সদস্যকে অসুস্থ বানিয়ে তোলা হয়, যাতে কেউ কারো দিকে খেয়াল দেবার অবকাশ না থাকায় প্রত্যেকের মনে নিজে অবহেলিত হয়েছে ভেবে অপরজনের প্রতি অসন্তোষ পয়দা হয়, আবার অসন্তোষের শিকার ব্যক্তির মনে নিজের অসুস্থতা নিয়ে ক্ষোভের পাশাপাশি অপরের প্রতি অবহেলার অভিযোগটা কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা হয়ে ফেতনার আগুনে ঘি ঢালার কাজ দেয়। মনে করুন, কোন এক ছোঁয়াচে রোগ এসে আপনার পিতামাতা ও বউ-বাচ্চা সবাইকে একই সাথে আক্রান্ত করল। এমতাবস্থায় আপনি ও আপনার স্ত্রী আপনার পিতামাতার খোঁজ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় দায়িত্বহীনতা ও হৃদয়হীনতার দায়ে অভিযুক্ত হলেন। তদুপরি বাচ্চার অসুস্থতার পিছনে অপর কারো খামখেয়ালীপনা (যেমন- ছোঁয়াচে রোগ জেনেও বিনা প্রয়োজনে বাচ্চাকে কাছে টেনে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা) সংযুক্ত থাকা এবং অসুস্থতার মাত্রার দিক থেকে বাচ্চার অবস্থা বেশি মারাত্মক হওয়ায় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত উল্টো অভিযোগ আপনাদেরকেও পাল্টা বিক্ষুব্ধ করে তুলবে। এহেন পরিস্থিতি সৃষ্টির পিছনে তাদের হাত থাকাই স্বাভাবিক, যারা আপনার পিতামাতার সাথে আপনার বিরোধ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে আপনাকে বিতাড়িত করানোর ধান্ধায় নিয়োজিত। 
অপর একটি অনলাইন বইয়ে যাদুটোনা, বদনজর ও জিনের আসরের আলামতের মধ্যে একটি আলামত এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকা এবং দু'জনের মাঝে ঘৃণা বাড়তেই থাকা। অথবা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তুচ্ছ ও সামান্য কারণে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া।” [সূত্র: http://www.quraneralo.com/treatment-of-evil-eye-black-magic-jinn/] কোন ভুক্তভোগী পুরুষ মানুষ যদি দেখে থাকেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কখনো স্ত্রীর সাথে আবার কখনো পিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হবার উপক্রম ঘটছে, তাহলে বুঝবেন এ ধরনের কোন ব্যাপার ঘটেছে।  
যাদুটোনার প্রভাবে মানুষের মনে রাগ ও আবেগের যে ভারসাম্যহীনতা (Anger & emotional imbalance) তৈরি হয়, সেটাও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্ট করবার একটি মাধ্যমরূপে কাজ করে। [সূত্র: http://www.blackmagicsymptoms.com/fqa
অপর একটি ওয়েবসাইটে বিষয়টি সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে এভাবে- “In addition, black magic may be used to prevent the wife from having children or the man from having sexual intercourse. This may happen in various ways: the wife may have no periods or never gets pregnant, or she is victim of miscarriages after a few days or months of the pregnancy, or the baby might die before birth, or the husband will have no erection or will lose it when approaching his wife or even during intercourse.” [Ref: http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দাম্পত্য সুখ ও ভালোবাসা কাদের কাম্য নয়, তা সংশ্লিষ্টদের কথাবার্তার সুর শুনেই বুঝতে পারবেন।
একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, সূরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে যাদুর ব্যবহার প্রসঙ্গে শুধু স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছেদ ঘটানোর বিষয়টিই উল্লেখ আছে, পিতামাতা ও সন্তানদের মাঝে কিংবা ভাইয়ে-ভাইয়ে বিভেদ ও হানাহানি ঘটানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। এ থেকে অনুমান করা যায়, যাদুটোনার দ্বারা শুধু হিংসা-বিদ্বেষ ও ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির মাধ্যমেই হানাহানি ঘটানো হয় না, বরং স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য মিলনেও বিঘ্ন ঘটানো হয়। আর এক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটাতে পারলে ক্রোধ-বিরক্তি ও বিভেদ-হানাহানি সৃষ্টিতে আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। 
যেকোন দুইজন মানুষের মধ্যে বিভেদ, হানাহানি ও অশান্তি সৃষ্টির জন্য তাদের মধ্যে যেকোন একজনকে শারীরিক, আর্থিক ও অন্যান্য দায়িত্ব পালনে দুর্বল, অক্ষম, অথর্ব ও ব্যর্থ করে রাখা এবং অপরজনকে ক্রুদ্ধ ও উত্তেজিত করে রাখাটাই মোক্ষম পন্থা। আর কুচক্রী যাদুকররা কোন দম্পতি বা পরিবারের মধ্যে ভাঙ্গন ধরানোর জন্য এ কাজটিই করে থাকে। যাকে অসুস্থ, অক্ষম ও অপারগ বানানো বেশি সহজ, তাকে তাই বানায়। আর যাকে উত্তেজিত করা বেশি সহজ, তাকে তাই করে। আবার কাউকে অধৈর্য্য ও উত্তেজিত করা তথা মেজাজ বিগড়ে দেবার জন্য তার উপর শারীরিক অসুস্থতা এবং সাংসারিক ও কূটনৈতিক চাপও আরোপ করে থাকে। কারণ, জীবনসঙ্গীর অক্ষমতা ও ব্যর্থতার পাশাপাশি নিজের উপর আরোপিত শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক চাপ হতাশা, ক্ষোভ ও বিদ্রোহ সৃষ্টিতে জ্বালানী হিসেবে কাজ করে। 
স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটাবার যাদুর কতিপয় আলামত: স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটানোর অশুভ উদ্দেশ্যে কৃত যাদুটোনার কিছু আলামত এখন আলোচনা করা যাক। Two symptoms are specifically representative of it (দুটি বিশেষ লক্ষণ সুনির্দিষ্টভাবে এই প্রকার যাদুটোনারই প্রতিনিধিত্ব করে): 
* the couple argues for no reason, loving each other when far from one another and arguing as soon as they get back together (কোন কারণ ছাড়াই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ। যখন একে অপরের কাছ থেকে দূরে থাকে তখন তারা পরস্পরকে ভালোবাসে, কিন্তু কাছে ফিরে এসে মিলিত হওয়ামাত্রই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শুরু করে) 
* the woman can no longer bear sexual intercourse nor find sexual pleasure [সূত্র: http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/
উপরে বর্ণিত দ্বিতীয় অবস্থাটি হয়ে থাকে জিন কর্তৃক স্ত্রীর সংশ্লিষ্ট স্থান কামড়ে আটকে রাখার মাধ্যমে এবং পিশাচ জিন কর্তৃক জীবনীশক্তি শুষে নেয়ার মাধ্যমে। এরকম অবস্থা মিলনে বিঘ্ন ঘটাতেও করে থাকে, বাচ্চা প্রসবে বিঘ্ন ঘটাতেও করে থাকে, আবার পায়খানা-প্রস্রাবে বিঘ্ন ঘটাতেও করে থাকে।
বিচ্ছেদের যাদুর আরো কিছু সম্ভাব্য লক্ষণ হলো— 
* বিছানায় শয়ন করলে বা স্ত্রীর কাছে গেলে শরীরে চুলকানি শুরু হওয়া  
* ঘুম না আসা, কিন্তু যেই না স্ত্রী বা সন্তানের কোন শারীরিক অসুস্থতার জন্য একটু পরিচর্যা করতে হাত বাড়ানো হয় অমনি চোখে ঘুম নেমে আসা। 
যদি আপনার এরকম অবস্থা হয় যে, আপনার শিশু সন্তান ঘরে বা কাছে থাকা অবস্থায় অস্বস্তি ও বিরক্তি অনুভব করেন, আর সে বাইরে বা দূরে থাকলে স্বস্তি ও শান্তি অনুভব করেন— বিশেষ করে বাচ্চার দ্বারা কোন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ (যেমন- হৈচৈ, শব্দ বা কাজে ডিস্টার্ব) না হওয়া সত্ত্বেও; তাহলে খতিয়ে দেখবেন, যারা বাচ্চার সাথে আপনার ঘনিষ্ঠতাকে বাঁকা চোখে দেখে, আপনি ও আপনার জীবনসঙ্গী নিজের বাচ্চাকে অনাদরে ফেলে রেখে তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবেন এমনটি প্রত্যাশা করে, আপনি বাচ্চাকে বেশি আদর করেন বা আহ্লাদ দেন বা বাচ্চাকে ছাড়া থাকতে পারেন না এমন কথা অসন্তুষ্টির সাথে প্রচার করে থাকে; তাদের কোন যাদুটোনা বা বদনজরের ফলে আপনার এ অবস্থা (অর্থাৎ, বাচ্চার প্রতি বিরক্তি বা বৈরীভাব) তৈরি হলো কিনা। আবার যদি কখনো দেখেন, বাচ্চাকে ঘুম পাড়াতে গেলেই আপনার শরীরে চুলকানি শুরু হচ্ছে, তাহলেও বুঝতে হবে, Something may be wrong। 
আপনি নিজের বউ-বাচ্চার প্রতি খুব একটা যত্নশীল বা মনোযোগী না হওয়া সত্ত্বেও এবং তাদের ব্যাপারে চোখে পড়ার মত কোন আদিখ্যেতা আপনার আচরণে প্রকাশিত না হবার পরেও আপনি তাদেরকে খুব বেশি আরামে রেখেছেন বা বেশি আহলাদ দিচ্ছেন— এমন অভিব্যক্তি যাদেরকে প্রকাশ করতে দেখবেন, তাদের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত বদনজর আপনার পারিবারিক জীবনের উপর আপতিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। 

৫। ঘুমের মধ্যে গলা শুকানো: এ সংক্রান্ত কিছু উদ্ধৃতি ইন্টারনেট থেকে পেশ করছি:- Dryness of mouth at night (https://vedicwisdom.com/symptoms-black-magic/); Dryness of mouth at night, increased thirst, extreme hunger, not hungry at all (http://www.blackmagicsymptoms.com/symptoms_black_magic/). 

৬। সম্পদে বরকত না হওয়া এবং উপার্জিত টাকা-পয়সা হাতের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া: যাদুটোনায় আক্রান্ত হতভাগ্য ব্যক্তি যত টাকাই উপার্জন করুক না কেন, এমনকি জমি বিক্রি করে কোটি টাকা একবারে লাভ করুক না কেন, তা কোনমতেই ধরে রাখতে পারে না- কেমনে জানি হাতির তলা দিয়ে বেরিয়ে যায়, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই হাত আবার যথারীতি শূন্য হয়ে যায়। সম্পদে বরকত না হওয়া এবং সম্পদ ধরে রাখায় সমস্যাগ্রস্ত হওয়ার পিছনে যাদুটোনার প্রভাব সম্পর্কিত কিছু রেফারেন্স পেশ করা যাক:- Your work, your money, has suddenly started going down [সূত্র: http://www.maakalishwetasarojinimahakali.com/black.html (দ্রষ্টব্য: বর্ণিত ওয়েবসাইটটির ধর্মীয় মতাদর্শ আমাদের থেকে ভিন্ন হওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য নয়, শুধু সমস্যার আলামত সংক্রান্ত তথ্যটুকু প্রণিধানযোগ্য)]. Loss of money: the person will keep losing money, or if he earns money, he will not earn any more until he has spent all his money [সূত্র: http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/]. 
আপনার ঘরে যদি এমন কেউ থেকে থাকেন, যিনি আপনার অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা পছন্দ করেন না, তিনি এসবের পিছনে জড়িত থাকা সম্ভব। যেমন- আপনার স্ত্রী যদি আপনার ও আপনার সন্তানদের অনিষ্টকামী শয়তান প্রকৃতির হয়ে থাকেন, অথবা আপনাকে বেকায়দায় ফেলে অন্য কোথাও নিজের প্রয়োজন পূরণের ধান্ধায় মেতে থাকেন, তাহলে আপনাকে আর্থিক প্রয়োজন পূরণে ব্যস্ত রেখে ও পেরেশানির মধ্যে রেখে ধর্মকর্ম ও এবাদত-বন্দেগি থেকে এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে এরকম যাদুর বাণ আপনার উপর নিক্ষেপ করে থাকতে পারেন। অপরদিকে আপনার মা-বোনরা যদি এমন হয়ে থাকেন, যারা আপনার আত্মনির্ভরশীল হওয়াটাকে অপছন্দ করেন এবং তাদের দয়ার উপর আপনাকে ও আপনার বউ-বাচ্চাকে নির্ভরশীল করে রেখে আপনার বউয়ের শ্রমশক্তি শোষণ করতে পছন্দ করেন, তাহলে তারা যাদুর মাধ্যমে আপনার ব্যয় বৃদ্ধি ঘটিয়ে আপনার ধন-সম্পদের বরকত নষ্ট করে রাখতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে 'আমার স্বামীর/বাপের টাকায় আমারই সংসারে থেকে অমুকে (অপ্রিয় ছেলে/ভাই) টাকা জমিয়ে বড়লোক হয়ে গেল' টাইপের হিংসাটা কাজ করে। অথচ যাদু করতে যাদুকরের পিছনে অথবা যাদু শিখতে গুরুর পিছনে বেশুমার টাকা ঢালতে এদের অন্তরে কোনরূপ সংকীর্ণতা বোধ হয় না। 
অপর একটি ওয়েবসাইটে যাদুর লক্ষণের মধ্যে 'Financial & Career Issues' অনুচ্ছেদে নিম্নেবর্ণিত লক্ষণগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে:-
* Unexpected problems at work or in business
* Bad luck or sudden losses
অনেক সময় দেখা যায়, দোকানে হঠাৎ চুরি বা ডাকাতি সংঘটিত হয়। কখনো বা সফরকালে বড় রকমের চুরি বা ডাকাতির কবলে পড়তে হয়। এ ঘটনাগুলো বিভিন্নভাবে ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। প্রথমত, ভিকটিমকে সম্মোহিত বা বিভ্রান্ত করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে নগদ অর্থ বহনে প্ররোচিত করা হয়, যেটা বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনাবশ্যক ও অস্বাভাবিক। দ্বিতীয়ত, হয় টেলিপ্যাথি বা জিন প্রেরণের মাধ্যমে কোন পরিচিত বা অপরিচিত চোর বা ডাকাতের মনে বার্তা পাঠানো হয়, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চোর বা ডাকাত ভিকটিমের অর্থের পরিমাণ ও অবস্থান সম্পর্কে তথ্য লাভ করতে পারে। অথবা, সুযোগ বুঝে যাদুকর ডাইনীদের মধ্যেকার কেউ নিজেই সরাসরি হাতিয়ে নিতে পারে। এর দ্বারা ভিকটিমকে সর্বস্বান্ত করা, নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া এবং সফরকে মাটি করা ও মেহমানদের বিব্রত করা সহ একাধারে বহুবিধ উদ্দেশ্য হাসিল করা হতে পারে।

৭। চেষ্টা, যোগ্যতা ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কোন চাকুরী না হওয়া (Preventing Work / Finding a Job): In this case, a victim meets all requirements for a job but for no valid reason, each of his attempts fails. The job may be promised, due or guaranteed, but something will happen so it does not work out, or the person will face a lack of energy or ambition. [http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/

৮। লেখাপড়া মুখস্থ করা বা মনে রাখতে না পারা (Stopping Studies): This can happen in various ways: the student cannot think but only learn by heart; he will forget everything; he will get headaches whenever he tries to study; problems occur whenever taking an exam; he thinks he will succeed but his results are just below the required score, etc. (প্রাগুক্ত) 

৯। প্রচণ্ড অবিরাম মাথাব্যথা: এটি যাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির একটি অন্যতম লক্ষণ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে, যেমন- প্রচণ্ড ও অসহনীয় মাথাব্যথা (Terrible/Unbearable Headaches) [সূত্র: http://www.breakblackmagic.com/Symptoms]; অবিরাম ও লাগাতার মাথাব্যথা (Constant Headache) [সূত্র: https://vedicwisdom.com/symptoms-black-magic/]। এছাড়া চোখে সমস্যা, অথচ ডাক্তারী পরীক্ষায় চোখ ত্রুটিমুক্ত— এমনটিও যাদুটোনার সম্ভাব্য লক্ষণ। 

১০। মহিলাদের উরুতে কালচে ও নীলচে দাগঃ এটিকে যাদুটোনার অন্যতম আলামত হিসেবে একটি ওয়েবসাইটে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, “Bruise (blackish & bluish) marks around thighs, vagina & on arms or other body parts.” [Ref: http://www.blackmagicsymptoms.com/symptoms_black_magic/অপর একটি অনলাইন বইয়ে বলা হয়েছে, “মহিলাদের নিচ পেটে ব্যাথা হওয়া বা রক্তক্ষরণ হওয়া, বিশেষ করে মাসিক চলা কালিন। অথবা বারবার এস্তেহাযা তথা প্রদর-লিকুরিয়া স্ত্রীরোগ হওয়া।” [সূত্র: https://d1.islamhouse.com/data/bn/ih_books/single2/bn-altdawy-blqran-walsnaa.pdf
বর্ণিত দুটি অবস্থার মধ্যে সাধারণত প্রথমটি (অর্থাৎ, লজ্জাস্থানে দাগ পড়া) হয়ে থাকে গর্ভাবস্থায় বাচ্চা বা প্রসূতি হত্যার লক্ষ্যে যাদু করা হলে। আর দ্বিতীয়টি (অর্থাৎ, পেটে ব্যথা বা লিকুরিয়া ইত্যাদি) হয়ে থাকে বিচ্ছেদের যাদুর ক্ষেত্রে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে বাচ্চা মেয়েরাও পেটে বা তলপেটে অদৃশ্য আঘাতজনিত কারণে অসময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার শিকার হতে পারে।

১১। অনিদ্রা বা অস্বাভাবিক নিদ্রা: আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘুমাতে না দেওয়াটাও যাদুর মাধ্যমে অনিষ্টকারীদের একটি কর্মপন্থা। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে উদ্ধৃতি পেশ করছি, "Change in sleeping habits such as suddenly not being able to sleep at night and falling asleep right before Fajr prayer." [Ref: https://destinationksa.com/symptoms-of-sihr/] “Your sleep is disturbed.” [Ref: https://vedicwisdom.com/symptoms-black-magic/] “Disturbed-interrupted sleep.” [Ref: http://www.blackmagicsymptoms.com/symptoms_black_magic/
আপনি যদি এ ধরনের অবস্থায় পড়েন, তাহলে আশপাশের মানুষগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করে দেখবেন, আপনার নিদ্রা বা সুখ-শান্তি কাদের অন্তর্জ্বালার কারণ, আপনি ঘুমকাতুরে বা সুখী মানুষ না হওয়া সত্ত্বেও এবং আপনাকে সুখে থাকতে না দেবার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েও কারা আপনাকে সর্বদা হিংসাত্মক মন নিয়ে সুখী ও ঘুমকাতুরে বলে প্রচার করায় মেতে থাকে।যারা কাউকে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্বাশুড়ী-ননদ কর্তৃক পুত্রবধূ বা ভ্রাতৃবধূকে) মিথ্যাভাবে অলস-অবোধ ও বিলাসী প্রমাণে তৎপর থাকে, তারাই যাদুমন্ত্রের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এমন শারীরিক অবস্থা সৃষ্টি করে যে, কখনো অনিদ্রায় ভোগে, আবার কখনো বেঘোরে ঘুমালেও ক্লান্তি দূর হয় না। নিদ্রা ও বিশ্রামের সময় অনিদ্রা চালান দেয়, আর কাজের সময় (বিশেষত মানুষের উপস্থিতিতে কাজ প্রদর্শনের সময়) নিদ্রা চালান দেয়। চোখের উপর 'ঘুম পাড়ানি মাসী-পিসী' পাঠিয়ে কোন নারীকে বেঘোরে ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার কাজটি হয়ে থাকে প্রথমত তাকে অকম্মা ও আরামপ্রিয় প্রমাণের জন্য, আর দ্বিতীয়ত তার উপর অসভ্য জিন লেলিয়ে দিয়ে নীরবে সম্মানহানি ঘটিয়ে বিচ্ছেদের যাদুকে সফল করবার জন্য।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, ঘুম ঠিকমত না হলে পুরুষের দাম্পত্য শক্তি আর নারীদের ত্বকের সৌন্দর্য্য বিনষ্ট হয়। সুতরাং মানুষের ঘুম নিয়ে হিংসা প্রকাশ ও আলোচনা-গবেষণায় মত্ত হওয়া এবং ঘুম ও বিছানার উপরে বদনজর প্রদান করাটা তাদেরই কাজ, যারা মানুষের দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করাতে তৎপর।  

১২। স্বপ্নে সাপ, কুকুর বা গুপ্তঘাতক কর্তৃক ধাওয়া খাওয়া কিংবা অনিষ্টকারী ব্যক্তিকে দেখাঃ যাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি স্বপ্নের মাধ্যমে তথ্য ও অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। এটি দুইভাবে হয়ে থাকে। যদি স্বপ্নে সরাসরি কোন কিছুর দ্বারা আক্রান্ত, ভীত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে সেটা সরাসরি জিনদের আক্রমণেই ঘটে থাকে, জিনেরাই কোন মানুষ বা প্রাণীর রূপ ধরে ভিকটিমকে মারতে আসে। আক্রান্ত মানুষের জন্য এটা স্বপ্ন হলেও জিনদের জন্য এটা বাস্তব, অর্থাৎ তারা কার্যত বাস্তবেই আগমন করে থাকে। আর যদি স্বপ্নে কোন ইঙ্গিত, বার্তা বা সতর্কবাণী লাভ করে, তাহলে সেটা আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট বান্দাকে আসন্ন বা চলমান বিপদ বা শত্রুতা সম্পর্কে সতর্ক করবার জন্য আল্লাহ নিজে অথবা কোন ফেরেশতার মাধ্যমে দৃশ্য বা অদৃশ্য আওয়াজের দ্বারা অবহিত করে থাকেন।স্বপ্নে আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে একটি ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য নিম্নরূপ:- 
* Dreaming of Snakes, Scorpions & Spiders, blackbirds, crow, dogs or other animals 
* Dream invasion, Sleep Paralysis (বোবায় ধরা), Rape or sexual assaults in dream state, Ugly and Scary people trying to kill you or running after you [https://blackmagicsymptoms.com/symptoms_black_magic/
যাদুটোনার ঘটনা বা অনিষ্টকারী ব্যক্তি সংক্রান্ত যে তথ্য ও পূর্বাভাস স্বপ্নের মাধ্যমে পাওয়া যায়, তা সাধারণত মিথ্যা হয় না, বরং স্বপ্নে যাকে অনিষ্ট সাধনে তৎপর হিসেবে দেখা যায়, সে বা তার সমকক্ষ কোন ব্যক্তি বাস্তবেই এতে জড়িত হয়ে থাকে এবং সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শেষ পর্যন্ত বাস্তবেই যাদুটোনায় আক্রান্ত হয়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়। এ প্রসঙ্গে দুটি ওয়েবসাইট থেকে উদ্ধৃতি পেশ করছি, “The coming of black magic is often announced in a dream, e.g. the person is bitten by an animal, hurt by someone or falls endlessly. He may also see snakes, dead people or graveyards. He may also see the perpetrator harming him.” [http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/] “And do believe my experience, this always proves to be true.” [http://turntoislam.com/community/threads/ruqya-quranic-treatment-for-black-magic-jinn-and-evil-eye.90690/
স্বপ্নে অনিষ্টকারী ব্যক্তি সংক্রান্ত তথ্য বিভিন্নভাবে জানা যেতে পারে। হয় সরাসরি সেই নাশকতাকারী ব্যক্তির চেহারা দেখা যায়, অথবা কোন পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির মুখে কিংবা অদৃশ্য গায়েবী কণ্ঠে সংশ্লিষ্ট যাদুটোনাকারী ব্যক্তির নাম ও পরিচয় এবং তার অনিষ্ট সাধনের পরিকল্পনা সম্পর্কিত বর্ণনা শোনা যায়। স্বপ্নে সরাসরি হুবহু নাশকতাকারী নির্দিষ্ট ব্যক্তিকেও দেখানো হতে পারে, অথবা উক্ত ব্যক্তির সমকক্ষ ও সমগোত্রীয় অর্থাৎ একই স্বভাবের ও একই ধরনের অপর কোন পূর্বপরিচিত ব্যক্তিকে দেখিয়েও পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত জানানো হতে পারে। স্বপ্নে যদি নিজেকে বর্তমান বাসস্থানে দেখতে পাওয়া যায় বা আসন্ন অঘটনের ঘটনাস্থল হিসেবে বর্তমান বাসস্থানকে দেখানো হয়, তাহলে অনিষ্টকারী ব্যক্তি সম্ভবত সেই ব্যক্তিই হবে যাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে বা যার সম্পর্কে স্বপ্নে জানানো হয়েছে। তবে স্বপ্নের মাঝে নিজেকে যদি অতীত বাসস্থানে দেখা যায় বা আসন্ন দুর্ঘটনাটি নিজের অতীত বাসস্থানে ঘটেছে বা ঘটতে যাচ্ছে এমনটি দেখানো হয়, আর অনিষ্টকারী ব্যক্তি হিসেবেও নিজের অতীত পরিবেশের পরিচিত কাউকে দেখানো হয়, কিন্তু স্বপ্নে দেখা দুর্ঘটনাটি পরবর্তীতে নিজের নতুন বাসস্থানে ও নতুন পরিবেশে বাস্তবে ঘটতে দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে, পূর্ব পরিচিত স্বপ্নে দেখা ব্যক্তির সমমানের কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বিশেষ করে মহিলাদের গর্ভাবস্থায় এ ধরনের স্বপ্ন কিছুতেই উপেক্ষা করতে নেই। 
উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলোর মধ্যে Sleep Paralysis বলতে আমরা বুঝি ঘুমের মধ্যে শরীর তথা হাত ও মুখ অবশ হয়ে যাওয়া, হাত-পা নাড়ানো ও মুখ নাড়িয়ে কথা বলা বা মুখ হা করে নি:শ্বাস গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা, যেটাকে সোজা বাংলায় বলা হয় 'বোবায় ধরা'। Sleep Paralysis প্রসঙ্গে উক্ত ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়েছে,
"Sleep paralysis is targeted attacks initiated by witches or black magicians or tantriks."
এছাড়া কোন বিবাহিত মেয়ে যদি স্বপ্নে অপরিচিত কোন সুদর্শন যুবকের সাথে নিয়মিত ধারাবাহিক স্বপ্ন আকারে পরিচয় ও বিবাহের আয়োজন দেখে, তাহলে সেটা বিচ্ছেদের যাদুর লক্ষণ। যাদুর মাধ্যমে প্রেরিত দুশ্চরিত্র জিনেরাই স্বপ্নে ভদ্রবেশে হাজির হয়। বিচ্ছেদের যাদুতে বখাটে ও লম্পট জিনের ব্যবহার কমন ঘটনা। কারণ, এক্ষেত্রে ভিকটিমকে নিজ জীবনসঙ্গীর প্রতি বিমুখ ও বিতৃষ্ণ করে অন্যযদিকে আকৃষ্ট ও ধাবিত করাটাই উদ্দেশ্য থাকে। লম্পট জিন স্বপ্নে ভদ্রবেশেও আসতে পারে, আবার আগ্রাসী সুরতেও আসতে পারে। জাগ্রত, অচেতন, অর্ধচেতন বা অবশ অবস্থায় আগ্রাসী আচরণই করে থাকে।

১৩। বিরক্তি (Irritation) ও ক্লান্তি (Fatigue): বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যাদুটোনার বর্ণিত লক্ষণসমূহের মধ্যে বিরক্তি ও ক্লান্তিভাবকেও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- Irritation [http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/] “You are irritated for no reason.” [https://vedicwisdom.com/symptoms-black-magic/] “Mood swings-irrational anger-irritation-fear-hysteria-abnormal behaviour.” [http://www.blackmagicsymptoms.com/symptoms_black_magic.html] “Fatigue and lack of energy to live day-to-day life.” [https://vedicwisdom.com/symptoms-black-magic/] “Chronic fatigue- weakness.” [Ref: http://www.blackmagicsymptoms.com/symptoms_black_magic.html
বিরক্তি ও জ্বালাতন ভাবের বহি:প্রকাশ ঘটে, যখন দেখা যায় সামান্য শব্দে এমনকি পানির ফোঁটা পড়ার শব্দেও অস্বস্তি বোধ করে ও বিরক্তি প্রকাশ করে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। 

১৪। স্মৃতিভ্রষ্টতা (Lost Memory): স্মরণশক্তি হারানোটাকে যাদুটোনার লক্ষণ হিসেবে যেসব ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি ওয়েবসাইট হলো:- http://keepingupwithyourblonde.com/how-to-know-that-we-are-victims-of-black-magick.htm । অপর একটি ওয়েবসাইটে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “You start forgetting things in the spur of the moment (মুহুর্তের উত্তেজনায়) and experience memory loss.” [সূত্র: https://vedicwisdom.com/symptoms-black-magic/] অন্যত্র বলা হয়েছে, “Sudden memory loss-hazy thinking.” [সূত্র: http://www.blackmagicsymptoms.com/symptoms_black_magic
স্মৃতিশক্তি হারানোর বিষয়টি কখনো নিজেরটা নিজেই বোঝা যায়, আবার কখনো আরেকজনের কাছে ধরা পড়ে। কাউকে যদি দেখা যায় একটা কথা বলেও পরে তা অস্বীকার করছে, বলছে, “আমি তো একথা বলিনি”; অথবা একেকবার একেকরকম অর্থাৎ পরস্পরবিরোধী কথা বার্তা বলছে; তাহলে সে যাদুটোনার প্রভাবে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা যায়। 

১৫। সুঁই বা পিনের মত খোঁচা: একটি ওয়েবসাইটে যাদুর লক্ষণগুলোর তালিকার মধ্যে এই লক্ষণটিকেও গুরুতর লক্ষণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যথা:-
* Stinging pains as if needles or pins are poked into your body
* Itching, burning or feeling like your whole body is on fire
Itching, burning, stinging insect-like crawling sensations in different parts of the body [সূত্র: https://www.vedanta-occult-spells.com/effects-of-black-magic.html]
বলাবাহুল্য, সুঁইয়ের খোঁচার মতন অনুভূতিটা যাদুর নিক্ষিপ্ত বাণ ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্য কোন শারীরিক বা মানসিক কারণে এমনটি হবার কথা বোধগম্য নয়। শরীর বা মনের বিভিন্ন রকম সমস্যা আছে যা যাদুর কারণেও হতে পারে, মেডিকেল কারণেও হতে পারে। কিন্তু অদৃশ্যভাবে সুঁই ফোঁটা বা অন্য কোনভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়াটার ডাক্তারী  বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারবে না।

১৬। অন্যান্য শারীরিক লক্ষণ: আরো অনেক শারীরিক লক্ষণ আছে যার প্রায় সবগুলো একত্রে যাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অনুভূত হয়; যথা- 
(ক) শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও তীব্র যন্ত্রণা (Itching, Burning and Stinging pains in different parts of the body) [Ref: https://vedicwisdom.com/symptoms-black-magic/]। 
(খ) শরীরের মাথা, বুক, মাংসপেশী সহ বিভিন্ন স্থানে কামড়ানি ব্যথা- যেন কেউ হাত দিয়ে খপ করে খামচে ধরছে, এমনটি অনুভূত হওয়া। 
(গ) ঘুমের মধ্যে বা ঘুম থেকে ওঠার সময় শরীরে কম্পন (Jerks in the body while sleeping after which the victim wakes up) [Ref: http://symptomsofblackmagic.blogspot.com/2014/01/symptoms-of-black-magic-induced_3010.html]; ঘুমের মধ্যে জটিলতা এবং সামান্য ঘুমের পরে আকস্মিকভাবে কম্পনের সাথে জেগে ওঠা অথবা ঘুমের ভাব থাকাকালীন সমগ্র শরীর শিথিল ও নিস্তেজ বোধ করা (Difficulty to sleep during nights, and the victims may wake up with jerks after small naps or feels entire body is paralyzed in the state of sleep); 
(ঘ) মাথা ভারি লাগা- যার অর্থ জিন বা যাদু মাথার ভিতরে অবস্থান করছে এবং মস্তিষ্কের উপর নিয়ন্ত্রণ নেবার প্রচেষ্টায় আছে (Heaviness and weight on head- means jinn/sihir is in the head and has control or trying to control the brain); ঘাড় বা পাঁজরের হাড়ে অথবা শরীরের যেকোন অংশে বা পাকস্থলীতে ব্যথা- যার অর্থ জিন বা যাদু পাকস্থলীর ভূখণ্ডে অবস্থান নিয়েছে (or shoulders or back/ribs or any part of the body or severe stomach aches- means jinn/sihir is in digestive tract); ব্যথা মাথা থেকে ঘাড়ে ও কাঁধে স্থানান্তরিত হয় (moving pain from head to neck and shoulders etc); শরীরে সুঁইয়ের খোঁচা অনুভব করা (or feeling needle pricks on the body); or tightness in chest during nights or feeling like being chained up or continuous burping [means jinn is in the digestive tract]; অব্যাহত কাশি বা হেঁচকি- যার অর্থ জিন শ্বাস-প্রশ্বাসের অর্গানগুলোতে ঢুকে পড়েছে (or continuous and Sudden coughing/hiccups- means jinn is in respiratory tracts); গলা সংকুচিত হয়ে আসা (and constriction in the throat); Feeling suffocated and restless in all circumstances, never at peace; dry skin or drying up of organs or limbs or burns on the internal organs. One may to clearly feel someone brushing an extremely delicate feather on your face or limbs or head. 
(ঙ) জিন বা যাদুটোনার দ্বারা সংঘটিত কতিপয় রোগলক্ষণ: যেকোন শারীরিক-মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে যদি ডাক্তারী চিকিৎসা গ্রহণ এবং নিয়ম-কানুন মেনে চলার পরও কোন স্থায়ী সমাধান পাওয়া না যায়, তাহলে সেটি জিন বা যাদুটোনার প্রভাবে হয়ে থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এরকম কিছু সমস্যার মধ্যে কয়েকটি হলো- মৃগীরোগ, মূর্ছারোগ, হতাশা, নিদ্রাহীনতা, অদ্ভূত জিনিস দেখা বা হ্যালুসিনেশন, ভুলোমন, ঘন ঘন মাইগ্রেন বা প্রচণ্ড মাথাব্যথা বা পাকস্থলীর প্রদাহ, দিনের পর দিন জ্বর, চরম দুর্বলতা ও ক্লান্তি, স্বাভাবিক পরিবেশে কারণ ছাড়া চরম রাগ ও আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন, অমনোযোগিতা, শরীরের যেকোন অংশে প্যারালাইসিস বা ব্যথা, বুক চিপে আসা, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত হেঁচকি, ঘন ঘন প্রস্রাব বা গ্যাস যা ওজু রাখতে প্রতিবন্ধক, কিংবা কখনো কখনো দিনের পর দিন আদৌ প্রস্রাব না হওয়া, অদ্ভূত চর্মরোগ, উরু ও পেটের মধ্যবর্তী স্থানে রাতের বেলা চুলকানি ইত্যাদি। (Any disorder for which medical treatment doesn’t benefit at all or has only temporary effects, some of which are epilepsy, fits, depression, anxiety, sleeplessness especially during nights, having strange visions or hallucinations, forgetfulness, frequent migraines or severe headaches or stomach-aches, continuous fever for days, extreme weakness or tiredness in body, extreme anger or aggression against the normal nature, falling unconscious , multiple sclerosis, paralysis or pain or wound or scratch on any limb or entire body, chest congestion, breathing problems or asthma , excessive hiccups, burps, very frequent urinating or back-winds/gas so that one is not able to keep wudhu, and some time no urination at all for many days, strange skin diseases, itching in the places between thighs and belly during nights ...)
[সূত্র: www.islamicexorcism.com/black-magic-sihir/symptoms-of-black-magic/
(চ) বুক ধড়ফড় করা 
(ছ) হাতের তালু ও পায়ের তালুতে উত্তাপ ও জ্বালাপোড়া 
(জ) শরীরে ব্যথা; মাথাব্যথা; শরীরে ক্লান্তি, অবসাদ, ক্ষীণ ও নিস্তেজ অনুভব করা (Health Problems: BP getting low, High Fever, Body Pains, Headache, Fainting anytime and reports of hospital coming absolutely normal.) [সূত্র: http://www.maakalishwetasarojinimahakali.com/black.html (দ্রষ্টব্য: পূর্বেই বলেছি, এ ওয়েবসাইটটির আকীদা ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে আমরা একমত নই)] 
এবার এই লক্ষণগুলোর আলোকে একজন রোগীর এক রাতের ঘটনার কেস স্টাডি করা যাক। বিছানায় শুতে যাবার আগেই বিছানার পাশে জায়নামাজে বসে নামাজ পড়ার সময় মাথা ঘুরানো ও গা থরথর করে কাঁপা শুরু হলো। শোবার পর মাথা ভারী ও মাথায় জ্বালাপোড়া শুরু হল। এরপর সূরা কাফেরূন, এখলাস, ফালাক ও নাস পড়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে মাথা হালকা হয়ে গেল, কিন্তু কিছুক্ষণ পর ব্যথা ঘাড়ে স্থানান্তরিত হলো। আবার উক্ত সূরাগুলো পাঠ করার পর ব্যথা পাঁজরের দিকে চলে গেল। এরপর আবার উক্ত সূরাগুলো পুনরাবৃত্তি করা হলো শরীরের মূল অংশ শান্ত হয় এবং পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া ধরে যায়। অবশেষে সূরাগুলো আবার তেলাওয়াত করবার পর জ্বালাতন সেখান থেকেও বিদায় হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, জ্বালাপোড়ার ধরনটা ছিল এমন, যেন জীবন্ত কেউ শরীরের ভিতর ছোটাছুটি করছে এবং এক জায়গা থেকে ধাওয়া খেয়ে আরেক জায়গায় গিয়ে আস্তানা গাঁড়ছে। আর ব্যথাগুলোও ছিল এরকম, কেউ যেন হাত দিয়ে খপ করে কামড়ে ধরছে। আর এ ঘটনায় বুকে যে লক্ষণ দেখা দেয়, তা রোগীর হৃদযন্ত্রে সমস্যার ইঙ্গিত বহন করে।
উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলোর মধ্যে চুলকানি ও সুইয়ের খোঁচার যে অনুভূতির কথা বলা হয়েছে, তা জিন-যাদুঘটিত নাকি ডাক্তারী সমস্যা তা বোঝার উপায় হলো, জিন-যাদুর ফলে যেটা ঘটে সেটা অসময়ে, নির্দিষ্ট সময়ে বা অস্বাভাবিক ভাবে ঘটে থাকে। যেমন- চুলকানি যদি শুধু বিছানায় গেলে বা স্ত্রীর কাছে গেলে ঘটে থাকে, তাহলে সেটা যাদুঘটিত। আবার ধরুন, শীতকাল, সারা গায়ে কোন ঘাম নেই, কিন্তু নিতম্ব হঠাৎ করে ঘেমে ভিজে উঠল আর চুলকানি শুরু হলো, এমনটি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ঘটনা, যা যাদুর উপদ্রব ছাড়া অন্য কোনভাবে ঘটা সম্ভব নয়। আর সুইয়ের খোঁচা জিনিসটা তো যাদু বা বাইরের আক্রমণ ছাড়া সম্ভবই নয়।

১৭। দুর্ঘটনা: সবচেয়ে মারাত্মক উদ্বেগের কথাটি হলো, যাদুটোনার দ্বারা হার্ট অ্যাটাক, কিডনী ফেইলিউর বা ক্যান্সার পয়দা করা, দুর্ঘটনা ঘটানো কিংবা আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেবার দ্বারা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো সম্ভব। [দেখুন: https://blackmagicsymptoms.com/symptoms_black_magic/http://www.blackmagicsymptoms.com/faq.html এবং https://vedicwisdom.com/symptoms-black-magic/] বিশেষ করে দুর্ঘটনার বিষয়ে যাদুটোনার প্রভাবের কথা আলোচিত হয়েছে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে, যার মধ্যে একটি ওয়েবসাইটে দুর্ঘটনাকে একটি অন্যতম লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে- “To become a victim of frequent accidents”। [সূত্র: http://www.breakblackmagic.com/Symptoms] অপর একটি ওয়েবসাইটে বর্ণিত হয়েছে, “This goal of black magic may cause disputes in the house and car accidents.” [সূত্র: http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/] শেষোক্ত ওয়েবসাইটটির ‘Madness and Death’ অনুচ্ছেদেও এ সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। 
কোন পরিবারে যদি কাউকে অগ্নিকাণ্ড বা বড় কোন দুর্ঘটনার শিকার হতে দেখেন, তাহলে খতিয়ে দেখবেন, তার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন বা প্রতিহিংসাপরায়ণ কেউ উক্ত পরিবারে আছে কিনা। বিশেষ করে ভিকটিমের ঘনিষ্ঠ কেউ যদি ধর্মবিদ্বেষী শয়তান প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং ভিকটিমের প্রতি সে ধর্মীয় কারণে বিদ্বেষপরায়ণ ও বৈরীভাবাপন্ন হয়ে থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে তার জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর সেক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ সম্বন্ধ বিশ্লেষণ করতে গিয়েও যদি সন্দেহভাজন শত্রু প্রকৃতির ব্যক্তির সন্দেহজনক ভূমিকার আভাস পাওয়া যায় (যেমন- অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে বিনা প্রয়োজনে অসময়ে বেশি পাওয়ারে চুলা জ্বালিয়ে রাখা, লুঙ্গি বা যে পোশাকটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ ঘটালো সেটিকে ভিকটিমের হাতের নাগালে এনে দেওয়া, ঘরের অন্য মানুষজনকে শুইয়ে বা ঘুম পাড়িয়ে রাখা ইত্যাদি), তাহলে এটা তার যাদুমন্ত্র বা বদনজরের ভূমিকা সক্রিয় থাকার সন্দেহকে আরো জোরালো করে দেয়।
রসূলুল্লাহ (সা.) যেকোন আগুন নেভানোর জন্য তাকবীর ধ্বনি (‘আল্লাহু আকবার’) দিতে বলেছেন। কোন কোন ইসলামী স্কলার আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে আজান দেয়াকেও উপযোগী বলে সাব্যস্ত করেছেন। এখন বিষয় হলো, ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি ও আযানের ধ্বনি যেহেতু আগুন নেভাতে সহায়ক, সেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগুন লাগানোর পিছনে নিশ্চয়ই শয়তানের হাত থাকে। কারণ আমরা সবাই জানি, আল্লাহর নাম ও আযান শুনে মূলত শয়তানই পালায়। অতএব, যেকোন অগ্নিকাণ্ড তা সে কোন শিশুর পরনের কাপড়ে হোক, বা কোন বহুতল ভবন বা বড় মার্কেটে হোক, এর সাথে শয়তানী শক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
জিনেরা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে ড্রাইভারের মাথা বিগড়ে দেবার মাধ্যমে অথবা পথচারীর মনোযোগ নষ্ট করার মাধ্যমে। মস্তিষ্কে সমস্যা সৃষ্টি হলে মানুষ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। অগ্নিকাণ্ড মানুষের মাথায় সমস্যা সৃষ্টি করে আগুনের কাছে নিয়ে যাবার মাধ্যমেও হতে পারে, আবার আগুনকে একটু জাগ্রত করা বা নড়াচড়া দিয়ে প্রসারিত করবার মাধ্যমেও হতে পারে।আবার চিকিৎসাধীন রোগীর ভুল চিকিৎসা, অপমৃত্যু বা পঙ্গুত্বও ঘটিয়ে থাকে চিকিৎসককে ভুলিয়ে দেবার মাধ্যমে।
নদীর পাড়ে বা উঁচু স্থানে গেলে ভিকটিমকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়ারও চেষ্টা করে থাকে জাদুর জিনেরা।
সর্বশেষ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যাদুর দ্বারা ভিকটিমকে করোনায় আক্রান্ত করাও সম্ভব। সাধারণত যে সকল ভণ্ডপীর নিজেদেরকে বিরাট কিছু একটা দাবি করে, নিজের নামে হাজার রকম সম্মানসূচক লকব ধারণ করে, যে সকল কথিত পীরমাতা মুখের কথায় মানুষ হত্যা করার মতন অলৌকিক ক্ষমতা ধারণ করে, করোনা চালান করার কাজেও তারাই পারদর্শিতা অর্জন করেছে। পারিবারিক পর্যায়ে হিংসুক ও লোভী ব্যক্তিরা প্রতিপক্ষকে সপরিবারে বিনাশ করবার জন্য এদের শরণাপন্ন হয়ে থাকে।
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো আত্মহত্যা। বর্তমান সমাজে যত আত্মহত্যা ঘটে থাকে, তার একটা বিরাট অংশ হয়ে থাকে যাদুর জিনের প্রভাবে। যাদুর ভিকটিমরাও অনেকেই তাদের আত্মহত্যার প্রবণতার কথা প্রকাশ করেছে। যাদুর জিন যখন মাথার দখল নিয়ে নেয়, রোগীকে পুরোপুরি possess করে ফেলে, তখন রোগী নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং সে কেন এ কাজ করছে তা বুঝতেও পারে না। যাদুর শিকার অনেকেই আছে, যারা বার বার আত্মহত্যায় উদ্যত হয়ে অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। নারীদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা যায়।

১৮। দোয়া-কালাম পাঠে অক্ষমতা: অত্র নিবন্ধের ২২(খ) নং অনুচ্ছেদে যাদুটোনার আলামতের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, “No focus in prayer and Abandoning the Quran”। অনিষ্টকারীরা যখন তাদের ক্রমাগত অপতৎপরতার পরও ভিকটিমকে একটু সুস্থ দেখতে পায়, তাদের দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি বা পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য কিছুটা ফিরে এসেছে বলে মনে হয়, তখন এই জালেমরা বুঝতে পারে যে, তাদের অনিষ্টকর পদক্ষেপ পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না, অতএব ভুক্তভোগীরা নিশ্চয়ই আল্লাহর কালাম ও প্রার্থনার দ্বারা আল্লাহর প্রোটেকশন গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায় এই হিংসুক দুর্বৃত্তরা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এমন কোন ব্যবস্থাও জুড়ে দেয়, যাতে ভিকটিমের মুখ দিয়ে দোয়া বা প্রার্থনা উচ্চারিত হতে না পারে। মজলুম মানুষের মূল রক্ষাকবচ আল্লাহর কালাম ও দোয়া-দরূদ পাঠের সক্ষমতাকে disable করে দেয়া হয়। এমনকি প্রার্থনা ও দোয়া-কালামকে বিঘ্নিত করবার জন্য বাণ মেরে জিন পাঠিয়ে গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে পিরিয়ড পর্যন্ত ঘটিয়ে থাকে।

১৯। কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনাঃ দুই কানে বা এক কানে বারবার শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনাটাকে বদনজর, যাদু বা জিনের আসরের আলামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে "বদনজর, জাদু ও জিনের কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা চিকিৎসা" নামক একটি বইয়ে। বইটি পেতে পারেন এখানে:- https://d1.islamhouse.com/data/bn/ih_books/single2/bn-altdawy-blqran-walsnaa.pdf 

২০। হঠাৎ করে কোন ভালোবাসার জিনিস ঘৃণা বা ঘৃণিত জিনিস ভালোবাসায় পরিণত হওয়াঃ এটিকেও যাদুটোনা, বদনজর ও জিনের আসরের লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে উপরের অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বইটিতে। মনে করুন, এক পরিবারের কর্তা তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারো ব্যবহার ও কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট ছিলেন, আবার কারো প্রতি ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন ছিলেন। এক পর্যায়ে যদি দেখতে পান, তিনি ইতিপূর্বে যাদের ব্যবহারে অসন্তুষ্ট ছিলেন, তাদের প্রতি অন্ধবিশ্বাসী ও অনুগত হয়ে পড়েছেন; আর ইতিপূর্বে যাদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন তাঁর মনে তাদের প্রতি নেতিবাচক ইমপ্রেশন তৈরি হয়েছে; তাহলে বুঝতে হবে, তিনি বশীকরণ যাদুর শিকার হয়েছেন। 
যদি যৌক্তিক ও বোধগম্য কারণ তথা সত্য প্রকাশ ছাড়াই কোন ব্যাপারে কোন পরিবারে বা গোত্রে সকলের মনোভাব ও ভূমিকা রাতারাতি বদলে যেতে দেখা যায়, তাহলে সেটাকেও যাদুর প্রভাব হিসেবেই গণ্য করতে হবে। যেমন- কোন পরিবারে আত্মীয়-স্বজন সকলে সম্মিলিতভাবে ছেলেকে বিয়ে করিয়ে বউ আনল, দু'একজন অযৌক্তিকভাবে ফেতনা সৃষ্টি করলেও তারা আত্মীয় মহলে ধিকৃত হলো; কিন্তু বিয়ের ছ'মাস না যেতেই সেই একই আত্মীয়-স্বজন সবাই একযোগে সেই নবদম্পতির প্রতি বৈরী হয়ে পড়ল এবং ফেতনা সৃষ্টিকারীদের সাথেই একাত্মতা পোষণ করতে শুরু করল। এরকম হলে বুঝবেন, লবিং, অপপ্রচার ও মোটিভেশনের পাশাপাশি যাদুমন্ত্রেরও আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে এ লক্ষ্য হাসিলের জন্য। 

২১। অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ ও প্রতিকূলতা: যাদুর ভিকটিমরা যাদুর প্রভাবে পরিবারে বা প্রতিষ্ঠানে নানান রকমের চাপ, জটিলতা ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে পারে। যখন ভিকটিমকে বাড়ি থেকে উৎখাত করাটা লক্ষ্য হয়, তখন বাড়ির মুরুব্বী ও মানুষজনের সাথে কোন ইস্যু নিয়ে ভিকটিমকে চাপের সম্মুখীন করা হয়। আর যখন ভিকটিমের চাকুরি বা ব্যবসা নষ্ট করা উদ্দেশ্য হয়, তখন ভিকটিমের সহকর্মী ও বসের কাছে ভিকটিমকে অপ্রিয় করে তোলা হয়। ভিকটিমকে কর্মস্থলে অসুবিধায় ফেলার জন্য যাদুকররা দুই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রথমত, ভিকটিমের স্মৃতিশক্তি ও কর্মক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে অথবা কোন গোপন উপায়ে ভিকটিমের কাজে কোন ভুল বা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, ভিকটিমের সহকর্মী বিশেষত প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ভিকটিমের উপর ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত করে তোলা হয়। আর এ কাজটি হাসিলের জন্য যাদুকরদেরকে ভিকটিমের প্রতিষ্ঠানে গমনেরও প্রয়োজন পড়ে না, এমনকি সেখানকার কারো সাথে যোগাযোগেরও প্রয়োজন পড়ে না, বরং প্রতিষ্ঠানের লোকেশন এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের নাম জানলেই হলো। ভিকটিমের সাথে থাকা যাদুর জিনগুলোও শুধু ভিকটিমের উপরেই ক্রিয়া করে না, বরং ভিকটিমের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষজনকেও ভিকটিমের উপর ক্ষুব্ধ করায় নিয়োজিত হতে পারে। আবার কর্মক্ষেত্রে চাপের মধ্যে ফেলে ভিকটিমকে বেশি সময় ঘরের বাইরে থাকতে বাধ্য করে করোনা ঝুঁকি সৃষ্টির দায়ে পরিবারেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা হতে পারে।

২২। একনজরে কতিপয় গুরুতর আলামত: একটি ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত কতিপয় গুরুতর লক্ষণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:- 
(ক) বদনজর ও হিংসার প্রভাবের আলামত (SIGNS & SYMPTOMS - EVIL EYE & ENVY): 
  • Itching begins when person carries out an act for which the evil eye has been given, for example if the evil eye has been given because of a person wealth, they will start itching when they come into contact with money. (আপনার যে বস্তুটির উপর বদনজর দেয়া হয়েছে সে জিনিসটি নিয়ে কিছু করতে চাইলে বা বস্তুটির সংস্পর্শে আসলে চুলকানি শুরু হয়, যেমন ধরুন বদনজরটি যদি আপনার সম্পদের উপর দেয়া হয়ে থাকে তাহলে আপনি টাকা-পয়সা ধরার সাথে সাথেই চুলকানি শুরু হবে।)
  • Tiredness, Laziness Insomnia (অনিদ্রা) 
  • Forgetfulness and sleepiness while doing studying, reading Quran or going to school etc 
  • Headaches Allergic, rhinitis (নাকের ঝিল্লীতে প্রদাহ) and sinusitis 
  • Sneezing (হাঁচি) a lot without for no reason 
  • Cold, flu Hair Loss 
  • Darkening under the eyes Becoming pale 
  • Permanent headaches (স্থায়ী মাথাব্যথা) 
  • Spots under the skin 
  • The desire to get out of the house or hatred in staying in (ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার ইচ্ছা অথবা ঘরে থাকার প্রতি ঘৃণা ধরে যাওয়া) 
  • The feeling of death and despair (মৃত্যু ও নৈরাশ্যের অনুভূতি) 
  • To see people who have given you the evil eye looking at you in a strange and scary way (তোমার উপর বদনজর প্রদানকারী ব্যক্তিকে তোমার দিকে অদ্ভূত ও ভীতিজনকভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখা) 
  • Physical ailments which doctors cannot explain, and going from one problem to another (শারীরিক রোগ-ব্যাধি, যা ডাক্তাররা ব্যাখ্যা করতে পারে না, এবং এক সমস্যা আরেক সমস্যায় রূপ নেয়)

(খ) যাদুটোনার আলামত (SIGNS & SYMPTOMS - BLACK MAGIC): 
Experienced when awake (জাগ্রত অবস্থায়): 
  • A person complaining of being unable to interact with their spouse 
  • feeling extreme hatred towards their spouse 
  • sexual problems such as incompletion of sexual intercourse 
  • Unusual dust or powder such as flour scattered inside or outside the home 
  • Pins and needles that are poked into the furniture or around the home 
  • Holes that have been cut out of peoples garments 
  • Clothes that have been missing and then found again 
  • Finding clothes that have been stained with the likes of blood 
  • Finding strange scary objects and smells in the bathroom 
  • Symbols carved inside or outside the home 
  • Seeing water or liquid sprinkled outside the home by the doorway or over the doorstep
  • Broken eggs on the doorstep 
  • Cats that have been slaughtered 
  • Nails that have been nailed into the door 
  • Anger occurring for small things 
  • Crying for no reason 
  • No focus in prayer 
  • Abandoning the Qur’an 
  • Tendency towards sin Vomiting or feeling the want to vomit 
Experienced when asleep during the period of seeking Ruqya (রুকিয়া চিকিৎসা চলাকালে ঘুমিয়ে পড়ার পর সংঘটিত অভিজ্ঞতা): 
  • Constant dreaming 
  • Restless sleeping, frequent movement and strange noises as moaning and groaning or laughing and crying. 
  • A vision of a magician i.e. witch doctor or an evil man or woman 
  • Seeing the jinn threatening the patient to stop following the treatment. 
  • To see in the dream that the magic “sihr” has been renewed by means of drinking or eating and finding the taste of the substance of the drink or food when one wakes up. [সূত্র: http://ruqyainlondon.com/article/self-diagnosis
এখানে বদনজরের আলামত হিসেবে সর্বপ্রথম যেটি বর্ণিত হয়েছে, তার আলোকে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা যাক। সূত্রে বর্ণিত লক্ষণে টাকার সংস্পর্শে আসলে হাত চুলকানোর কথা উল্লেখিত হয়েছে। অতএব, কারো যদি বিছানার সংস্পর্শে আসলেই মাথা ও শরীরের অন্যান্য স্থানে নানাবিধ সমস্যা অনুভূত হয়, তাহলে এটাকে যাদুটোনা বা বদনজরের লক্ষণ হিসেবেই ধরে নেয়া যায়। এরূপ ক্ষেত্রে আপনার বিছানায় শয়ন করবার বিষয়টি কাদের কাছে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত, সেটি খতিয়ে দেখতে পারেন। 
বদনজরটা যখন কারো খাবারের উপর দেয়া হয়, তখন সেই খাবার খেলে ভিকটিমের হয় পেট খারাপ হয়, নয়তো শরীর খারাপ ও স্বাস্থ্যহানি ঘটে। বদনজরটা যখন টাকা-পয়সার উপরে করা হয়, তখন ভিকটিম সেই টাকা ধরলে হাত চুলকাবে। বদনজরটা যখন কারো বিছানার উপর বা সুখ-শান্তি ও বিশ্রামের উপর করা হয়, তখন সেই বিছানায় শয়ন বা উপবেশন এমনকি স্পর্শ করার সাথে সাথে সকল প্রকার শারীরিক অসুস্থতা মাথাচাড়া দেবে। বদনজরটা যখন কোন দম্পতির দাম্পত্য সম্পর্কের উপর করা হয়, তখন দেখা যায়, স্ত্রীকে স্পর্শ করা বা স্ত্রীর দিকে মুখ ফেরানো মাত্রই স্বামীর নিতম্বে অসহনীয় চুলকানি শুরু হয়ে যায়। আবার একইভাবে, স্ত্রী তার স্বামীর দিকে একটু মনোযোগী হওয়া মাত্রই স্ত্রীর সারা শরীরে চুলকানি শুরু হয়। 
যদি দেখতে পান, আপনার বাচ্চার দুধ খাওয়া নিয়ে বিদ্রূপাত্মক ও বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা শুনছেন আর এক পর্যায়ে আপনার বাচ্চার দুধের রুচি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে; যদি শুনতে পান, আপনি বউ নিয়ে খুব সুখে আরামে আছেন, আর বাস্তবেই দেখতে পান আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আগ্রহ ও মহব্বত লোপ পাচ্ছে; যদি শুনতে পান, আপনি বাচ্চাকে খুব বেশি কোলে নিয়ে আদর দিয়ে ভরিয়ে রেখেছেন, আর বাস্তবেই দেখতে পান বাচ্চার প্রতি আপনার অনুরাগে ভাটা পড়ে যাচ্ছে; তাহলে বুঝবেন এগুলো যাদু বা বদনজরের কুপ্রভাব ছাড়া আর কিছু নয়। 

# অপর একটি ওয়েবসাইটে যাদুটোনার আরো কয়েকটি লক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে, যথা-

In Your Body

-sick after eating food someone else prepared

-nausea, vomiting, stomach pain, bloating, heartburn

-intense itching, always hurting oneself accidentally

-cold symptoms

-Feeling intense heat as if the body is on fire

-sickness or disease of all kinds

-uncontrollable shaking or trembling [সূত্র: https://blackmagicsymptoms.com/fqa/]

যদি কখনো দেখতে পান, সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেয়া কোন কিছু (বিশেষ করে দুধ কিংবা দুগ্ধজাত পিঠা বা খাদ্য) খাওয়ার পর বিশেষ কোন শারীরিক-মানসিক কারণ ছাড়াই সাথে সাথে বমি হচ্ছে, তাহলে ধারণা করতে পারেন, ওটার মধ্যে যাদু ছিল। এমনকি নিকৃষ্ট ধরনের বস্তু (যেমন- পিরিয়ডের রক্ত) মিশ্রিত থাকাটাও অসম্ভব নয়।
এছাড়া দুর্ঘটনাবশত: নিজেকে নিজে আঘাত করবার ঘটনাও মাঝেমধ্যে ঘটে থাকে। হাত-পা কখন যে বেকায়দায় গিয়ে নিজের শরীরের কোথায় আঘাত করে বসে, এমনকি উঠতে-বসতেও কেমনে জানি ব্যথা লেগে যায়, তা বোঝা যায় না। 

শর্তযুক্ত যাদুটোনা (Conditional Black Magic): একধরনের যাদুটোনা আছে যা কোন ঘটনার সাথে সম্পর্কিত করে শর্ত আরোপ করে করা হয়। যেমন- কোন দম্পতি প্রথম সন্তান লাভের পরপরই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটবে। কিংবা, স্ত্রী চাকুরীতে যোগদান করতে বা চাকুরী লাভ করতে গেলে স্বামীর চাকুরী চলে যাবে। (Black magic can also take effect only when certain conditions are met or events occur, e.g. the couple will break up after the birth of their first child, the husband will lose his job every time his wife joins him, etc.) [সূত্র: http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/] অথবা, কোন বাচ্চার শিক্ষার মাধ্যম পরিবর্তন করামাত্রই সপরিবারে বাড়ি ও সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ হবে। সাধারণত যে সমস্ত শাশুড়ী-ননদেরা বউয়ের চাকুরী ঠেকানোর জন্য তৎপর থাকে, তারা বউয়ের চাকুরীকে আটকে রাখার জন্য যাদুটোনার সাহায্যে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, যাতে বউ ওদিকে যাওয়া মাত্র স্বামীর চাকুরী এমনকি স্বয়ং চাকুরীদাতার চাকুরীও হুমকির মুখে পড়ে যাবে। যে সমস্ত কুচক্রী মা-বোনেরা সম্পত্তি বা সাংসারিক কাজ নিয়ে সৃষ্ট হিংসার বশবর্তী হয়ে পুত্র বা ভাইকে স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়িছাড়া ও সম্পত্তিছাড়া করতে চায়, তারা যাদুটোনার মাধ্যমে এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে, যাতে বাচ্চার লেখাপড়ার ব্যাপারে কোন সুবিধাজনক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বজায় রাখতে গেলে বাড়ি, সম্পত্তি ও পারিবারিক সম্পর্ক থেকে উৎখাত হওয়া ছাড়া আর কোন অপশন খোলা থাকবে না। 

যাদুটোনার প্রভাব নির্ণয়ে সংশয়: অনেক সময় আপনার অনিষ্টসমূহ যাদুটোনার প্রভাবে হলো নাকি চিকিৎসার ভুল বা অন্য কোন কারণে সংঘটিত হলো, তা নিরূপণ করতে গিয়ে সংশয়ে পড়ে যেতে হয়। মূলত: এসব ক্ষেত্রে একসঙ্গে একাধিক কারণ সক্রিয় থাকাটাও অসম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্ভবত এই ঘটে যে, বড় ও মূল কারণটি (Principal Cause) অনেক সময় ঘটনাটি সংঘটনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও ঘটনাপ্রবাহ তথা ছোট ও সহযোগী কারণসমূহ (Auxiliary Cause) তৈরি (generate) করে নেয়। আপনার একটা অনিষ্ট ঘটাবার জন্য যদি চিকিৎসায় ভুল বা চিকিৎসকের গাফলতি সংঘটিত হবার দরকার হয়, সেটাও হয়ে থাকতে পারে যাদুটোনারই প্রভাবে। যেমন- কেউ একজন আপনার বাচ্চা ডেলিভারির সময় সমস্যা সৃষ্টির লক্ষ্য স্থির করে যাদুটোনা করল। এখন চিকিৎসকগণ যাতে বিকল্প ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আপনাকে উক্ত সংকট থেকে উদ্ধার করে আনতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনবোধে চিকিৎসকগণের উপরেও যাদুটোনা করা হয়ে থাকতে পারে এবং ভুল চিকিৎসা নিশ্চিত করবার কাজটিও যাদুটোনার আওতাতেই সম্পন্ন হতে পারে। এছাড়া অনেক সময় অনিষ্টকামী ব্যক্তি কর্তৃক যাদুটোনার ফলাফলকে নিশ্চিত করবার জন্য আনুষঙ্গিক পদক্ষেপসমূহও manually-ই গ্রহণ করা হয়ে থাকতে পারে। যেমন- আপনার শরীরের উপর কোন ক্ষতি সাধনের পদক্ষেপটা যাদুটোনার মাধ্যমেই করল, কিন্তু আপনাকে তা থেকে রক্ষা বা উদ্ধারের কাজটি যাতে ডাক্তারী (medical) পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা না হয়, সেজন্য ডাক্তারগণকে বিরত রাখার কাজটি সরাসরি কুপরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে হতে পারে। অবশ্য একথা ঠিক যে, কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য হাসিল কিংবা কারো ভালো-মন্দ কিছু সাধন করা বা বিঘ্নিত করার কাজটি যখন যাদুটোনা বা মনছবির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, তখন তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাআপনি আপন গতিতে অভীষ্ট লক্ষ্যপানে ধাবিত হয় এবং এই লক্ষ্য অর্জনের পথে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা (blockage) স্থাপন বা প্রতিবন্ধকতা (blockage) অপসারণের কাজটি আপনাআপনি সাধিত হয়, যেমনভাবে নদী তার গতিপথে আপন চলার পথ সৃষ্টি করে নেয়। এসব ক্ষেত্রে ভিকটিমের জীবনে যাবতীয় ভালো-মন্দ ঘটনা বা বাধা-বিপত্তি প্রয়োজনের মুহূর্তে উপযুক্ত সময়েই সংঘটিত হয়। “The spell is casted to destroy your career, marriage, relationships and to bind your progress and income flow. The negative energy will start working at the right moment and will affect your life in the above areas.” (Source: http://www.vedicwisdom.com/spell_reversal.php) আর এই negative energy যখন কাজ শুরু করে, তখন তা যাতে যাতে ভিকটিমের বাড়া ভাতে ছাই পড়বে, শরীর-স্বাস্থ্য বা অর্থনীতির অবনতি ঘটবে, ঠিক তাই তাই ঘটাতে থাকে। এই অদৃশ্য অশুভ প্রভাবটির ফলে অন্যদের দ্বারা তো বটেই, ভিকটিম নিজেও নিজের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, নিজেকেও নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, একই ভুল বারবার করতে থাকে, এমনকি কোন একটা পদক্ষেপ বা কর্ম নিজের জন্য ক্ষতিকারক হবে জেনেও কোন এক অজানা কারণে সেটি করার প্রবল তাড়না (compulsion) বোধ করে। একটা রোগ বা ইনজুরি সেরে উঠতেই পুনরায় নতুন করে আরেকটা রোগ বা ইনজুরির পুনরাবৃত্তি ঘটায়, এমনকি সেটা কেন করল সে সম্পর্কে নিজের কাছেও কোন বোধগম্য ব্যাখ্যাযোগ্য কারণ থাকে না। যাদুটোনা বা বদনজরের দ্বারা কারো শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য কোন ক্ষতি যে সরাসরি সাধিত হতে হবে এমন কোন কথা নেই, বরং যাদুর দ্বারা এটি বাস্তবায়নের উছিলা হিসেবে অন্যান্য কারণও সংযুক্ত হতে পারে। যেমন- হাদীসে বদনজর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, বদনজর উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত নিয়ে যায়। বলাবাহুল্য, বদনজর স্বয়ং (itself) কোন উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত নিয়ে যায় না, বরং উট জবাই করা থেকে শুরু করে উটের মাংস রান্নার উপযোগী করে প্রসেসিং এর কাজটি মানুষের হাত দিয়েই সম্পন্ন হয়। অনুরূপভাবে, যাদু বা নজরের দ্বারা কারো শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টির ক্ষেত্রেও ভিকটিমের নিজের দোষ বা ডাক্তারের ভুল এক্ষেত্রে উছিলা হিসেবে কাজ করতে পারে, ঔষধ নির্বাচনে ভুলও এ কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। মানুষের যে বস্তু, বিষয় বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর যাদু বা নজর প্রদান করা হয়, সেই জিনিসের উপর ঘটনা-দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। কোন শিশুর সুস্বাস্থ্য বা খাবারের উপর যদি যাদু বা নজর করা হয়, তাহলে সেই শিশুটি দুর্ঘটনা, ভয়জনিত ট্রমা, টিকা, ভুল ঔষধ বা অন্য কোন কারণে আক্রান্ত হয়ে ক্রমাগত রোগা হয়ে পড়ে, খাবারের রুচি হারিয়ে ফেলে। কোন দম্পতির দাম্পত্য সম্পর্কের উপর যদি যাদু বা নজর করা হয়, তাহলে দেখা যায় এর সাথে সম্পর্কিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ক্রমাগত আঘাত বা দুর্ঘটনার মুখে পড়ে জর্জরিত হতে থাকে। একসময় লজ্জাস্থান আঘাতপ্রাপ্ত হয়, আরেকসময় হয়তো পা ভেঙ্গে পড়ে থাকে। 
যাদুটোনার প্রভাব নির্ণয়ে দ্বিধা ও অনিশ্চয়তার একটি কারণ হলো, যাদুটোনা, বদনজর ও জ্বিনের আছরের লক্ষণগুলো প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। যাদুটোনার পিছনে কোন ঈর্ষাপরায়ণ মানুষ কর্তৃক ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিতভাবে কোন জিন শয়তানকে নিয়োজিত করার ব্যাপার ঘটে থাকে এবং এ কাজটি করতে গিয়ে হিংসাপরায়ণ ব্যক্তি জিন শয়তানের কাছ থেকে সহযোগিতা লাভের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে কুফরী কাজেও জড়িত হয়ে পড়ে। বদনজরের ক্ষেত্রে মানুষ কর্তৃক হিংসাত্মক নজর প্রদানের সাথে সাথে শয়তান অযাচিতভাবেই হাজির হয়ে অনিষ্ট ঘটিয়ে দেয়- এক্ষেত্রে শয়তানের সাথে কারো সরাসরি যোগাযোগ বা শয়তানের শর্তানুযায়ী কুফরী কর্মে লিপ্ত হওয়াটা জরুরী হয় না। আর জ্বিনের আছরের ক্ষেত্রে জ্বিন কোন মানুষের নির্দেশ বা প্ররোচনা ছাড়াই নিজ গরজে উপদ্রব ঘটিয়ে থাকে, অর্থাৎ এর পিছনে কোন মানুষ জড়িত থাকে না। এখন কারো মধ্যে যাদুটোনায় আক্রান্ত হবার লক্ষণ প্রকাশিত হলে সে কি আসলেই ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিত জাদুটোনার শিকার হয়েছে, নাকি বদনজরের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, নাকি নিছক জ্বিনের আছরগ্রস্ত হয়েছে- তা বোঝা কঠিন। আবার বদনজর হয়ে থাকলেও সেক্ষেত্রে কোন ভালো মানুষের দ্বারা অনিচ্ছাকৃতভাবে নজর লেগে গিয়েছে, নাকি কোন ঈর্ষাপরায়ণ খারাপ মানুষের পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বদনজর প্রদান করা হয়েছে, তাও সুনির্দিষ্টভাবে বোঝা যায় না। আবার নিছক জ্বিনের আছর হয়ে থাকলেও সেটা নিয়ে সঠিক তথ্য না পেয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ, অনেক সময় রুকিয়া চলাকালে আছরকারী জ্বিনেরা অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিয়ে পরিবারের কাউকে ফাঁসিয়ে দিয়ে পরিবারের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি ও গোলযোগ পাকানোর চেষ্টা করতে পারে। অতএব, কারো হিংসা বা শত্রুতা সম্পর্কে বোধগম্য ও স্পষ্ট কারণ জানা না থাকলে শুধু জিনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে কাউকে দায়ী না করাটাই উত্তম। 
এখানে আরেকটা কথা উল্লেখ্য যে, ‌আল্লাহর কাজ ও আল্লাহর দুশমন জিন-শয়তানদের কাজ উভয়ই অদৃশ্য থেকে সাধিত হয় বিধায় অনেক সময় যাদুর প্রভাবে সাধিত জিন শয়তানদের অনিষ্টকে আল্লাহর আযাব ভেবে বিভ্রান্ত হতে হয়। যেমন- কোন একটা কাজ করতে গিয়ে বিপদ, অসুবিধা বা বাধার সম্মুখীন হলে ভেবে বসি, কাজটা বুঝি আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন। কিন্তু হতে পারে, ওটা আসলে যাদুকর মানুষ শয়তানদের নিয়োগ করা জিন শয়তানদের যাদুঘটিত কারসাজি। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন আপনার কোন আপনজনের (যেমন- স্ত্রীর) ভালো-মন্দ ভাবছেন ও তার কল্যাণ চিন্তা করছেন, ঠিক তখনই সেই আপনজনের তরফ থেকে আপনার প্রতি দুর্ব্যবহার পাচ্ছেন। তাতে ভেবে বসলেন, অমন দুর্ব্যবহারকারী বিদ্রোহী চরিত্রের মানুষটিকে প্রশ্রয় দেয়াটাই বুঝি আল্লাহর অপছন্দ এবং পাপ কাজ। কিংবা হয়তো আপনার কোন আপনজনের কাজে সহযোগিতা করতে নামলেন, আর অমনি আপনি শারীরিক বা পারিবারিক সমস্যায় আক্রান্ত হলেন। ফলে তাকেই অপয়া ভাবতে শুরু করলেন। কিন্তু একটু সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্কে যারা বিঘ্ন ঘটাতে চায় এবং আপনাদেরকে আত্মীয়-স্বজনের থেকে বিচ্ছিন্ন ও সকলের কাছে অপ্রিয় করে রাখতে চায়, এটা তাদেরই কাজ হওয়াটা অধিক সম্ভাব্য। 

ডাক্তারী সমস্যা বনাম জিন-যাদুর সমস্যার পার্থক্য নিরূপণ: কোন শারীরিক উপসর্গ দেখা দিলে সেটা এমনি এমনি মনোদৈহিক কারণে হলো নাকি জিন-যাদুর দ্বারা ঘটলো, সেটা বোঝার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিচার্য হবে:-
(ক) স্থান পরিবর্তনে শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন: ঘর বা এলাকা পরিবর্তনের দ্বারা যদি শারীরিক অবস্থার উন্নতি বা অবনতি ঘটে, এক জায়গায় থাকলে শারীরিক অবস্থা মন্দ থাকে আরেক জায়গায় গেলে শারীরিক অবস্থা ভালো হয় এমন যদি হয়ে থাকে, তাহলে আপনার উক্ত শারীরিক অসুস্থতা যাদুটোনার দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। যে ঘর বা যে অঞ্চলে থাকাকালে আপনি অসুস্থ বোধ করেন, সেখানকার লোকজনের মধ্যে কেউ আপনার দুরবস্থার কারণ হয়ে থাকতে পারে। যেমন- আপনি শহরের বাড়িতে থাকলে অসুস্থ থাকেন কিন্তু গ্রামের বাড়ি গেলে সুস্থবোধ করেন, কিংবা শ্বশুর বাড়িতে থাকলে আপনার রোগব্যাধি বৃদ্ধি পায় কিন্তু বাপের বাড়িতে গেলে রোগব্যাধি হ্রাস পায়।  
তবে যাদু যখন নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ না থাকে, যখন দূরপাল্লার যাদু করা হয়, তখন আর এ লক্ষণ দিয়ে কিছু বোঝা যাবে না। যাদুটোনা সবসময় নিকটবর্তী তথা নিকটে অবস্থানরত ব্যক্তিদের দ্বারা নাও হতে পারে, দূর থেকেও আসতে পারে।
(খ) অশুভ শক্তির হাত থেকে আশ্রয় প্রার্থনার দ্বারা অবস্থার উন্নতি লাভ: সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ার দ্বারা যদি আপনি স্বস্তিবোধ করেন, তাহলে বুঝতে হবে, আপনার অস্বস্তির পিছনে কোন জিন বা মানুষ শয়তানের নেপথ্য ভূমিকার রয়েছে। নইলে যাদুকর ও খান্নাসের কবল থেকে আশ্রয় প্রার্থনার দ্বারা আপনার অবস্থার উন্নতি ঘটবে কেন, যদি আপনার দুরবস্থার পিছনে ওসবের কালো হাত সক্রিয় না থেকে থাকে? বিশেষ করে কোন দম্পতির অবস্থা যখন এমন হয় যে, সূরা নাস-ফালাকের সহায়তা ছাড়া একে অপরের কাছেই ঘেঁষতে পারেন না, তখন এর পিছনে কোন অশুভ প্রভাব থাকার বিষয়ে আর বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশই থাকে না।
সূরা ফালাক ও নাস দ্বারা হয়তো জিন ছাড়াও জীবাণু বা যেকোন সৃষ্টবস্তুর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়, আবার জিনও হয়তো যাদুর দ্বারা প্রেরিত নাও হতে পারে; কিন্তু যদি কখনো এমন হয় যে, সূরা নাস-ফালাক ছাড়াও যাদুকরদের প্রতি লানতের প্রার্থনা সম্বলিত আয়াত পাঠের দ্বারা ভিকটিম রোগের উপশম লাভ করে, অপরদিকে সন্দেহভাজন ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে যাদুটোনার বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে সুনিশ্চিত হয়। কারণ, মজলুম যখন কারো নামোল্লেখ না করেই জ্ঞাত বা অজ্ঞাত জালেমের বিরুদ্ধে ফরিয়াদ জানায়, তখন প্রকৃত জালেম ছাড়া কেউ শাস্তি পাবার কথা নয়।
(গ) অদৃশ্য আঘাতজনিত সমস্যা: কোন শারীরিক সমস্যা যদি অদৃশ্য এমন আঘাতের দ্বারা সৃষ্ট হয়, যে রকম আঘাতের অনুভূতি একদম দৃশ্যমান বস্তুর আঘাতের মতই, তাহলে সেটা যাদু বা জিন ছাড়া আর কিছু নয়। যেমন- কারো পেটের উপর ঢিলার মতন কিছু একটা সজোরে এসে পড়ে আঘাত করল, আর পেটখারাপ বা রক্তপাত শুরু হয়ে গেল, তাহলে সেটাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়া যাবে না। মোটকথা, যেকোন অদৃশ্য external আঘাত, খোঁচা বা আঁচড়কে নিছক শারীরিক বা মানসিক সমস্যা বলে চালিযে দেয়ার সুযোগ নেই। এরকম ক্ষেত্রে কথিত কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই গ্রহণযোগ্য হবে না।
যাদুর বাণগুলো ভিকটিমের আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে ধরে সুনির্দিষ্ট কিছু দোয়া পড়ে পাল্টা নিক্ষেপ করলে যদি রোগীর উপশম হয় এবং সন্দেহভাজন কারো মুখ কালো হয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে, ডাল মে কুচ হ্যায়। বিশেষ করে হাঁচি-কাশির ক্ষেত্রে অনিষ্টকারীরা একই ঘরে অবস্থানরত হলে পাল্টা নিক্ষেপের দ্বারা পরিষ্কারভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়। অবশ্য যাদুকর ডাইনীরা বেশি সেয়ানা হলে রোগীর পক্ষ থেকে পাল্টা নিক্ষেপ বা লানতের পূর্বাভাস পাওয়া মাত্রই ঘরে অবস্থানরত কোন তৃতীয় পক্ষের উপর অসুস্থতা বা ঠাণ্ডা-কাশি চালান করে দিয়ে বিভ্রান্তি ও ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়। অতএব, দীর্ঘদিনের শত্রুতা আছে এমন ব্যক্তি ছাড়া এবং শত্রুতার বোধগম্য কারণ ছাড়া শুধু লানতের বা পাল্টা নিক্ষেপের ফলাফলের দ্বারা কাউকে অপরাধী ভাবা যাবে না।
(ঘ) অদৃশ্য বস্তু বা শক্তি হাতে ধরা পড়া: শরীরের কোন ব্যথা, জ্বালা, খোঁচা, বিড়বিড়ানি, চুলকানি বা যেকোন সমস্যার স্থানে হাত রেখে আয়াতুল কুরসী বা যেকোন প্রাসঙ্গিক দোয়া পড়ে যদি শরীরের সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে সমস্যাটা দূরীভূত হয়ে হাতের মধ্যে চলে আসে এবং হাতের মধ্যে বৈদ্যুতিক কম্পন বা কোন কিছুর চাপ বা নড়াচড়া অনুভূত হয়, তাহলে সেটা জিনের অস্তিত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এরকম জিনের আগমন যদি লাগাতারভাবে সিরিয়ালি আসতে থাকে, তাহলে সেটা মানুষের চালান করা জিন বৈ আর কিছু নয়। আর হাতে ধরা পড়া বস্তু বা শক্তিকে নিক্ষেপের দোয়া পড়ে নিক্ষেপ করার দ্বারা যদি তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কাউকে বিব্রত হতে দেখা যায়, তাহলে এটা কার কাজ ছিল সেটা বোঝা যায়। কাশির ক্ষেত্রে পিঠ, বুক বা গলায় চেক করে দেখতে হয়, কোন অনাকাঙ্ক্ষিত আগন্তুকের উপস্থিতি আছে কিনা।
(ঙ) অদৃশ্য কোন কিছুর উপস্থিতি অনুভূত হওয়া: শরীরের কোন স্থানে যদি অদৃশ্য কোন কিছুর নড়াচড়া অনুভূত হয়, এমনকি অদৃশ্য কেউ এসে বিশেষ কোন অস্বস্তিদায়ক কাজ করে যাচ্ছে বা শরীরের বিশেষ কোথাও প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে এরকম বোধ হয়, তাহলে এটা জিন-যাদুর প্রভাব ছাড়া সম্ভব নয়। উপরন্তু যদি দৃশ্যমান রহস্যজনক বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়, তাহলে এ বিষয়ে আর কোন সন্দেহ থাকে না।
(চ) তীব্র ও আকস্মিক উপদ্রব: যেকোন অসুস্থতা যদি তীব্র (violent) ও আকস্মিকভাবে হাজির হয় বা বৃদ্ধি ঘটে, তাহলে সেটা যাদুজনিত হবার সম্ভাবনা। যেমন- করোনার ক্ষেত্রে জ্বর, কাশি ও পেটখারাপের মত লক্ষণগুলো যদি বিনা নোটিশে হঠাৎ করে মারাত্মক ও তীব্র আকারে চড়াও হয়, তাহলে সেই লক্ষণগুলো যাদুর দ্বারা কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট বলে ধরে নেয়া যায়। এমনকি সংশ্লিষ্ট রোগীর করোনা রোগটিও জিনের মাধ্যমে চালান করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
(ছ) প্রতিকার করার সময় পোড়া গন্ধ পাওয়া: যাদুর রোগী যদি যাদুর জিনের উৎপাত দূরীকরণের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করে, তাহলে কোন কোন সময় পোড়া গন্ধ পেতে পারে। নাক যেহেতু একাধারে জিনের প্রবেশপথ ও ঘ্রাণেন্দ্রিয়, তাই নাকে তেল দিলে জিনের রোগীরা পোড়া গন্ধ পায়। বিশেষ করে ঠাণ্ডা, কাশি, এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, নাক বন্ধ এসব রোগের ক্ষেত্রে নাকে কোরআনের আয়াত পড়া সরিষার তেল দিলে যদি পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়, গলায় দু'এক ফোঁটা সরিষার তেল দিয়ে যদি পোড়া  স্বাদ অনুভব করা যায়, তাহলে এ সমস্যা জিনঘটিত হওয়া পুরোপুরি নিশ্চিত। আর এমনটি বার বার হতে থাকলে বুঝতে হবে, জিনগুলো স্বত:প্রণোদিতভাবে আসেনি, বরং যাদুর মাধ্যমে চালান করা হয়েছে।
(জ) কারো সান্নিধ্য বা উপস্থিতিতে বৃদ্ধি পাওয়া: কোন ব্যক্তিবিশেষের অস্বাভাবিক দৃষ্টি, স্পর্শ, অস্বাভাবিক আচরণ, বিশেষ কারো আগমন বা বিশেষ কারো কাছে গমন, কোন ব্যক্তিবিশেষের হাত বা চোখ লাগানো খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ ইত্যাদির দ্বারা যদি সবসময়ই অসুস্থতা সৃষ্টি বা বৃদ্ধি ঘটে থাকে, তাহলে সেটা যাদুর প্রভাব। [অবশ্য যাদুটোনার চিকিৎসা গ্রহণ বা প্রদানের জন্য অথবা যাদুর শিকার কাউকে সহায়তার জন্য কেউ কারো কাছে গেলেও বিপদ বা উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে এটা যাদুর প্রভাব হওয়া নিশ্চিত হলেও যার সান্নিধ্যে গমনের কারণে এটার উদ্রেক হচ্ছে তাকে অপরাধী ভাবা যাবে না।]
(ঝ) বিশেষ সময়ে বা প্রেক্ষাপটে বৃদ্ধি পাওয়া: শারীরিক কারণে হলে যেকোন রোগ এমনিতেই হতে পারে; কিংবা খাদ্যাভ্যাস, আবহাওয়া, ঘরে থাকা বা বাইরে যাওয়া, বাতাসের কাছে বা পানির কাছে যাওয়া ইত্যাদির দ্বারাও রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতে পারে। কিন্তু রোগ বৃদ্ধির এমন কিছু কারণ আছে, যেগুলো অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক কোন চিকিৎসাতেই বোধগম্য নয়। যেমন- শরীরের কোন স্থানে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া বিশেষ কোন কাজে গেলে শুরু হওয়া, তা সে স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপনের কাজ হোক, অথবা অফিসের দাপ্তরিক কাজ হোক। বিশেষ করে কর্মব্যস্ত অবস্থায় মানুষজনের মধ্যে এমন সময়ে এরকম হওয়া, যখন শরীরে কোন সমস্যা হলে প্রতিকার করারও উপায় থাকে না। আবার বিশেষ কোন মুদ্রাদোষ যদি মানসিক টেনশন ছাড়াই শুধু ঊর্ধ্বতন বা সম্মানিত কারো কাছে গেলেই উদ্রেক হয়, তাহলেও এটা চালান করা জিনের চাপেই হয়ে থাকে। শুধু মনোদৈহিক ব্যাপার হলে অন্য যেকোন সময়েই হতে পারতো। খাবার সামনে বসলে কাশির উদ্রেক হওয়াটাও যাদুর জিনেরই কীর্তি। খাবার মুখে দেবার পর কাশি হলে সেটা না হয় ডাক্তারী কারণেও হতে পারে। স্ত্রীর কাছে থাকলে দুর্বলতা আসা, দূরে থাকলে সবকিছু ঠিক থাকা; টয়লেটের প্রচণ্ড বেগ এসে হারিয়ে যাওয়া, টয়লেট করতে না পারা, অথচ সফরের সময় অথবা তাড়াহুড়ার সময় বেগ সামলাতে না পারা— এগুলোও যাদুর জিনদের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার নমুনা।
(ঞ) ছোঁয়াচে নয় এমন রোগ সকলের একসাথে হওয়া: যদি পরিবারের সকল সদস্য এমন কোন অসুস্থতায় একত্রে আক্রান্ত হয়, যেটা ডাক্তারী মতে ছোঁয়াচে নয়; সেটা যাদুকর বা জিনদের টার্গেটেড আক্রমণেরই ইঙ্গিতবহ। এছাড়া ছোঁয়াচে হোক বা না হোক, ভিন্ন বা দূরবর্তী স্থানে অবস্থানরত আত্মীয়-পরিজন যদি একত্রে একই সময়ে একই সমস্যায় আক্রান্ত হন, তাহলে সেটাও যাদুর জিনদের সংঘবদ্ধ আক্রমণ।
(ট) ডাক্তারী রিপোর্ট স্বাভাবিক হওয়া: যদি ডাক্তারী রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু ধরা না পড়ে, কিংবা ডাক্তারী চিকিৎসায় আশানুরূপ উন্নতি না পাওয়া যায়, তাহলে সেটা জিন বা যাদুর লক্ষণ।
যেকোন সমস্যা বা যন্ত্রণা যাদু বা জিনের দ্বারা সৃষ্ট হলেও ডাক্তারী চিকিৎসার দ্বারা সেটা উপশম করার চেষ্টা করা যাবে। কিন্তু পুনরাবৃত্তি রোধ করা এবং স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তারী চিকিৎসার পাশাপাশি অবশ্যই জিন ও যাদু থেকে মুক্তি লাভের দোয়া ও আমলগুলো করতে হবে।

যাদুটোনার পদ্ধতি: যাদুটোনা তথা Black Magic যারা করে থাকে, তারা এর জন্য প্রথমে কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাস ধরে বিশেষ পদ্ধতিতে আন্ডারগ্রাউন্ডের শয়তানী আত্মার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে। তাদের সাধনার অংশ হিসেবে প্রাণী বা মানুষকে বলি দেওয়া হয়, যাতে করে তাদের যাদুমন্ত্রকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের অশুভ শক্তির সাথে সংযুক্ত করতে পারে। এই পদ্ধতি (technique) ব্যবহারের পর তারা অশুভ আত্মার সংস্পর্শ লাভ করে। এসব যাদুকরদের মধ্যে কেউ কেউ আবার উক্ত অশুভ আত্মাগুলোকে নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্দেশ প্রদানের মতন সক্ষমতা অর্জন করে বসে। [সূত্র: http://www.breakblackmagic.com/Symptoms থেকে ভাষান্তরিত] 
অপর একটি ওয়েবসাইটে বর্ণিত হয়েছে, "Someone who has mastered the art of black magic can perform black magic, these Black Magicians follow a system for many weeks and months, calling the spirit world, doing rituals and making animal sacrifices (Human sacrifices in some cases) to join hands with the spirit world. Once they have mastered the technique they take control of the spirits who are at their command 24 hours a day. Then these spirits are used to access any information about anyone and are also used to harm people, even kill them. People who are driven by jealousy, anger, hate and other negative traits hire these black magicians to inflict harm on their relatives, friends, and co-workers." [সূত্র: https://blackmagicsymptoms.com/fqa/]
অপর একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, "যাদু এমন এক বস্তুকে বলা হয় যার উপকরণ নিতান্ত গোপন ও সূক্ষ্ণ হয়ে থাকে। আর যাদুকে যাদু নামে এজন্য অভিহিত করা হয় যে, এটা এমন সব গোপনীয় কাজের মাধ্যমে অর্জিত হয় যা দৃষ্টির আগোচরে থাকে। যাদুর মধ্যে মন্ত্র পাঠ, ঝাড়ফুঁক, বাণী উচ্চারণ, ঔষধপত্র ও ধূম্রজাল- এসব কিছুর সমাহার থাকে। যাদুর প্রকৃত অস্তিত্ব রয়েছে। কোন যাদু মনের উপর আছর করে এবং কোনটা দেহের উপর। ফলে মানুষ কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ে, কখনো নিহতও হয় এবং এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা যায়। 
যাদুর এই আছর ও প্রতিক্রিয়া আল্লাহ তাআলার পার্থিব ও তাক্বদীরে নির্ধারিত হুকুম ও অনুমতি ক্রমেই হয়ে থাকে। আর এটা পুরোপুরি শয়তানী কাজ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাদু -বিদ্যা আয়ত্ব করতে হলে শিরকের মাধ্যমে এবং অপবিত্র ও দুরাত্মাদের পছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে তাদের নৈকট্য লাভের আশ্রয় নিতে হয়। ....... এতে শয়তানদেরকে ব্যবহার করা হয়, তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা হয় এবং তাদের পছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে তাদের নৈকট্য অর্জন করা হয়, যাতে তারা যাদুকরের কাজ আঞ্জাম দেয়। সুতরাং যাদু শয়তানদের শিখানো বস্তু। আল্লাহ তাআলা বলেন: وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ ‘বরং শয়তানরাই কুফুরী করেছিল, তারা মানুষকে যাদু-বিদ্যা শিক্ষা দিত’ (সূরা বাকারা: ১০২)" [সূত্র: http://workforhereafter.blogspot.com/2014/12/blog-post_21.html
যাদুকররা শয়তানের সাহায্য লাভের জন্য তাদের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে যেসব কাজ করে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কোরআন অবমাননা, নাপাক বস্তু ভক্ষণ ইত্যাদি। তবে যারা সার্বক্ষণিকভাবে মনেপ্রাণে কাজে কর্মে আল্লাহর প্রতি শত্রুতা ও আল্লাহর বান্দাদের অনিষ্ট সাধনে নিয়োজিত থাকে, আল্লাহর বান্দাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দিতে সর্বাত্মক সচেষ্ট থাকে, মানুষকে মন্দ কাজ ও কুফরীর আদেশ দান এবং ভাল কাজ ও ঈমান নষ্ট করার চেষ্টায় মেতে থাকে, নানান ছলছুতায় বাচ্চাদের নামাযে বাধাদান করে ও নাপাক জিনিস খেতে বাধ্য করে, এককথায় হুবহু শয়তানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই অন্তরে ধারণ ও কর্মে বাস্তবায়ন করে, তাদেরকে শয়তান যেচে আগ বাড়িয়েই সহায়তা করে থাকে— তাদের বেলায় সম্ভবত কোন অতিরিক্ত আলতু-ফালতু কাজ দিয়ে শয়তানকে তেলানোর প্রয়োজনই হয় না। আর এসব তাগূতী ব্যক্তিদের শয়তানী কাজে (অর্থাৎ, ধর্মদ্রোহিতা ও নিষ্ঠুরতার কাজে) যারা আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানে নিবেদিত থাকে, তাদের পক্ষেও শয়তানের আনুকূল্য লাভে খুব একটা বেগ পেতে হয় না, তাদেরকেও শয়তান অনেকটা শর্তহীনভাবেই সহায়তা করে থাকে। কারণ, তারা যেহেতু শয়তানের আশা-আকাঙ্ক্ষা ইতিমধ্যে (already) বাস্তবায়ন করেই ফেলেছে, না চাইতেই শর্ত পূরণ করে দিয়েছে, তাই তাদের জন্য শয়তান ফ্রি সার্ভিস দিয়ে থাকে, অর্থাৎ তাদের জন্য বাড়তি আচার পালনের প্রয়োজনই পড়ে না। 
প্রশ্ন হতে পারে, শয়তান ও খারাপ জিনেরা তো এমনিতেই স্বত:প্রণোধিত হয়ে মুমিনদের ক্ষতি সাধনে নিবেদিত থাকবে, তাদেরকে যাদুর মাধ্যমে মানুষের অনিষ্ট সাধনে লাগিয়ে দিতে হবে কেন? এর জবাব হলো, শয়তান জিনেরা মানুষের অনিষ্ট সাধনে সর্বাত্মকভাবে আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক বাধার কারণে মানুষের শরীরের উপর সওয়ার হওয়া বা শরীরে প্রবেশ করা জিনদের জন্য কোন সুখকর বিষয় নয়। তাই কোন জিন স্বেচ্ছায় নাচতে নাচতে মানুষের নাক-কান বা পায়ু দিয়ে গতরে ঢুকতে চাইবে না। কেবল ঘাড় ধরে বাধ্য করা হলেই কোন জিন মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। আর এই বাধ্য করবার কাজটা সরাসরি মানুষ যাদুকর কর্তৃকও হতে পারে, আবার মানুষ যাদুকরের সাথে চুক্তিবদ্ধ সর্দার জিনের মাধ্যমেও হতে পারে।
এখন জানার বিষয় হলো, যাদুকর কিভাবে জিনকে মানুষের উপর চড়াও হতে বাধ্য করে? এক্ষেত্রে আমার ধারণা হলো, প্রাকৃতিক শক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার দ্বারা জিনকে চালিত করা হয়। ধ্যান ও যোগসাধনার মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে একাত্মতা অর্জিত হয় এবং বায়ু-পানি-আগুন, পাহাড় সহ সকল প্রাকৃতিক বস্তুকে নিজের আজ্ঞাবহ করা হয়। জিনদের অস্তিত্ব যেহেতু বায়বীয়, সেহেতু তাদের গতিবিধি বায়ুর গতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। আমরা জানি, আল্লাহ তাআলা হযরত সুলাইমান (আ.)-এর অধীন করে দিয়েছিলেন বাতাসকে, আর সেই সাথে জিনকে। এ থেকে অনুমান করা যায়, বাতাস যার হাতে থাকবে, জিনও তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সুলাইমান (আ.) আল্লাহর কুদরতে যে ক্ষমতা লাভ করেছিলেন, শয়তান যাদুকররা কুফরী যাদুবিদ্যার মাধ্যমে অনুরূপ ক্ষমতা লাভ করে ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক কাজে তা ব্যবহার করছে। যাদু বলতে যদি শুধু মানুষ কর্তৃক জিনকে সন্তুষ্ট করে আরেক মানুষের উপর প্রেরণ করাই হতো, তাহলে জিনদের মধ্যে কেউ যাদুকর হবার প্রয়োজন হতো না, কারণ জিনেরা তো এমনিতে সরাসরিই আসতে পারে বা অন্য জিনদের সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারে। অথচ আমরা জানি, জিনদের মধ্যেও এমন লোক আছে যারা মন্ত্রপাঠ করে মানুষকে যাদু করে থাকে। অতএব, যাদু বলতে শুধুমাত্র জিনের সাথে যোগাযোগ বুঝায় না, বরং প্রাকৃতিক শক্তিকে বশ করা বুঝায় এবং প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই জিন-মানুষ, জীব-জন্তু, আগুন-বাতাস-পানি এসবকে উদ্দেশ্য সাধনে নির্দিষ্ট কারো পক্ষে বা বিপক্ষে চালান করা হয়। এছাড়া এমনও হতে পারে, যাদুকর যখন কোন প্রাণীর (বেশি শক্তিশালী যাদুর ক্ষেত্রে মানুষের) রক্তকে জিনের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে, তখন তা পান করে সেই জিন হৃষ্টপুষ্ট হয়ে মানবদেহে প্রবেশের Access লাভ করে।
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যাদুটোনার কার্যসাধনে নিয়োজিত অশুভ আত্মাগুলোকে দুষ্ট মৃত ব্যক্তিদের আত্মা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পাপী আত্মাগুলোর স্বাধীন বিচরণের বিষয়টি অন্যান্য ধর্মে স্বীকৃত হলেও ইসলামে এর সত্যতার পক্ষে তেমন কোন নজির পাওয়া যায় না। কারণ, কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী মৃত পুণ্যাত্মাগুলোকে ‘ইল্লিয়্যিনে’ আর পাপাত্মাগুলোকে ‘সিজ্জীনে’ রাখা হয়। পুণ্যবান ব্যক্তিদের আত্মাগুলো আল্লাহ তাআলার অনুমতিক্রমে পৃথিবীতে বিচরণ ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে দোয়া গ্রহণের সুযোগ পেলেও পাপী দুরাত্মাদের স্বাধীন বিচরণ ও মানুষের ভালো-মন্দ কিছু সাধন করবার ক্ষমতা আছে বলে মনে হয় না। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, যাদুটোনা সংঘটিত হয়ে থাকে মূলত দুটি অপশক্তির সাহায্যে— এর একটি হলো জিন শয়তান, আরেকটি হলো জীবিত দুষ্ট লোকদের আত্মা। বর্তমানে ধ্যান ও যোগ চর্চাকারী কিছু সংগঠন রয়েছে, যারা প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়া মানুষের সংঘবদ্ধ আত্মিক শক্তিকে ব্যবহার করে মানুষের নিরাময় (healing) সাধনের পন্থা শিক্ষা দেয়। কিন্তু নিরাময় শিক্ষাদানের ছলে ব্যক্তিগত বা সংঘবদ্ধভাবে অপরের শরীরের ভিতর অনুপ্রবেশের যে উপায় শেখানো হয়, তা অনধিকার প্রবেশ ও অকল্যাণ সাধনের দুয়ার খুলে দেয়। ফলে এসব প্রশিক্ষণ মানুষকে সুস্থতা ও প্রশান্তি প্রদানের চেয়ে মানুষের অসুস্থতা ও অমঙ্গল সাধনেরই পন্থা বাতলে দেয়। ধ্যানের মাধ্যমে মনের শক্তিকে ব্যবহার করে ইচ্ছা পূরণ ও অসাধ্য সাধনের প্রক্রিয়া মূলত যাদুবিদ্যারই অংশ। 
পদার্থবিজ্ঞানের মতে, প্রকৃতিতে বিরাজমান সকল পদার্থের অণু-পরমাণুগুলো থেকে শক্তি (energy) নির্গত হয়। আবার মানুষের মনও ধ্যানের গভীরে এই শক্তি স্তরে (energy level) অবস্থান করে। তাই কোয়ান্টাম ফিজিক্সের বিশেষ পদ্ধতি মোতাবেক ধ্যানের মাধ্যমে মানুষের ইচ্ছাশক্তিকে প্রাকৃতিক বস্তুসমূহ থেকে নির্গত শক্তিকে নিজের ইচ্ছামাফিক নির্দিষ্ট দিকে ধাবিত বা চালিত করা যায়। যাদুতে মূলত এ শক্তিকেই কোন মানুষের বিরুদ্ধে নেতিবাচক শক্তিরূপে (negative energy) ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে কথিত ধ্যান বা মেডিটেশন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নেগেটিভ এনার্জি জেনারেট করবার এক হাতিয়াররূপেই কাজ করে। যাদু মূলত প্রাকৃতিক শক্তিকে বশ করবারই একটি বিদ্যা। প্রকৃতির উপর ‘কুন-ফাইয়াকুন’ বলে হুকুম চালানো কেবল আল্লাহ তাআলারই একক অধিকার। এই বিদ্যার দ্বারা আল্লাহর একচ্ছত্র অধিকারের উপর অনধিকার হস্তক্ষেপ করা হয় বিধায় এ বিদ্যা কুফরী। জিন-ভূত, জীব-জন্তু, পদার্থ, বাতাস-নদী-সাগর-পাহাড় ইত্যাদি সবকিছুকেই হাত করা হতে পারে এই বিদ্যার দ্বারা। এর মধ্যে জিন ব্যবহারের বিষয়টাই বহুল ব্যবহৃত ও সাধারণ্যে অধিক পরিচিত। জিন ব্যবহারের কাজটি কেউ করে কুফরী কাজের দ্বারা খুশী করার মাধ্যমে, কেউ করে কুফরীর দ্বারা বড় ও প্রভাবশালী জিনকে খুশী করে তার দ্বারা অন্য জিনকে বাধ্য করার মাধ্যমে, কেউ আবার করে জিনকে বাধ্য ও বশ করার মাধ্যমে। 

স্পর্শ ও দৃষ্টির মাধ্যমে যাদু: বর্তমানে এ দুটি মাধ্যমের যাদুই সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিগোচর হয়। এ দুটো পদ্ধতির যাদু বেশি চোখে পড়ার কারণ, হয়তো এ দুটোর প্রচলন ও ব্যবহার বেশি, অথবা সামনাসামনি চোখের সামনে হয় বিধায় ভিকটিম ও প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে ধরা পড়ে। এ পদ্ধতির যাদু সম্পর্কে রেফারেন্স তুলে ধরছি:-
* Black magic can also be done by touching your body or looking straight into your eyes
* Black Magic can be done over the phone. DO NOT answer calls that come from anonymous numbers, Blocked Id's or from numbers that you do not recognize, let them go to voicemail
অপর একটি ওয়েবসাইটে বদনজর ও হিংসার আলামতের মধ্যে উল্লেখিত একটি আলামত হলো:-
To see people who have given you the evil eye looking at you in a strange and scary way [সূত্র: https://www.ruqyainlondon.com/article/self-diagnosis]
উল্লেখ্য, বর্তমানে কোন কোন গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান গুরুর কাছ থেকে বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক শক্তি হাসিলের দ্বারা স্পর্শ ও দৃষ্টির মাধ্যমে নিরাময়ের পদ্ধতি শিক্ষাদান করে। আসলে এগুলোই স্পর্শ ও দৃষ্টির যাদু শিক্ষার পাঠশালা। কারণ, তাদের অর্জিত শক্তি শুধু নিরাময়ে নয়, বরং মানুষের ক্ষতি করার কাজেও ব্যবহৃত হয়, বরং ক্ষতি করার কাজটিই এদের দ্বারা বেশি হয়।
বর্তমানে অনেক বিবাহিত মেয়ের কাছে একই তথ্য জানা যায় যে, শাশুড়ী বা ননদ খাবারের উপর বা শরীরের উপর নজর দিয়ে কিংবা চোখে চোখ রেখে পুত্রবধু বা ভাবীকে (ছেলে/ভাই এবং নাতি-নাতনি/ভাতিজা-ভাতিজী সহ) অসুস্থ বানিয়ে থাকে; নিজ নিজ স্বামী বা পিতাকে চোখে চোখ রেখে সম্মোহিত, বশীভূত ও উত্তেজিতও করে থাকে। আবার এমন ঘটনাও শোনা গেছে যে, কোন বাচ্চার ফুপু এসে বাচ্চাকে আদর করার ছলে মাথায় হাত দিয়ে স্পর্শ করল, আর বাচ্চা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘুমিয়ে পড়ল বা জ্বরে আক্রান্ত হলো।
একধরনের হিংসুক শাশুড়ী আছে, যারা নিজ পুত্রবধূর চেহারা, পোশাক ও সাজসজ্জার দিকে একেবারে লম্পট পুরুষের চাইতেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে। এসব হিংসুকের কুনজরে পড়লে অল্প বয়সেই রূপ-যৌবন, শরীর-স্বাস্থ্য, কর্মক্ষমতা, দাম্পত্য সুখ সব লাটে ওঠে।
লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, স্পর্শ ও দৃষ্টির মাধ্যমে যাদুকারীরা ভিকটিমকে সবসময় হাত ও দৃষ্টির নাগালের মধ্যে রাখতে উদগ্রীব হয়ে থাকে। কাছাকাছি থাকলে চোখের সামনে এবং দূরে থাকলে ভিডিও কলে পেতে চায়। শিকারকে নিশানার মধ্যে পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে থাকে। বুঝে হোক বা না বুঝে হোক, কারো কোন পদক্ষেপ তাদের নিশানা ও শিকারের মধ্যে পর্দা ফেলে দিলে সেটাকে তারা হৃদয়হীনতা হিসেবে চিহ্নিত করে এবং আবেগ ও ভালোবাসা বিঘ্নিত করার নিষ্ঠুর প্রয়াস হিসেবে তুলে ধরে।
এই শ্রেণির যাদুশক্তির অধিকারীরা ভিকটিমদেরকে চোখের সামনে ও হাতের নাগালে পাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও এর অর্থ এই নয় যে, দৃষ্টি ও স্পর্শ ছাড়া তারা এ কাজ করতে পারবে না। চোখ ও হাতের নাগালে না পেলেও এরা শুধু চিন্তা ও কল্পনার মাধ্যমেই কাছে বা দূরে যাদুর বাণ নিক্ষেপ করতে পারে। ইমোশনাল ব্লাকমেইল ও লবিংয়ের মাধ্যমে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের দ্বারা ভিকটিমকে ভিডিও কলের স্ক্রীনে আনতে পারলে অথবা রুমের দরজা খোলা রাখতে বাধ্য করাতে পারলে মোবাইলের স্ক্রীনে চোখ রেখে অথবা রুমে প্রবেশ বা রুমের পর্দা সরিয়ে উঁকি মেরে ভিকটিমদের চেহারা ও দৈহিক অবস্থান দেখে সরাসরি বাণ মারতে পারে; আর তা না পারলেও দূরে থাকাবস্থায় শুধু ভিকটিমের কথা চিন্তা করে কল্পনা বা মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে, আর একই বাড়িতে থাকাবস্থায় ভিকটিমের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে দরজার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপপূর্বক কল্পনা বা মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে জিন চালান করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, জিনের আক্রমণে রোগীর ঘুম ভেঙ্গে গেলে রোগী যদি একটু কষ্ট করে উঠে এসে দরজা খুলে বাইরে তাকায়, তখন কোন না কোন যাদুকর ডাইনীকে রুমের সামনে পায়চারিরত দেখতে পায়।
দৃষ্টি, স্পর্শ ও কল্পনার মাধ্যমে যারা যাদু করতে পারে, তারা এটা কখনো করে গভীর ধ্যানে বসে, আবার কখনো করে তাৎক্ষণিক কল্পনার মাধ্যমে। এমনকি নামাজের ছলেও নামাজ পড়ার পরিবর্তে অন্য কিছু করতে পারে, যেটা বোঝা যাবে তাদের হাত বাঁধা ও আসনের ধরন দেখে।
যারা জেনেশুনে বদনজর দেয় বা চোখ দিয়ে যাদু করে, তারা এতটাই নির্লজ্জ আর বেপরোয়া হয় যে, ভিকটিম সবকিছু বুঝতে পারছে জেনেও চক্ষুলজ্জারও তোয়াক্কা করে না। তবে ভিকটিম যদি যাদুকর ডাইনীর নজরদানরত অবস্থায় চোখে চোখ রেখে নজরের দোয়া পড়তে পারে, তাহলে যাদুকর ব্যক্তি প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। কিন্তু সামনাসামনি নজর দিতে না পারলে আবার হাঁটাচলার পথে বা একটু চোখের আড়ালে থেকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। কোন কোন সময় নিজেদের বাচ্চা-কাচ্চাদের চোখে এই জিনিসটা চালান করে তাদেরকে দিয়েই এ কাজটা করায়, আর নিজেরা নিরাপদে থাকে। কখনো বা সরাসরি নজর প্রদানের পরিবর্তে জিনকেই খাবার টেবিলে পাঠিয়ে দেয় এবং সেই জিন ভিকটিমের ঘাড়ের উপরে বসে বসে তার খাবার প্লেটের দিকে নজর দিতে থাকে। তা দিয়েও যখন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হাসিল না হয়, তখন ভিকটিমের নজরের দোয়া পড়ার বিষয়টিকে যাদু হিসেবে পেশ করে ভিকটিমকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়।
দাজ্জালের জামানা ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষিতে বর্তমান যুগে এ ধরনের যাদুর ব্যবহার ব্যাপকভবে বৃদ্ধি পেলেও অতীতে যে এটা একেবারে ছিল না, তা নয়। আমাদের রাসূলুল্লাহ (সা.)-কেও দৃষ্টি প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল, যে বিষয়টি সূরা ক্বলমের শেষের দিকে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে:-
"কাফেররা যখন কোরআন শুনে, তখন তারা (এমন ভাবে তাকায় যে মনে হয়) তাদের দৃষ্টি দ্বারা যেন আপনাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিবে এবং তারা বলেঃ ও তো একজন পাগল!" (সুরা ক্বলম, আয়াত ৫১)
এ আয়াত প্রসঙ্গে মুফাসসিররা বলেন, এক লোক বদজরের কারণে প্রসিদ্ধ ছিলো, (মানে আমাদের ভাষায় লোকটার নজর খারাপ ছিলো) তো মক্কার কাফিররা ওই লোকটাকে কোত্থেকে নিয়ে এসেছিলো, রাসূল সা. যখন কোরআন পড়তে বসতেন, তখন ওই লোকটা চেষ্টা করতো নজর দিতে। শেষে যখন কাজ হতো না, তখন বলতো ধুর! এতো পাগল (নাউযুবিল্লাহ), এজন্য এর কিছু হচ্ছেনা! (বিস্তারিত জানতে তাফসীরে মাযহারি বা মা'রিফুল কোরআনের পুর্ণাঙ্গ এডিশনটা দেখা যেতে পারে)
এ থেকে বুঝা যায়, অনেক লোকের নজর খুব বেশি লাগে, আবার অনেকে এমন আছে যারা একটুতেই নজর আক্রান্ত হয়। ... 
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সাধারণত নজর তো ইচ্ছাকৃত লাগেনা, কোনো কিছু দেখে খুব মুগ্ধ হলে, তখন যিকির না করলে লাগে। কিন্তু ব্ল্যাক ম্যাজিকের কিছু রিচ্যুয়াল আছে, যা দ্বারা যাদুকর ইচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে নজর দিতে পারে। হতে পারে ওই লোকটা এরকম কিছু জানতো। আল্লাহই ভালো জানেন।" [সূত্র: 
https://da-dk.facebook.com/16heraralo/posts/415149428823537]
ঘটনাটি সম্পর্কে মারেফুল কোরআনে বলা হয়েছে এভাবে, "মক্কায় জনৈক ব্যক্তি নযর লাগানোর কাজে খুবই প্রসিদ্ধ ছিল। সে উট ইত্যাদি জন্তু-জানোয়ারকে নযর লাগালে তৎক্ষণাৎ সেটি মরে যেত। মক্কার কাফেররা রসূলুল্লাহ (সা.)-কে হত্যা করার জন্য সর্বপ্রযত্নে চেষ্টা করত। তারা রসূলুল্লাহ (সা.)-কে নযর লাগানোর উদ্দেশ্যে সে ব্যক্তিকে ডেকে আনল। সে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নযর লাগানোর চেষ্টা করল; কিন্তু আল্লাহ তাআলা স্বীয় পযগম্বরের হেফাযত করলেন। ফলে তাঁর কোন ক্ষতি হলো না।" মারেফুল কোরআনে আরো বলা হয়েছে, "হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন, নযর লাগা ব্যক্তির গায়ে সূরা ক্বলমের এই ৫১ আয়াত থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত পাঠ করে ফুঁ দিলে নযর লাগার অশুভ প্রতিক্রিয়া দূর হয়ে যায়।"
[সতর্কীকরণ: স্পর্শ ও দৃষ্টির মাধ্যমে যাদু করার কাজটি কোন কোন সময় যাদুকর ডাইনীরা নিজেরা না করে কোন সম্মোহিত ও বশীভূত ব্যক্তির দ্বারাও করাতে পারে। অতএব, যাচাই ও অনুসন্ধান ছাড়া কাউকে নিশ্চিতভাবে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না, বরং প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করতে হবে।]

যেসব ক্ষেত্রে যাদুটোনার ব্যবহার হয়: (ক) মানুষের কাছ থেকে এমন তথ্য সংগ্রহ করা, যা তার ক্ষতি সাধনের কাজে ব্যবহার করা যায়। (খ) যাদুকররা তাদের অশুভ আত্মাকে (spirit) ব্যবহার করে থাকে মানুষকে মানসিকভাবে নির্যাতন (mentally torture) ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত (physically harm) করবার কাজে। সমাজে হিংসা, ক্রোধ ও ঘৃণার দ্বারা তাড়িত কিছু মানুষ আছে, যারা তাদের আত্মীয়, বন্ধু বা সহকর্মীদের ক্ষতি সাধনের কাজে এই সমস্ত যাদুকরদেরকে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করে থাকে। [সূত্র: http://www.breakblackmagic.com/Symptoms থেকে ভাষান্তরিত] অবশ্য ভাড়াটিয়া যাদুকর ছাড়াও এক ধরনের বড় মাপের যাদুকর কাল্ট লিডার আছেন, যারা টাকার বিনিময়ে নগদে যাদু করে দেন না, বরং টাকার বিনিময়ে 'মাছ ধরার কায়দাটা' শিখিয়ে দেন। এসব কাল্ট লিডারের অনুসারীরা গুরুর সাথে এমন এক আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকেন যে, তারা নিজ চাহিদা অনুযায়ী গুরুর বশকৃত জিনগুলোকে ধ্যান বা দৃষ্টির মাধ্যমে ডেকে নিয়ে যেকোন মিশনে নিয়োজিত করতে পারে। তবে এর জন্য গুরুকে নিয়মিত দক্ষিণা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে হয়।
আপনার প্রতি বিদ্বেষ বা ঈর্ষা পোষণকারী ব্যক্তি আপনার উপর যাদুটোনার কাজটি নিজেও করতে পারে, আবার কোন ভাড়াটিয়া যাদুকরকে দিয়েও করাতে পারে। সংশ্লিষ্ট হিংসুক ব্যক্তি যদি নিজেই একজন তান্ত্রিক হয়ে থাকে এবং যাদুটোনার মন্ত্র ও তা পাঠের উপায় জেনে থাকে, সেক্ষেত্রে সে নিজেই এমনটি করতে পারে। অথবা বিদ্বেষপরায়ণ ব্যক্তিটি যদি প্রচুর পরিমাণ টাকার অধিকারী হয়ে থাকে (বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে হয়তো খুব বেশি টাকা নাও লাগতে পারে), সে আপনাকে শায়েস্তা করবার জন্য একজন তান্ত্রিককে দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া করে থাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। অবশ্য দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া করা যাদুমন্ত্র আপনাআপনি শেষ হয়ে যায়, যতক্ষণ না নবায়ন করা হয়। (There are different ways and techniques to spell black magic on anybody. The first way is that the person who hates you or is jealous of you due to whatever reason, knows how to spell or do “Black Magic or Bad Tantra Practices” himself or herself. So which means here she or he is the “Tantric” themselves. The second way of doing “Black Magic” or “Bad Tantra” on you will be money oriented. Meaning that whoever is jealous of you or hates you has lot of money to spend, will hire a Tantric on everyday basis and give him good amount of money so that he can do black magic on you. Now there are different ways of black magic. Tantric will do Black magic through a bad spell on you for your sufferings to start once. Now this will make the victim suffer for whatever time span the Tantric has poisoned him or her for, and then finish automatically. Until it’s renewed by him again.) [সূত্র: http://www.maakalishwetasarojinimahakali.com/black.html (দ্র: এ ওয়েবসাইটটি শুধুমাত্র তথ্য লাভের উদ্দেশ্যে উদ্ধৃত করা হচ্ছে, এ সাইটে বর্ণিত আকীদার সাথে একমত প্রকাশ করা হচ্ছে না।)] 
ইতিপূর্বে আমরা যাদুটোনার লক্ষণসমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে যাদুটোনার দ্বারা সৃষ্ট অনিষ্টের ক্ষেত্রগুলো জানতে পেরেছি। হত্যা, শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ ও অক্ষম করা, স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটানো, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও সহকর্মীদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি ও বৈরিতা সৃষ্টি, আর্থিক ও শিক্ষাগত ক্ষতি ইত্যাদি ক্ষয়ক্ষতি সাধন করা হয়ে থাকে যাদুটোনা ও বদনজরের মাধ্যমে। যাদুটোনার দ্বারা মানুষকে চাকুরীছাড়া ও বাড়িছাড়া করা সম্ভব। চাকুরী ছাড়ানো বা বাড়ি ছাড়ানোর প্রয়াস অনেক সময় অন্য কোন বড় রকমের আত্মত্যাগ (sacrifice) ও ছাড় প্রদানের বিনিময়ে রোধ (avoid) করা সম্ভব হয়। মানুষের যে সমস্ত ক্ষতি করার কাজে যাদুটোনার ব্যবহার হয়ে থাকে, তার মধ্যে সর্বাধিক পাঁচটি উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হলো- (১) ভাত ছাড়ানো (অর্থাৎ, বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো), (২) বাড়ি ছাড়ানো (অর্থাৎ, গৃহত্যাগ করতে বাধ্য করা। এটি ভিকটিমকে পাগল করে বা বিরক্ত করে স্বেচ্ছায় ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করার দ্বারাও হতে পারে, অথবা বাড়ির মালিককে বশ করে বা বাড়ির মালিকের সাথে তুচ্ছ ও অনুল্লেখযোগ্য বিষয় নিয়ে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়ে তার মাধ্যমে বাড়ি থেকে বহিষ্কার করানোর মাধ্যমেও হতে পারে), (৩) চাকুরি ছাড়ানো, (৪) অসুস্থ বানানো এবং (৫) গর্ভপাত ঘটানো বা প্রসবে বিঘ্ন ঘটানো।
 
যাদুটোনা কারা করে থাকে? (Who are the ones who can do black magic on you or your family?) যাদুটোনার মাধ্যমে অনিষ্ট সাধনের কাজটি কারা করে থাকে, এ সম্পর্কে একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “সাধারণত দূরের বা বাইরের কারো পক্ষে এ ধরনের কাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়। তোমার নিজ আত্মীয়, বন্ধু, অফিসের লোকজন, ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী বা এমনকি তোমার নিজ রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়রা হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যারা তোমার এবং তোমার পরিবারের উপর যাদুটোনা করতে পারে। আর এর কারণ হতে পারে অসংখ্য: হিংসা, ঘৃণা, প্রতিশোধস্পৃহা, সামাজিক মর্যাদার লড়াই ইত্যাদি।” (It’s hardly or rarely someone from far away or outside. Your own relatives, your friends, your office people or business rivals or even your own blood relations are the ones to do black magic on you and your family. And the reasons can be infinite: Jealously, hatred, revenge, social status war etc.) [সূত্র: http://www.maakalishwetasarojinimahakali.com/black.html (দ্রষ্টব্য: সূত্রে বর্ণিত ওয়েবসাইটের নীতি-আদর্শের জন্য উদ্ধৃতকারী লেখক দায়ী নয়)] 
যেকোন যাদুটোনার পিছনে প্রধান কারণ যে হয়ে থাকে হিংসা; ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তিরাই যে মূলত যাদুটোনা বা বদনজরের দ্বারা মানুষের অনিষ্ট সাধন করে থাকে— এ বিষয়টির ইঙ্গিত সূরা ফালাকের শেষের দুই আয়াতে পাওয়া যায়। 
পারিবারিক পর্যায়ে যত যাদুটোনা হয়ে থাকে, তা হয়ে থাকে সম্পত্তির লোভ ও সম্পত্তিজনিত হিংসা থেকে। নারীদের মধ্যে একটা কমন প্রবণতা হলো, অন্যকে দেয়ার  চাইতে অন্যের থেকে নেয়ার প্রবণতা বেশি থাকে— তা সে অর্থ-সম্পদ হোক, অথবা সেবা ও সার্ভিস হোক। কেউ আছে যৌতুকের জন্য লালায়িত থাকে এবং যৌতুক কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না পেয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়। কেউ আছে নিজের ও নিজের সকল ছেলে-মেয়ের সপরিবারে রসনা বিলাসের শখটা শুধু এক ছেলের বউকে দিয়ে মেটাতে চায় নামেমাত্র ভাত-কাপড় দেয়ার বিনিময়ে। সেক্ষেত্রে বউকে পালতে কতটা খরচ হলো, আর বউয়ের কাছ থেকে কতটা পাওয়া গেল, সেই লাভ-লোকসানের হিসাব মেলাতে গিয়ে হিংসা জিনিসটার উদ্রেক হয়। বলাবাহুল্য, স্বভাবতই নিজেদের লাভটা কমিয়ে ও লোকসানটা বাড়িয়ে ধরা হয়। তবে মহিলাদের মধ্যকার পারস্পরিক হিংসার সবচেয়ে কমন কারণটা হলো, একজন নারী নিজের স্বামী, পিতা, ভাই বা ছেলের উপার্জিত সম্পদের উপর নিজের একচেটিয়া ভোগসত্ত্ব বজায় রাখতে চায়, অন্য কোন মেয়েকে ভাগ বসাতে দিতে চায় না। এই হিংসাত্মক মনোভাবটা অধিকাংশ বাঙালি নারীর মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়, আর কারো কারো ক্ষেত্রে এটা জিঘাংসা পর্যন্ত গড়ায়, যা প্রকাশ্য খুন-খারাবি বা গুপ্ত নাশকতার দিকে মানুষকে ধাবিত করে। আবার কোথাও কোথাও ভাই-বোনদের পারস্পরিক হিংসা-হানাহানির রেশটা ভুক্তভোগীর বউ-বাচ্চার উপর পতিত হয়। এসব ক্ষেত্রে ছেলের মা যদি অন্য ভাই-বোনদের বশীভূত হয়ে তাদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হয় এবং শয়তানী কর্মকাণ্ডে শরীক হয়, তখন সেক্ষেত্রে সংকট আরো গুরুতর হয়।
অনেক সময় দাম্পত্য সুখাসুখ নিয়েও হিংসার জন্ম নিতে পারে। কোন মহিলা যদি দাম্পত্য বিষয়ে নিজেকে অসুখী মনে করে এবং সেই তুলনায় অন্য কোন মেয়েকে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুত্রবধূ বা ভ্রাতৃবধূ) সুখী মনে হয়, তখন সেই সুখকে বরবাদ করে দেবার এক পৈশাচিক আকাঙ্ক্ষার উদ্রেক হয়।
উপরে বর্ণিত ওয়েবসাইটে যাদুটোনার কারণ ও মোটিভ হিসেবে হিংসা ও প্রতিহিংসার পাশাপাশি আরেকটা জিনিসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাহলো সামাজিক মর্যাদার লড়াই (social status war)। সামাজিক মর্যাদার উদাহরণ হলো স্বামীর পদমর্যাদা, বাচ্চার পরীক্ষার মেধাক্রম ইত্যাদি। কেউ যদি দেখতে পায়, নিজের দেবর-ভাসুরের ক্যারিয়ার, আর্থিক সামর্থ্য ও সামাজিক অবস্থান নিজের স্বামীর চাইতে উপরে আছে; অথবা দেবর-ভাসুরের ছেলেটা নিজের ছেলের চাইতে অধিক মেধাবী ও ভালো ফল অর্জন করছে; তখন তাকে দাবিয়ে দিয়ে নিজের স্বামী বা সন্তানকে উপরে ধরে রাখার জন্য যাদুটোনার আশ্রয় নিতে পারে। কারো চাকুরি-ব্যবসা বা লেখাপড়ায় আকস্মিক ধস নামলে যাদুটোনার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
মানুষের দাম্পত্য সম্পর্কের উপর নাশকতা, কুদৃষ্টি বা অশুভ কামনাকারীদের চেনার উপায় হলো, তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পথে নানাভাবে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে। একধরনের শাশুড়ী আছে, যারা বউয়ের সাজসজ্জা ও সুন্দর পোশাক দেখতে পারে না। এইশ্রেণির হিংসুক শাশুড়ীরা ছেলেকে পরকীয়া করিয়ে হলেও বউকে জব্দ করতে পারলে খুশি। এছাড়া নিজের অসুস্থতার ভেক করে ছেলে ও ছেলের বউকে রাতে দরজা খোলা রাখতে বাধ্য করাটাও উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিলনে বিঘ্ন ঘটানোরই প্রয়াস। 
যাদুটোনা বা বদনজরের দ্বারা কোন ব্যক্তি, পরিবার বা দম্পতির শক্তি-সামর্থ্য, মেধা, রূপ-যৌবন, সুখ-শান্তি, মিল-মহব্বত ও কর্মক্ষমতা অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক শোষণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করবার ঘটনাও ঘটতে পারে। এসবের দ্বারা দুর্বল ও প্রবীণরা ব্যক্তি শক্তিশালী ও নবীনদের শক্তি-ক্ষমতাকে কেড়ে নিয়ে নবীনদের প্রবীণ বানিয়ে দিয়ে নিজে নবীন হয়ে নবজীবন লাভ করতে পারে। কোন শক্তিশালী নজরক্ষমতাসম্পন্ন ডাইনী বুড়ি যেকোন নবীন দম্পতির খাদ্য, পোশাক ও বিছানার উপর নজর প্রদানের মাধ্যমে তাদের দাম্পত্য ক্ষমতাকে শুষে নিয়ে নিজে বৃদ্ধ বয়সে সুখী দাম্পত্য জীবন লাভ করতে পারে। এর দ্বারা নিজে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভের পাশাপাশি স্বামী বশীকরণের মাধ্যমে ভিকটিম নবীন দম্পতির উপর বাড়তি চাপ আর হয়রানিও আরোপ করাতে পারে। যাদুকারিনী ডাইনীরা কেউ আছে স্বামীকে লাঞ্ছিত, শায়েস্তা ও ব্লাকমেইল করার জন্য যাদুর দ্বারা তাকে ধনে, জনে ও শক্তিতে দুর্বল ও অক্ষম বানিয়ে রাখে। আবার কেউ আছে স্বামীকে বশ করে নিজের পক্ষে ও অন্য কারো বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্যকে সাময়িকভাবে ঠিক থাকতে দিলেও যাদুর দ্বারা এমন কিছু অসুস্থতা ও অক্ষমতা আরোপ করে, যার দরুন স্বামীকে তার সেবার মুখাপেক্ষী থাকতে হয় এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে থাকতে হয়। কিন্তু অর্থের নিয়ন্ত্রণ ও ভোগ-ব্যবহার নিজের হাতে নিতে ব্যর্থ হলে অর্থ-সম্পদ শেষ করে দিতেও কুণ্ঠিত হয় না; আর অর্থ শেষ করা বা হাতিয়ে নেয়ার কাজটি সারতে পারলে তারপর স্বামীকে প্রাণভিক্ষা নাও দিতে পারে।
যাদুটোনাকারী, বদনজরকারী বা যেকোন অনিষ্টকারী কুচক্রীদেরকে ভুক্তভোগীরা চিনতে পারলেও মানুষকে বলতে না পারার কারণে মুখ বুজে সয়ে যেতে হয়। কারণ, এসব বিষয় সাধারণত এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ঘটে থাকে, এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গেলে এমন কারো দিকে ইঙ্গিত এসে যায়, যা রীতিমতো অদ্ভূত ও অপ্রিয় সত্য হয়ে থাকে। সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে, দেখতে শুনতে বেশ সহজ-সরল, মানুষ একনজর দেখে ভাবে ফেরেশতার মত মানুষ, কিন্তু অন্তরে চরম হিংসাত্মক মনোভাবাপন্ন; দেখতে ভেজা বিড়াল হলেও শুধু চোখের নজর দিয়েই মানুষ খুন করে ফেলতে পারে। এদের নিয়ে মুখ খুলতে গেলে রূপকথার গল্পের সেই রাজকুমারের মত বোকা সাজতে ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে, যে কিনা ছদ্মবেশী রাক্ষসীরাণীকে চিনতে পেরে সাক্ষ্য দিয়েছে, “তার রাক্ষসী চেহারা আমি নিজে দেখেছি”, কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করছে না, বরং সবাই কেবল ভাবছে, সে নিছক রাজকুমারীর প্রতি অন্ধ ভালবাসার কারণেই আবোল তাবোল প্রলাপ বকছে, মানী গুণী মানুষগুলোর নামে যা তা বলছে! কালো যাদুকর বলতেই আমরা যে চুলে জটওয়ালা কালো পোশাকধারী জল্লাদের মত চেহারার ভয়ঙ্কর রূপ কল্পনা করে থাকি, তা হয়তো কেবল রূপকথার গল্পের পেশাদার জাদুকরদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; কিন্তু সমাজে ও পরিবারে বিদ্যমান অনিষ্টকারী দুর্বৃত্তদেরকে চেহারা-সুরত ও বেশভূষা দেখে চেনা যাবে না। 
অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাদুটোনা বা বদনজর তাদের দ্বারাই হয়ে থাকে, যাদেরকে দেখতে শুনতে ওরকম মনে হয় না, যাদের পারিবারিক বা সামাজিক অবস্থান সম্মানজনক পর্যায়ে আছে, যাদের নামে ঐ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ কারো কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। বিশেষ করে ভিকটিমের সাথে অনিষ্টকারীর পারিবারিক সম্পর্ক যখন বেশি কাছের হয়, তখন সেক্ষেত্রে এ ধরনের বিষয়ে যেকোন অভিযোগ হাস্যকর ও অবাস্তব বলে সাব্যস্ত হয়। শুধু তাই নয়, একজন চরম অনিষ্টকারী যাদুকর খান্নাসের যাদু, বদনজর বা বড় বড় অনিষ্ট ও হিংসাত্মক তৎপরতার দিকে বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত-ইশারা না করে নিজের চোখে দেখা ও মনে জানা ভয়ঙ্কর সব অপ্রীতিকর বিষয়গুলোকে হাজারো ধাপ শোধন করে শুধুমাত্র সামান্য হিংসা বা অন্যায়-অবিচারের অভিযোগ আনলেই সংশ্লিষ্ট সম্পর্কধারী সংক্রান্ত আবেগটা নিয়ে মাতম শুরু করা হয়। যেমন- সংশ্লিষ্ট হিংসুক ও অনিষ্টকারী ব্যক্তি যদি কারো মা হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে বলা হবে, “যে ছেলে নিজের মায়ের সম্পর্কে এমন জঘন্য ধারণা করতে পারে, সে ছেলে কতইও না হতভাগা!” এ ধরনের ইমোশনাল ব্লাকমেইলের ভয়ে ভিকটিমদেরকে চুপসে থাকতে হয়। অথচ সকলের জানা উচিত, দুনিয়ার সব খারাপ মানুষই কারো না কারো আত্মীয়, কারো না কারো মুরুব্বী। ‘মা কখনো মন্দ হতে পারে না’ টাইপের সরল সমীকরণ মার্কা ব্যাখ্যা দিয়ে সবকিছু উড়িয়ে দেয়া চলে না। পিতা, মাতা বা আত্মীয় হওয়াটাই যদি নিষ্কলুষতার গ্যারান্টি হতো, তাহলে জগতে মন্দ বলে কিছু থাকতো না, সকল মানুষই সৎ, ধার্মিক, হিতাকাঙ্ক্ষী, পরোপকারী ও দয়াশীল হতো। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, যাদু বা বদনজর বাইরের কারো দ্বারা সম্ভব নয়, কেবল ঘরের মানুষেরাই করতে পারে; অথচ ঘরের মানুষের প্রতি অনাস্থা বা অবিশ্বাস প্রকাশ করাটাই সবচেয়ে বেশি কঠিন। অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে যাদুটোনা জিনিসটা হয়ই মূলত কাছের মানুষের দ্বারা, অথচ এই কাছের মানুষ বলেই অনিষ্টকারীদের অনিষ্টের কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না।
বন্ধুবেশে হিতাকাঙ্ক্ষী সেজে অনিষ্ট সাধনকারী কাছের মানুষদের সম্পর্কে একটি ওয়েবসাইটে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে এভাবে, "The point to be noted here is that such activities are usually carried out by envious people around us. They can be our relatives, friends or acquaintances. However, the finger of suspicion never points at such because they cleverly disguise themselves as friends and well-wishers of the victim. So however much the victims may try but they cannot bring themselves to suspect these frenemies. Even if a reliable person reveals the true colors of such frenemies yet the victim will find it hard to believe.  So basically what happens is that the victims are kind of blind-folded by the hypocrisy of the culprits." [সূত্র: http://symptomsofblackmagic.blogspot.com/2014/01/symptoms-of-black-magic-induced_3010.html]
যাদুকরদের চেনা যতই কঠিন হোক, এদেরকে চেনার কিছু লক্ষণ-বৈশিষ্ট্য আছে, যা কোরআন মজীদ থেকে পাওয়া যায়। নিম্নে তা আলোচিত হলো:- 
(ক) মিথ্যা ও পাপাচার: যাদুকররা চরম মিথ্যাবাদী ও পাপিষ্ঠ স্বভাবের হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, "আমি আপনাকে বলব কি কার নিকট শয়তানরা অবতরণ করে? তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের উপর।" (সূরা শুয়ারা: ২২১-২২২) যদিও এ আয়াতটিতে মূলত: আকাশে ওঁত পেতে থাকা গুপ্তচর শয়তানদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহকারী খারাপ জ্যোতিষীদের কথা বোঝানো হয়েছে, কিন্তু যাদুকরদের ক্ষেত্রেও একথা সমভাবে প্রযোজ্য। কারণ, যাদু জিনিসটা মূলত: শয়তানের সাহায্যেই সাধিত হয়। তবে শয়তান যে যাদুকরদের কাছে সশরীরে আগমন করে সহায়তা দেবে এমনটি জরুরী নয়, কিন্তু তাদের পরস্পরের মধ্যে মানসিক ও আধ্যাত্মিক বোঝাপড়া রয়েছে একে অপরের মন্দ কাজে সহায়তার ব্যাপারে। সুতরাং মানুষের মধ্যে শয়তানের সহযোগী তথা অনিষ্টকামী যাদুকরদের চেনা যাবে দুটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখে; তা হলো মিথ্যাচার ও পাপাচার। কারণ, মিথ্যাচারের দ্বারাই মানুষ শয়তানের কাছে আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে থাকে এবং পাপাচারই শয়তান আগমনের অনুকূল ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। বিশেষ করে মিথ্যাবাদিতা আর হিংসা এ দুটো প্রবণতা যদি কারো মধ্যে চরম মাত্রায় একত্রে পাওয়া যায়, তাহলে তার যাদুকর হবার কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলে দেয়া যায়। 
বিভিন্ন দেশে একধরনের নামকরা ও সুপ্রতিষ্ঠিত কাল্ট লিডার দেখা যায়, যারা ধর্মের নামে প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদের লালসা চরিতার্থ করে থাকে। এই শ্রেণির কাল্ট লিডারদেরকে মানুষ গুরু হিসেবে ভক্তি করে এবং এদের একেকজনের আবার লাখো কোটি অনুসারী ও ভক্ত-অনুরাগী থাকে। সম্মোহন, বশীকরণ ও যাদুবিদ্যায় এরা পারদর্শী হয়ে থাকে। এদের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন দুশ্চরিত্রতা ও পাপাচার এবং মিথ্যাচারের সাথে যাদুবিদ্যার সম্পর্ক। 
(খ) কুমন্ত্রণা ও চোগলখুরি: সূরা ফালাকে গ্রন্থিতে ফুঁক দিয়ে যাদু সংঘটনকারিনী ও হিংসুকের অনিষ্ট থেকে এবং সূরা নাসে কুমন্ত্রণাদানকারীর কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, যাদুটোনা আর কুমন্ত্রণা এ দুটো চরিত্রের মধ্যে একটি যার মধ্যে থাকবে, তার মধ্যে অপরটিও থাকবে। কুমন্ত্রণা বলতে ধর্মদ্রোহিতা তথা আল্লাহ, রসূল ও ধর্মের বিরুদ্ধে কুমন্ত্রণা দেয়া, নামায-কালাম তথা ধর্মের কাজ থেকে নিষেধ করা বা ভুলিয়ে রাখা, অশ্লীল ও মন্দ কাজের উৎসাহ দেয়া এবং কোন যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মানুষকে পরস্পরের বিরুদ্ধে উষ্কানী দেয়া ও উত্তেজিত করা সবই বোঝায়। যারা অন্যায় ও অযৌক্তিক বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে উত্তেজিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে প্ররোচিত করে, ভাইয়ে-ভাইয়ে ও পিতা-পুত্রে বিভেদ সৃষ্টি করে, তারা সুযোগ পেলে যাদুটোনা বা যেকোন কৌশলই গ্রহণ করতে পারে। এ ধরনের ব্যক্তিরা স্বভাবে মিথ্যাবাদী, কুচক্রী, হিংসুক ও ধর্মবিদ্বেষী হওয়াতে শয়তান বরাবরই এদের সাথে থাকে এবং এদের যেকোন অশুভ উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। 
কোন মানুষের পূর্বাপর ইতিহাস, ভূমিকা ও কর্মকাণ্ড বিচার করলে সহজেই বিচার করা যায়, তার পক্ষে যাদুটোনা ও কুফরী কাজে জড়িত থাকা সম্ভব কিনা। যারা কুফরী কাজে [অর্থাৎ, মানুষের ধর্ম নষ্ট করার কাজে (যেমন- মানুষকে নামায ও ধর্মকর্ম শিখতে বা পালন করতে বাধা দেয়ার কাজে এবং নোংরা বস্তু খাইয়ে ঈমান ও চরিত্র নষ্ট করবার প্রয়াসে)] সহযোগিতা ও সমর্থন যুগিয়ে থাকে, তাদের পক্ষে কুফরী কালামও করা সম্ভব। যারা নিজেদের কোন উদ্দেশ্য হাসিলে (যেমন- প্রতিপক্ষকে জব্দ করার কাজে) মানুষ শয়তানের সাথে (অর্থাৎ, মানুষকে ধর্মের কাজে বাধা দেয়, ঈমান ও চরিত্র নষ্ট করবার চেষ্টা করে এবং চোগলখুরীর দ্বারা মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে এমন ব্যক্তির সাথে) গাঁটছড়া বাঁধতে পারে, তারা প্রয়োজনে জিন শয়তানের কাছেও নিজেকে বিকিয়ে দিতে পারে। 

যাদুটোনার প্রকারভেদ (Types of Black Magic): There are four ways to make magic and they are: 
(a) Eaten: When magic is done on edible or drinkable substances it will stick inside your stomach like glue, this has no medical explaination but it may cause unexplained swelling and varying digestive problems in a person. ..... When a woman has magic very often it will go to her child and it can cause children to be bad tempered or disobedient and also physically weak. 
(b) Placed in the body: When magic is placed in the body by a Jinn and this causes dysfunctioning of various parts of the body e.g. you can’t understand things at School or you forget things what you have previously understood or to stop a woman from becoming pregnant. 
(c) Symbolic: This means that they take your hair or your photo or your clothes and they make knots or slaughter animals (on it) and bury it in graveyards or well and this is problematic to remove for the practitioner. 
(d) Contact: The fourth way is by contact is many times its by walking and it could be accidental or deliberately placed in your way or could be done on objects e.g. we have seen Magic done on the lipsticks or a scarf of a woman etc. 
[Ref: https://www.central-mosque.com/index.php/Soul/black-magic-and-satanic-influences-protection-a-cure.html (দ্রষ্টব্য: সূত্রে বর্ণিত ওয়েবসাইটে যাদুটোনার প্রকারভেদ বর্ণনার পাশাপাশি প্রত্যেক প্রকারের নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে মূল্যবান নির্দেশিকা রয়েছে। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় এখানে কপি করা হলো না; প্রয়োজনবোধে পাঠক উক্ত লিংকে ভিজিট করে দেখে নিতে পারেন।)] 
এখানে প্রথমে বর্ণিত Eaten তথা ভক্ষিত যাদুদ্রব্যের মধ্যে বদনজরে আক্রান্ত খাদ্যও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। বদনজর দেয়া খাবারও একপ্রকার ভক্ষিত যাদু (eaten magic)। বিশেষ করে বদনজর যখন ইচ্ছাকৃত হয়, তখন সেটা যাদুরই অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে একশ্রেণির তান্ত্রিক গুরু তার কাছে দীক্ষা গ্রহণকারীদেরকে দৃষ্টি দ্বারা কার্য সাধনের প্রক্রিয়া শিক্ষা দান করেন, যার সাহায্যে তারা কোন খাবারের উপর বিশেষ নিয়তে কিছুক্ষণ তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে ঐ খাবারের উপর যাদুক্রিয়া সাধিত হয়। তবে দৃষ্টি প্রয়োগটা এদের নিত্যনৈমিত্তিক পদ্ধতি হলেও মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলে এরা খাবারের উপর সরাসরি উপকরণ ব্যবহার করে যাদু করে থাকে। বিশেষ করে মিষ্টি বা দুগ্ধ জাতীয় খাবারের সাথে শ্মশানের ছাই, পিরিয়ডের রক্ত ইত্যাদি মিশিয়ে খাইয়ে দেয়। 
উপরে বর্ণিত যাদুর প্রকারভেদের শেষেরটিতে Contact তথা মানুষের ব্যবহার্য বস্তুর মাধ্যমে যাদু করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে স্কার্ফ ও লিপস্টিকের কথা বলা হলেও তেল, লোশন এসবের মাধ্যমেও হতে পারে। ভিকটিমের ব্যবহৃত সরিষার তেল বা নারিকেল তেল অরক্ষিত অবস্থায় রেখে গেলে যাদুকর ডাইনীরা দৃষ্টি বা মন্ত্র পড়ে ফুঁৎকারের সাহায্যে ওটাতে যাদু করে রাখে, যেটা মাখা মাত্রই ভিকটিমের উপর ক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এছাড়া এই Contact এর মাঝে বাসস্থানও অন্তর্গত হতে পারে। একজন সুদক্ষ যাদুকর আপনার রুমের কোন নির্দিষ্ট বস্তুর উপর এমন মন্ত্র পড়ে ফুৎকার দিয়ে রাখতে পারে, যাতে করে উক্ত বস্তুটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনা থেকেই যাদু নি:সরণের উপযোগী হয়ে ওঠে এবং নিয়মিতভাবে যাদুর তরঙ্গ উদগীরন করতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, বস্তুটি যদি হয় বিছানা, তাহলে ভিকটিম যখন বিছানায় থাকে (তা সে বসে থাকুক বা শুয়ে থাকুক), তখনই তার যতরকম অসুস্থতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু বিছানা থেকে নেমে গেলে সব ঠিক হয়ে যায়। এমনকি বিছানায় পুরোপুরি ওঠাও লাগে না, বিছানার পাশে মেঝেতে বসে নামাজ পড়াকালে বিছানার সাথে শরীর স্পর্শ করতেই মাথা ঘুরানি বা মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। এমনকি অনেক সময় বিছানার ভিতরেও বিপুলসংখ্যক জিন বিছিয়ে রাখা হয়, যা ওখানে শোয়া মাত্রই কিলবিল করে গায়ে বেয়ে উঠতে শুরু করে। আর বিছানা বা কোন বস্তুর উপর যাদু করে রাখার জন্য যাদুকরকে সবসময় কাছে এসে করার দরকার হয় না, বরং দূর থেকেও জিন পাঠিয়ে করে থাকতে পারে। এমনকি এরকম ঘটনাও হতে পারে যে, একই বিছানায় স্বামীর শয়নের জায়গায় সমস্যা আছে, কিন্তু স্ত্রীর জায়গাতে সমস্যা নেই। সেরকম ক্ষেত্রে স্ত্রী ও তার অনুগত সন্তানদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে হবে। 
Contact এর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও বহুল ব্যবহৃত মারাত্মক বস্তু হচ্ছে তেল। যাদু করা বা যাদু কাটানো উভয় কাজেই তেল এক মোক্ষম অস্ত্র। আপনি কোন জিনিস বা বস্তুর ব্যবহারের দ্বারা যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কিনা তা বুঝতে হলে লক্ষ্য করবেন, কোন বস্তুর ব্যবহারের পর রহস্যজনকভাবে আপনার শারীরিক বা আচরণগত কোন নেতিবাচক ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন অনুভব করছেন কিনা। যদি কখনো আপনার কোন আপনজনের সাথে আকস্মিক দ্বন্দ্ব-কলহ বা ভুল বুঝাবুঝির পরিস্থিতির মুখে পড়েন, তাহলে স্মরণ করে দেখুন, আপনারা উভয়ে সম্প্রতি কোন অভিন্ন বস্তুসামগ্রী ব্যবহার করেছেন কিনা। যেমন- পিতা-পুত্র উভয়ে একই তেল ব্যবহারের পর যদি একজন উন্মাতাল ও অস্বাভাবিক রকমের ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন এবং এর প্রতিক্রিয়ায় অপরজনও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন, তাহলে উক্ত ব্যবহৃত তেলের মধ্যে কুফরী কালাম থাকার সম্ভাবনা খুবই বেশি। 
আমাদের পরিধেয় পোশাকও এই Contact-এর অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত কাউকে টার্গেট করে যখন যাদু করা হয়, তখন তার সমস্ত পোশাক-আশাকের উপরই করা হয়। অনেক সময় দেখা যায়, বিয়ে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বউয়ের লাগেজের ভিতরকার সমস্ত জিনিসের উপরেই বিচ্ছেদের যাদু করে দেয়া হয়।

যাদুটোনার ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা: যাদুটোনায় লিপ্ত ব্যক্তি ও তাদের মোতায়েনকৃত জিন বাহিনী যে কতটা ভয়ঙ্কর, ভয়াবহ ও সর্বগ্রাসী হয়ে থাকে, তা কল্পনা করাও কঠিন। জাতিগত প্রতিহিংসা বা সম্পদের লোভে ভিন্ন দেশ বা জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়া হানাদার বাহিনী কিংবা কোন সন্ত্রাসী গডফাদারের সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডব যতটা ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে; জালেম আগ্রাসী হানাদাররা যেমন প্রতিপক্ষের জনপদে নির্বিচারে গণহত্যা, গণধর্ষণ ও লুটতরাজ চালিয়ে থাকে; কোন যুদ্ধাপরাধী সেনাপতি বা সন্ত্রাসী গ্যাং লিডার নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে আশ্রয় প্রদান বা তার সাথে সম্পর্ক রাখার দায়ে যেমন লক্ষ লক্ষ উলুখাগড়াকে হত্যা করতে দ্বিধা করে না; তেমনি কোন যাদুকর যখন পরিবারের মধ্যে কাউকে নিজের প্রতিপক্ষ গণ্য করে তাকে জিন বাহিনীর দ্বারা শায়েস্তা বা নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সেই ভিকটিমের আপনজন, সহযোগী,  সম্ভাব্য চাকুরিদাতা, ব্যবসায়িক পার্টনার সবাইকে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে সপরিবারে পর্যুদস্ত করার পদক্ষেপ নেয়। কেউ যাদুর ভিকটিমকে যাদু থেকে মুক্তির কাজে সহযোগিতা করুক, অথবা এসবের বিষয় না জেনেও এমনিতে কোন ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক, সে যাদুকরের প্রতিহিংসার শিকার হবেই। যাদুকর ব্যক্তি ও তার অনুগত জিনেরা যদি ভিকটিমকে কারো তরফ থেকে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা, উপকার বা সহানুভূতি লাভের সম্ভাবনা দেখে, তাহলে সেই সম্ভাব্য সাহায্যকারীকে নিমিষে বিনাশ করে দিতে পারে কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে। দেখা যায়, কোন কোন ভিকটিমের নিজের জীবনসঙ্গী ও বাচ্চা, পিতা, দোকানের ম্যানেজার, শ্বশুরবাড়ির আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই যাদুর জিনের অত্যাচারে অতীষ্ঠ ও সর্বস্বান্ত হতে থাকে।
'ময়মনসিংহ গীতিকা' গ্রন্থে সংকলিত লোককাহিনী 'বেহুলা' অবলম্বনে নির্মিত স্টারজলসায় প্রদর্শিত সিরিয়ালে দেখা গেছে, বেহুলার শ্বশুর চন্দ্রধর বণিককে নতি স্বীকারে বাধ্য করানোর জন্য কুচক্রী মনসা নেপথ্য থেকে একের পর এক বাধা-বিঘ্ন ও দুর্ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে। মনসা শুধু চাঁদ সওদাগরের সবগুলো ছেলেকে বাসর ঘরে দংশনপূর্বক হত্যা করেই থেমে থাকেনি, বরং প্রত্যেকটি ব্যবসায়িক কারবারকে পণ্ড করবার জন্য বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। কখনো জাহাজডুবি ঘটিয়ে সকল পুঁজি ধ্বংস করেছে, কখনো ব্যবসায়িক পার্টনারকে মেরে দিয়েছে, কখনো ছদ্মবেশে এসে প্রাসাদ বন্ধক রেখে কিছু টাকা দিয়ে তারপর আবার জাহাজ নির্মাতা কারিগরকে হত্যা করে নিজেই কারিগরের রূপ ধরে এসে সেই টাকাগুলো সব নিয়ে চম্পট দিয়েছে। এটা মূলত যাদুকর ও যাদুর জিনদের কার্যকলাপেরই প্রতিচ্ছবি মাত্র, যা আমাদের সমাজে ঘটে থাকে।
যাদুটোনার আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিরা যে কতটা সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে থাকে, তা আমাদের ধারণার বাইরে। এই মানুষগুলো সমাজে ভদ্রবেশী সজ্জন ও ভেজা বেড়াল সেজে থাকলেও তাদের মন-মানসিকতা খুবই নোংরা এবং কর্মকাণ্ড খুবই বীভৎস। বিশেষ করে যারা দাম্পত্য বিচ্ছেদ ঘটানোর যাদুতে লিপ্ত, তারা স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছেদের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্ত্রীর উপর লম্পট জিন লেলিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয় না, বরং ভিকটিমদের সন্তান-সন্ততির উপরেও নজীরবিহীন অসভ্যতা চালায়; এমনকি শৈশবটাও পার করতে দেয় না।

যাদুটোনার সংক্রামক চরিত্র: পৃথিবীর সবচাইতে বড় সংক্রামক ব্যাধি হচ্ছে এই যাদুটোনা। তান্ত্রিক সিদ্ধ যাদুকরের চোখের নজরে ও হাতের পরশে যেমন একসাথে অনেক মানুষকে অসুস্থ বানানো যায়, তেমনি অনেক মানুষকে যাদুকরে পরিণতও করা যায়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একদিকে ভিকটিমের দুর্ভোগও বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে, অপরদিকে যাদুকরের বংশধররাও যাদুকর হিসেবেই গড়ে ওঠে। যাদুবিদ্যার চর্চাকারীরা তাদের বাচ্চাদের একদম শৈশবকাল থেকেই ক্বলবের গভীরে অবচেতনে এই জিনিসটার বীজ বপন করে দেয়। যাদুকর ডাইনীদের শিশুসন্তানদের দিকে তাকালেও দেখবেন, তাদের কথায় ও আচরণে কোন শিশুসুলভ ভাব লক্ষ্য করা যায় না, সাধারণ শিশুদের দিকে তাকালে যেমন স্নেহভাব জাগে তাদের দেখলে ওরকম জাগে না। এরা হয়ে থাকে চরম অকালপক্ক, বেয়াদব ও আগ্রাসী স্বভাবের। শুনলে অবাক হবেন, যাদুটোনার কাজে এরা সক্রিয়ভাবে পূর্ণ সহায়তা প্রদান করে থাকে। ভিকটিমদের উপর গোয়েন্দাগিরি, নজরদারি, খবরদারি ও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ভিকটিমদেরকে তটস্থ করে রাখে। কি করেন, কেন করেন, এটা কেন করেন, ওটা কেন করেন না— ইত্যাদি প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে রাখে। বিশেষ করে যাদুর অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য ভিকটিমরা যখন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তখন সেটার উপর হামলে পড়ে যাদুকরের ছানাপোনারা। ভিকটিমের বাচ্চার গায়ে তেল মাখা দেখলে বলবে, "তেল কেন মেখেছ? তেল মাখে গাইয়ারা।" ভিকটিম যখন দোয়া-দরূদ পড়বে বা পানি পড়বে বা রুকিয়া করবে, তখন এরা ঠিক সময়মত এসে কৈফিয়ত তলব করবে, "এখানে বসে কী করছেন? আমার নানুকে একটু হেল্প করতে পারেন না?" কোন যাদুকর ডাইনী যখন যাদুটোনায় লিপ্ত থাকবে, কোন খাবারের তরকারির বাটি হাতে নিয়ে চোখ দিয়ে বিষ ঢালতে থাকবে, তখন এই ক্ষুদে ডাইনীরা তাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে না, বরং কেউ তার দিকে তাকিয়ে ওটা লক্ষ্য করলে তাকেই প্রশ্ন করবে, "আপনি কী দেখেন?" অনেক সময় বদনজর প্রদানে অভ্যস্ত ডাইনীরা নিজেরা সরাসরি নজরদানের পরিবর্তে শিশুসন্তানদেরকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে তাদের চোখ দিয়েও এ কাজটা করাতে পারে।
শৈশবকাল থেকে এরা তাদের যাদুকর কাল্ট গুরুর অন্ধ ভক্তরূপে গড়ে ওঠে। কথায় কথায় উঠতে বসতে দোষ ধরা ও গীবতে অভ্যস্ত হলেও শুধু তাদের গুরুর ভণ্ডামি ধরলেই গীবত বিষয়ে জ্ঞান দিতে শুরু করে। এছাড়া হিংসা-বিদ্বেষ, উগ্রতা ও অভদ্রতা, মুনাফেকি ও ধোঁকাবাজি, নিজেরা ধার্মিক সাজা ও অন্যকে বেদ্বীন সাব্যস্তকরণ ইত্যাদি স্বভাবগুলোও একেবারে শৈশব থেকেই বাসা বাঁধতে শুরু করে।
শৈশব অবস্থাতেই যারা যাদুকরদের সহযোগী হয়, তাদের মধ্যে স্বভাবগত কুটিলতা, স্বেচ্ছাচারিতা ও দাম্ভিকতা থাকলেও যাদুটোনায় জড়িত বা সহযোগী হবার কাজটি তারা ওভাবে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে করে না; বরং এসব আচরণ তারা করে থাকে বশীভূত বা Possessed অবস্থায়। তবে এদের মধ্যে যে যাদুটোনার ভাবটা সংক্রমিত হচ্ছে এবং সময়মতো এদেরকে ফেরাতে না পারলে ভবিষ্যত জীবনে যে এরা যাদুটোনারই ধারক-বাহক হবে, দাজ্জালের শিষ্য হবে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তবে যাদুকর ডাইনীরা নিজ নিজ স্বামী-সন্তানকে যাদুর মাধ্যমেই বশীভূত ও আজ্ঞাবহ করে রাখে এবং নিজেদের অন্যায়-অপকর্মে সহযোগী বানিয়ে রাখে। পরিবার-পরিজনকে এই শয়তানী লাইনে ধরে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে গুরুভক্তি। অর্থাৎ, যেই গুরুর কাছে এরা শয়তানী বিদ্যা শেখে, সেই গুরুর প্রতি স্বামী ও সন্তানকে অনুগত করে রাখতে চায়। গুরুর সম্পর্কে সঠিক তথ্য লাভ থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্য স্বামীকে ফেসবুক থেকে বিরত রাখে এবং বাচ্চারা কারো কাছে এসব জানার সংবাদ পেলে তাদের কাছে যাওয়া থেকে বাচ্চাদেরকে ফিরিয়ে রাখে। বাচ্চাদের মনে এসব বিষয়ে প্রশ্ন, অবিশ্বাস বা সন্দেহ জাগ্রত হবার আভাস পেলেই পেরেশান হয়ে ওঠে এবং সম্মিলিতভাবে বাচ্চাদের খাবারের উপর কোয়ানফি (নজরের মাধ্যমে জিন চালান) দিতে শুরু করে। এরকম সময়ে প্রতিপক্ষের খাবারের উপর নজর প্রদান কয়েক দিনের জন্য স্থগিত রেখে হলেও নিজের বাচ্চাদের খাবারের উপর জোরদারভাবে নজর দিতে থাকে।
যাদুটোনার সংক্রামক চরিত্রটা এমনই যে, এর বিস্তার ঘটে একেবারে গুণোত্তর হারে। যেমন- কোন পরিবারে শুরুতে একজন যাদুকর ও একজন ভিকটিম থাকল। কিছুদিন যেতেই যাদুকর তার ভাই-বোনদের মধ্য থেকে একজনকে সঙ্গী বানিয়ে নেবে, ফলে যাদুকরের সংখ্যা দাঁড়াবে দুইয়ে। আবার যাদুকার্যটাও শুধু একজনের উপর সীমাবদ্ধ রাখবে না, বরং প্রথম টার্গেটের সাথে তার জীবনসঙ্গী ও বাচ্চা-কাচ্চাকে যোগ করবে। ফলে ভিকটিমের সংখ্যাও দাড়াবে ২ বা ৩ জনে। এভাবে কয়েক মাস বা বছর খানেক না যেতেই পরিবারের ৫ জন মানুষ যাদুকরে পরিণত হতে পারে, আবার ভিকটিমদের বংশ-গোত্র, শ্বশুরবাড়ি, পরিবারের কর্তা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বা কেয়ারটেকার এমনকি গৃহকর্মীগণ পর্যন্ত যাদুটোনায় আক্রান্ত হয়ে ভিকটিমের সংখ্যা ডজন ছাড়িয়ে যেতে পারে। যাদুকররা শুধু মা-ভাই-বোনদের মধ্য থেকেই সঙ্গী বানিয়ে বসে থাকে না, বরং সন্তান-সন্ততির মধ্যেও এটার সংক্রমণ ঘটাতে শুরু করে। গুরুর মেথডে ব্রেনওয়াশ করে কচি-কাচাদেরকেও নতুন প্রজন্মের যাদুকর হিসেবে গড়ে তোলার বন্দোবস্ত করে। সত্যি বলতে কি, এই যাদু জিনিসটা যে ঘরে ঢোকে, সেই ঘরে এই জিনিসটাকে রীতিমতো একটা কুটির শিল্পে পরিণত করে। পরিবারের মধ্যে ভিকটিমরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে এবং যাদুকররা দুই তৃতীয়াংশ বা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

যাদুর অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক: অনেক মানুষই যাদুর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান। ধর্মে অবিশ্বাসী কথিত বিজ্ঞানমনষ্ক বা মুক্তচিন্তার মানুষই শুধু নয়, ধর্মবিশ্বাসী আধুনিক শিক্ষিত মানুষও অনেকে যাদুর অস্তিত্ব বিশ্বাস করতে চান না। কেউ কেউ আবার মনে করেন, যাদু-টাদু এসব আগের দিনে ছিল, এখনকার যুগে আর ওসবের অস্তিত্ব বা প্রচলন নেই। তবে কোরআনের সূরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে যেহেতু যাদুটোনার উৎপত্তি ও প্রয়োগ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে এবং যাদুটোনার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনার কথা সূরা ফালাক ও নাসে বর্ণিত আছে, সেহেতু ঈমানদারদের জন্য যাদুর অস্তিত্ব অস্বীকার বা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ জাদুটোনার শিকার হলো কিনা, কিংবা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ জাদুটোনায় জড়িত ও লিপ্ত হলো কিনা, অর্থাৎ কে কাকে যাদু করল বা না করল, সেটা নিয়ে মতভেদ হতে পারে; কিন্তু যাদু বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা এবং পৃথিবীর মধ্যে কেউ কারো বিরুদ্ধে এসবের প্রয়োগ ও চর্চা করছে কিনা, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। পৃথিবীতে যেকোন শুভ বা অশুভ জিনিসের উৎপত্তি হলে সেটা আর বিলুপ্ত হয় না, বরং কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকে। আর যাদুর চর্চা যদি নিছক একটা ঐতিহাসিক বিষয়ই হতো, তাহলে কোরআনে এ থেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রার্থনার কথা থাকত না এবং এসবের ইতিহাস গুরুত্ব দিয়েও আলোচিত হতো না। অতএব, কোরআনে বিশ্বাসের দাবিদার ও কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ সম্পর্কে অবগত কাউকে যদি যাদুর অস্তিত্ব অস্বীকার করতে দেখেন, তাহলে বুঝবেন, সে হয় যাদুকারী, অথবা যাদুর শিকার। 

যাদুর শাস্তি বিষয়ে একটি অসম চিন্তাধারা: যাদু বিষয়ক আলোচনায় কোন কোন লেখক যাদুর অপরাধটিকে অনেকটা হালকাভাবে উপস্থাপন করেন এবং শিরককে এক নম্বর ও যাদুকে দুই নম্বর অপরাধ হিসেবে তালিকাবদ্ধ করেন। অথচ যাদুর মধ্যে কুফর ও জুলুম এই দুটি বড় অপরাধ বর্তমান। যাদু করতে গিয়ে যাদুকর আল্লাহর সাথে কুফরী ও ধর্ম অবমাননা করে থাকে এবং সেই সাথে বান্দার হক তথা মানবাধিকার লংঘন করে থাকে। অনেকে যাদুকরের শাস্তি বিধানের ক্ষেত্রে শুধু মুসলিম যাদুকরদেরকে শাস্তিযোগ্য বিবেচনা করেন এবং যাদুর দ্বারা ভিকটিমের মৃত্যুজনিত কারণ ছাড়া অমুসলিমদের যাদুকরদেরকে শাস্তির আওতার বাইরে রাখার অভিমত ব্যক্ত করেন। এর ফলে দেখা যায়, মুসলিমদের মধ্যে কেউ নিছক খেলা ও বিনোদন হিসেবে যাদু প্রদর্শন যা মূলত প্রকৃত যাদু নয়, তা করতে গিয়ে দণ্ডের শিকার হয়, এমনকি যাদুটোনার হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে গিয়ে বা মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে তাবিয ব্যবহারের দায়ে যাদুকর সাব্যস্ত হয়ে দণ্ডিত হয়; অথচ অমুসলিমরা কেউ যাদুর দ্বারা সত্যিকার অর্থে মানুষের বড় বড় ক্ষতি সাধন করেও পার পেয়ে যায়। যাদুর দ্বারা সৃষ্ট অনিষ্টের ব্যাপারটি যেহেতু মানবাধিকারের সাথে সম্পর্কিত, যেহেতু এটা নিছক ধর্মীয় হালাল-হারামের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, সেহেতু এর বিচারের ক্ষেত্রে ধর্মীয় পার্থক্য করার কোন অবকাশ নেই। যাদুর দ্বারা ভিকটিম যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যাদুকারীর উপর ঠিক ততটুকু শাস্তিই প্রযোজ্য হবে- যাদুকারী অপরাধী ও যাদুর শিকার নিরপরাধ ব্যক্তি যে ধর্মেরই হোক না কেন। যাদুকর মুসলিম হলে তার দ্বারা কেউ তেমন কোন ক্ষতির শিকার না হলেও তাকে বড় শাস্তি দিতে হবে, আর অমুসলিম হলে সে কোন দণ্ডই পাবে না- এমনটি ঠিক নয়। কেউ যাতে লঘু পাপে গুরুদণ্ড না পায় আবার গুরু পাপে লঘুদণ্ড বা খালাস না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আরেকটা কথা, শিরকের কাজটা অজ্ঞতাবশতও হতে পারে, অবুঝ সাধাসিধে মানুষের দ্বারাও হতে পারে, কিন্তু যাদুটোনার দ্বারা মানুষের অনিষ্ট সাধনের কাজটি ঠাণ্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে হয়ে থাকে, যে এ কাজ করে সে নিজেও ভালো করেই জানে যে সে অন্যায় করছে। অতএব, শিরককেই যখন tolerate করা হচ্ছে, তখন আর তার তুলনায় ‘লঘুতর’ অপরাধ যাদুকে দণ্ডনীয় করে কী লাভ- এই চিন্তা যুক্তিসঙ্গত নয়। 

বশীকরণ (Subjection): যাদুটোনার উদ্দেশ্য মূলত: মানুষের ক্ষতি করা। এ ক্ষতি শারীরিক, মানসিক ও সম্পদের দিক থেকে হতে পারে; ধর্মীয়, নৈতিক ও পার্থিব দিক থেকেও হতে পারে। আর এই ক্ষতি সাধনের কাজটি যাদুটোনার বাণ সরাসরি ভিকটিমের উপর নিক্ষেপ করবার দ্বারাও হতে পারে, আবার বশীকরণের মাধ্যমেও হতে পারে। বশীকরণ সরাসরি ভিকটিমকেও করা হতে পারে, যাতে ভিকটিম নিজে যাদুকরের ইচ্ছে ও পরিকল্পনা মোতাবেক চলতে গিয়ে বিপদ ও দুরবস্থায় পতিত হয়; অথবা অন্য কাউকে (সাধারণত ভিকটিমের উপর কর্তৃত্বশীল কর্তা বা অভিভাবককে) বশীকরণ করে তাকে ভিকটিমের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা বা লেলিয়ে দেয়া হতে পারে। আবার বশীকরণকৃত ব্যক্তি কর্তৃক ভিকটিমের্ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজটি আপন ক্ষমতাবলে manuallyও হতে পারে, অথবা বশীকরণকৃত ব্যক্তির মাঝে যাদু সঞ্চালন (transfer) বা সংক্রমণ ঘটিয়ে তাকে যাদুটোনার বাহক বা sub-station এ পরিণত করে তার স্পর্শ বা নজরের দ্বারা ভিকটিমকে যাদুটোনা করানো হতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে বশীভূত ব্যক্তি বশকারী ব্যক্তির ইচ্ছা মোতাবেক ভিকটিমের প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়ে নিজেই যাদুটোনা করতে প্রবৃত্ত হয়। এ প্রসঙ্গে ‘Destroy Black Magic’ ওয়েবসাইটের ‘Subjection’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “The person will obey the sorcerer or the person who requested the sorcery with no questions asked. They will not resist or express disagreement to the sorcerer or requester. This kind of sorcery is used in many cases, e.g. to financially exploit someone; a wife who wants to dominate her husband, or vice-versa; a mother who wants to lead her children to happiness; or when a sorcerer wants to use someone to carry out his black magic. This type of black magic can also be combined with the fake love black magic mentioned above.” [সূত্র: http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/] তখন এ কাজটি তার জ্ঞাতসারে ইচ্ছাকৃতভাবেও হতে পারে, আবার অজ্ঞাতসারে অনিচ্ছাকৃতভাবেও হতে পারে। তবে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যেভাবেই করে থাকুক না কেন, তার এ সম্মোহিত ও যাদুগ্রস্ত অবস্থা সবসময় থাকে না, বরং সাময়িকভাবে হয়ে থাকে। এ অবস্থা কয়েক ঘন্টার জন্যও হতে পারে, কয়েক দিনের জন্যও হতে পারে। বশীকরণের আলামত হলো, বশীভূত ব্যক্তি তার বশীকরণ অবস্থা কেটে যাবার পর ঐ অবস্থায় কি কি আচরণ করেছিল, কিরূপ কথাবার্তা বলেছিল, কি ধরনের কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছিল, তার কিছুই মনে রাখতে পারে না। অনেকটা রূপকথার গল্পের রাক্ষসী, ডাইনী বা নাগিনী কর্তৃক বশীভূত রাজা বা রাজকুমারের মত। বশীকরণকৃত বা যাদুগ্রস্ত অবস্থায় মানুষের কথাবার্তা, কণ্ঠস্বর, চালচলন, আচরণ সবই হয়ে থাকে অস্বাভাবিক (abnormal) ও আচ্ছন্ন ব্যক্তির মতো। এ ধরনের বশীকরণ অবস্থা অনেকটা এইরকম:- "যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।" (সূরা বাকারা: ২৭৫) যারা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে অন্যের দ্বারা বশীভূত হয়ে মানুষের উপর অসদাচরণ বা যাদুটোনা করে থাকে, তাদের চালচলন ও গলার স্বরে একটা মাতাল ও উন্মাদের ভাব লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু যারা স্থায়ী শত্রু হিসেবে স্বেচ্ছায় পরিকল্পিতভাবে যাদুটোনা বা কোন পন্থায় মানুষের অনিষ্ট সাধনে নিয়োজিত থাকে, তাদের কথায় বা আচরণে কোন অস্বাভাবিক বা অপ্রকৃতস্থ ভাব প্রকাশ পায় না। 
বিভিন্ন ভ্রান্ত দল ও গোষ্ঠীর সদস্য ও অনুসারীদের মধ্যেও চালচলন, আচরণ, চাহনি ও কথাবার্তায় একপ্রকার অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পায়। বোধগম্য কারণ ছাড়া অল্পতে রেগে যাওয়া, গদবাঁধা শেখানো বুলি বারবার আওড়াতে থাকা এগুলোও অনেকটা বশীকরণ (subjection) ও সম্মোহন (hypnotism)-এরই লক্ষণ।
বিচ্ছেদের যাদুকে সফল করতে সাধারণত ভিকটিমের স্বামীকে বশ করে থাকে শাশুড়ী-ননদেরা। অনেক ক্ষেত্রে আবার ভিকটিমের শ্বশুরকে (অর্থাৎ, যাদুকর ডাইনীদের স্বামী বা পিতাকে) বশ করে ভিকটিমকে স্বামী-সন্তানসহ ঘরছাড়া করার চেষ্টা করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোন মহিলা তার শাশুড়ী-ননদ বা দাদী-ফুপুদের মোকাবেলায় নিজ স্বামী বা পিতাকে নিয়ন্ত্রণ করবার জন্য বশীকরণ বিদ্যা আয়ত্ত্ব করেছে, কিন্তু পরবর্তীতে এ বিদ্যা ব্যবহার করেছে নিজ ছেলে/ভাই, পুত্রবধূ/ভাবী ও নাতি-নাতনি/ভাতিজা-ভাতিজীর মোকাবেলায় নিজ স্বামী বা পিতাকে বশ করার জন্য। আবার এমনও হতে পারে, সংশ্লিষ্ট ডাইনী মহিলারা হয়তো অতীতে কোন টোটকা বা হাতুড়ে যাদুকরের সাহায্যে স্বামী/পিতা বশ করার চেষ্টা করতে গিয়ে উল্টো ফল হয়েছে, নিজ শাশুড়ী-ননদদের বিরুদ্ধে স্বামীকে ক্ষেপাতে গিয়ে নিজেদের প্রতিই স্বামী/পিতা বিরূপ ও উত্তেজিত হয়ে পড়েছে; আর তারপর এরা বড় কোন জ্যোতিষ গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়ে স্বামী/পিতাকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে।
অনেক সময় বশীকরণকে কার্যকর ও অর্থবহ করার জন্য অসুস্থ বানানোর যাদুও করা হয়। এমন মহিলা আছে, যে নিজের স্বামীকে খাবারে বদনজর দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য বানায়, আবার বেলের শরবত বানিয়ে তা সারায়। দাঁত দুর্বল করে দিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেয়, তারপর মাছের কাঁটা বেছে খাওয়ায়। স্বামী কৃতজ্ঞতায় গদগদ হয় এই ভেবে যে, বেচারা নিজে অসুস্থ ও অচল হয়েও আমার ভালোবাসায় কত কষ্ট করে এই মহামূল্যবান খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছে! এমন মেয়েরা আছে, যারা যাদুর বাণ মেরে পিতার নাকের গোড়ায় রক্তপাত ঘটিয়ে তারপর আবার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করে পিতার প্রাণরক্ষা করে, চোখে সমস্যা সৃষ্টি করে চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, ঘাড় ও বাহুতে ব্যথা বানিয়ে আবার ফিজিওথেরাপি করায়। এর মাধ্যমে নিজেদেরকে পিতার জন্য প্রয়োজনীয়, দায়িত্বশীল ও যত্নবান প্রমাণের পাশাপাশি প্রতিপক্ষ ভাই-ভাবীকে দায়িত্বহীন ও অযোগ্য প্রমাণ করা হয়। অনেক সময় অসুস্থতা বানানোর দ্বারা বশীকরণের পাশাপাশি প্রতিহিংসা পূরণ করে নেয়া হয়, যে প্রতিহিংসার কারণ হয়ে থাকে নিজেদের দাবি মোতাবেক ভাই-ভাবী-ভাতিজীকে বহিষ্কার না করা ও আহলাদ দেয়া।
কোন বোধগম্য কারণ ছাড়া কারো প্রতি অতিরিক্ত অনুরাগ বা বিরাগ বশীকরণের নিদর্শন। যে জিনিস আদৌ প্রশংসনীয় বা প্রশংসাযোগ্য নয় সে জিনিসের প্রতি অতিরিক্ত প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া কিংবা যে জিনিস আদৌ নিন্দনীয় নয় তা নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। কারো কথা চোখে দেখার বিপরীত হলেও অন্ধভাবে বিশ্বাস করে মুগ্ধভাবে গুণগান করাটাও বশীকরণের আলামত। যেমন- কারো স্ত্রী কোন একটা তরকারিতে মাছের লেশমাত্র না দিয়েও বলল, তোমার জন্য কষ্ট করে মাছ বেছে তা দিয়ে এটা রান্না করেছি, আর অমনি তিনি সরল মনে বিশ্বাস করে তাতে মাছের স্বাদ অনুভব করতে শুরু করলেন; তাহলে বুঝতে হবে, তিনি বশীকরণেরই শিকার। বশীকরণের প্রভাবে সৃষ্ট এমন অস্বাভাবিক অবস্থার চিত্র দেখা যায় রূপকথার গল্পভিত্তিক টিভি সিরিয়ালে, যেখানে রাক্ষসী রাণী প্রজাপতির কামড় খেয়ে প্রজাপতির মতন উড়তে শুরু করায় তা দেখেও বেচারা রাজা মুগ্ধ হয়ে বলে, "আমার রাণী প্রজাপতি হয়ে গেছে! আমার রাণীকে নিত্য নতুন রূপে দেখতে আমার ভালো লাগে!"
শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে যেকোন নির্যাতিত ব্যক্তিকে যদি দেখেন, নির্যাতনকারী ও উৎপীড়নকারীর প্রতিই অনুরক্ত হচ্ছে এবং হিতাকাঙ্ক্ষী ও উদ্ধারকারীদের প্রতিই বিরক্ত হচ্ছে, তাহলে সেটা ব্রেনওয়াশের পাশাপাশি বশীকরণের নিদর্শন। বশীভূত ব্যক্তিই তার উপর অন্যায়ভাবে জুলুমকারী ব্যক্তি সম্পর্কে ভাবতে ও বিশ্বাস করতে পারে যে, যা করছে, ভালোর জন্যই করছে!
বশীকরণ বিভিন্ন পন্থায় করা হয়। খাদ্য বা পানীয়ের মাধ্যমেও করা হতে পারে, আবার চোখে চোখে রেখে সম্মোহনের মাধ্যমেও করা হতে পারে। কুচক্রীরা যখন কোন পরিবারের কর্তাকে অথবা কোন রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদেরকে নিজেদের পক্ষে ও প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রাখার জন্য সচেষ্ট থাকে, তখন তারা যাদু ও বশীকরণের পাশাপাশি নানান রকমের ছলনা ও কূটকৌশলেরও আশ্রয় নেয়। কাউকে নিজেদের দল বা গোষ্ঠীর দিকে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে হোক, অথবা কাউকে পারিবারিকভাবে নিজের ফেভারে রাখার জন্য হোক, তারা সংশ্লিষ্ট মানুষের দুর্বল দিক খুঁজে বের করে এবং সেই অনুসারে টোপ ফেলে। কার কোন্ দিকে আগ্রহ বেশি, কে কিসে সন্তুষ্ট হয়, কে কিসে বিরক্ত হয়, কে কোন্ জিনিস পেতে চায়, কে কোন্ জিনিস থেকে মুক্ত হতে চায়, কে কি পছন্দ করে, কে কি অপছন্দ করে, কে কাকে ভালোবাসে, কে কাকে ঘৃণা করে— এসব বিষয়কে মাথায় রেখে তারা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে থাকে। টার্গেটকৃত ব্যক্তির প্রিয় জিনিস বা ভালোবাসার মানুষের প্রতি নিজেরা বাহ্যিক সহানুভূতি ও মায়াকান্না প্রদর্শন করে, পারলে এই ব্যাপারে নিজের প্রতিপক্ষের কারো নামে অবহেলা বা উদাসীনতার অভিযোগ উত্থাপন করে। যেমন- বাবাকে পটানোর উপায় হলো দাদীর প্রতি দরদ দেখানো (মেকী হোক, বা আসল), বাবাকে কারো বিরুদ্ধে ক্ষেপানোর উপায় হলো সে দাদীকে দেখতে গেল কিনা তা স্মরণ করিয়ে দেয়া। ধর্মীয় বা আরবী ভাষায় জ্ঞানী কাউকে পটানোর উপায় হলো তার সামনে সারাদিন কোরআন তেলাওয়াত করা, কোরআনের শব্দের ব্যাকরণগত বিষয় নিয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া।
 
বশীকরণ কাদের উপর কার্যকর হয়? এ প্রশ্নের জবাবে আমরা ধরে নিতে পারি, সাধারণত সব মানুষের উপর বশীকরণ কার্যকর হয় না। আপনাকে সেই বশ করতে পারবে, যার প্রতি আপনার মনে ভালোবাসা, দুর্বলতা বা অনুরাগ রয়েছে। আপনার মনে যাকে প্রবেশাধিকার দিয়ে রেখেছেন, সেই মূলত ওখানে প্রবেশ করতে পারবে, আপনার অন্তরের কমান্ড সেন্টারের দখল নিতে পারবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, "তার (শয়তানের) আধিপত্য চলে না তাদের উপর, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন প্রভুর উপর ভরসা রাখে। তার আধিপত্য তো তাদের উপরই চলে, যারা তাকে বন্ধু মনে করে এবং যারা তাকে অংশীদার মানে।" (সূরা নাহল: ৯৯-১০০) যার প্রতি আপনার কোন ভালোবাসা বা আনুগত্য নেই, সে হাতের স্পর্শ বা বদনজরের দ্বারা আপনার অন্যান্য শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হলেও তার প্রতি আনুগত্যের ভাব জাগ্রত করতে পারবে না, এককথায় বশীকরণ করতে পারবে না। তবে আপনাকে উত্তেজিত করবার দ্বারা তার উদ্দেশ্য সাধনের উপযোগী আচরণ ও কার্যকলাপে লিপ্ত করাতে পারবে। আর এই উত্তেজিতকরণের যাদুও মূলত: তাদের উপরই কার্যকর হয়, যাদের অধিকাংশ সময়, কাজকর্ম, চিন্তা-ভাবনা, পেরেশানি ও ব্যস্ততা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা দ্বীনী কাজের তুলনায় দুনিয়াবি বিষয় নিয়ে বেশি হয়ে থাকে; 'আল্লাহর জন্য ক্রোধ ও আল্লাহর জন্য ভালোবাসা' নীতির উপর যারা পুরোপুরি কায়েম নেই। বশীকরণ কার্যকর হবার ক্ষেত্রে বশকারী ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা ও অনুরাগ থাকা জরুরী হলেও ক্রোধ, উত্তেজনা ও বিবাদের উষ্কানী কার্যকর হবার ক্ষেত্রে উষ্কানী বা প্ররোচনাদাতা ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা বা অনুরাগ থাকা জরুরী নয়, বরং আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হওয়া এবং মূল ইবলীস শয়তানের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে (অর্থাৎ, আল্লাহর স্মরণ থেকে সন্তানদের গাফেল রাখার কাজে) জড়িত থাকাই যথেষ্ট। দেখা যায়, বিচ্ছেদের যাদুর শিকার দম্পতির মধ্যে ক্রোধ ও উত্তেজনা সৃষ্টির যাদু তার উপরই বেশি কার্যকর হয়, যার মধ্যে বাচ্চাকে দ্বীনদার বানানোর চাইতে দুনিয়াদার বানানোর আগ্রহ বেশি থাকে। আর যে এমনটি নয়, তার উপর ক্রোধ বা উত্তেজনা সৃষ্টির যাদু খুব একটা ক্রিয়াশীল না হলেও অক্ষমতা ও দুর্বলতা সৃষ্টির যাদু বেশি কার্যকর হয়। 
এখানে আরেকটি কথা উল্লেখযোগ্য যে, যাদুমন্ত্র বা বশীকরণের মাধ্যমে মানুষের মনে কারো প্রতি যে হিংসা বা ক্ষোভ সৃষ্টি করা হয়, তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, বরং ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে। অপরদিকে কুধারণার দ্বারা বাস্তবে যে ভুল বুঝাবুঝি অন্তরে সৃষ্টি হয়, সেটা তুলনামূলক স্থায়ী ও টেকসই হয়ে থাকে। তাই সমাজের কুচক্রী ও অনিষ্টকামী ব্যক্তিরা পরিবারে হিংসা-হানাহানি সৃষ্টির কাজে যাদু ও বশীকরণের পাশাপাশি মৌখিক কুমন্ত্রণার দ্বারাই ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টিকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যেখানে নেতিবাচক ধারণা পয়দা করবার দ্বারা সত্যিকার ভুল বুঝাবুঝি ও হিংসা-বিদ্বেষ সঞ্চার করা সম্ভব, সেখানে তারা তাই করে থাকে। কিন্তু যেখানে এমনটি সম্ভব নয়, সেখানে তারা যাদু ও বশীকরণের উপরই পুরোপুরি নির্ভর করে। বশীভূত সাময়িক অবস্থার সময় কৃত আচরণের ভিত্তিতে পরস্পরের মধ্যে স্থায়ী ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হতে পারে।

সম্মোহন (Hypnotism): সম্মোহন হচ্ছে বশীকরণেরই একটা পদ্ধতি। বশীকরণ হচ্ছে যাদুর একটি অংশ। যাদুটা যখন কাউকে নিজের ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রিত ও বশীভূত করবার উদ্দেশ্যে করা হয়, তখন সেটা বশীকরণ। আর বশীকরণটা যখন মুখের কথা ও দৃষ্টি প্রয়োগের মাধ্যমে করা হয়, তখন সেটাকে বলে সম্মোহন। স্পর্শ ও দৃষ্টির মাধ্যমে যাদু বিষয়ে ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। দৃষ্টি ও কথার দ্বারা কৃত যাদুটাই যখন অন্যকে বশ বা নিয়ন্ত্রণ করবার উদ্দেশ্যে করা হয়, তখন সেটা সম্মোহন।
সম্মোহনে সম্মোহনকারী ব্যক্তি দৃষ্টি বা কথার দ্বারা সম্মোহিত ব্যক্তির ব্রেনকে আচ্ছন্ন ও প্রভাবিত করে নিজের ভাবনাটা তার মস্তিষ্কে ঢেলে দিয়ে থাকে। সম্মোহনকারী ব্যক্তি সম্মোহিতকে যা ভাবতে বলে, সম্মোহিত শুধু তাই ভাবে; যা করতে বলে, সে শুধু তাই করে। যেসকল প্রতিষ্ঠানে ধ্যান বা যোগসাধনা চর্চা হয়, সেসকল প্রতিষ্ঠানে এই সম্মোহনবিদ্যারও চর্চা হয়। অনেক স্থানে মেডিটেশনের নামে মূলত হিপনোটিজমই সম্পন্ন করা হয়। যেসব কাল্ট লিডাররা মানুষকে সম্মোহিত করে থাকে, তাদের কথা ও লেকচার হয়ে থাকে বিশেষ ভঙ্গিতে। তারা ধীরে ধীরে ভাবগম্ভীরভাবে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলে থাকে। এসব গুরুর শিষ্যরাও নিজ নিজ বাচ্চাদের সাথে কথা বলার সময় বিশেষ জলদগম্ভীর কণ্ঠে ধীরে ধীরে বলে থাকে। বাচ্চাদেরকে ডাক দেবার সময়ও এমন ভঙ্গিতে ডাক দেয়, যা বাচ্চার মনে যুগপৎ আতঙ্ক ও আনুগত্যের ভাব জাগিয়ে তোলে।
সম্মোহন জিনিসটা অবশ্য চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। তবে আমার মনে হয়, Medical Hypnotism ও Magical Hypnotism সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। যদিও প্রথমটার কলাকৌশল দ্বিতীয়টাতেও প্রয়োগ করা হয়, কিন্তু শুধু প্রথমটার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং অতিরিক্ত কিছু জিনিসও যোগ করা হয়। ডাক্তারী সম্মোহনে জিন ব্যবহৃত হয় না, কিন্তু যাদুর সম্মোহনে জিন ব্যবহৃত হয়। একজন যাদুকর যখন অন্যকে সম্মোহন করে, তখন নিজের দর্শনকেন্দ্রে ধারণ করা নীল জিনের শক্তিকে (যেটাকে 'নীল কোয়ানফি' বলা হয়) অন্যের দর্শনকেন্দ্রে প্রেরণ করে অন্যকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে, অন্যের কাছে নিজের কাজের স্বীকৃতি আদায় করে, আর সেই সাথে অন্যকে নিজের প্রতিপক্ষের প্রতি বিরূপ করে তোলে, অন্যের চোখে নিজের প্রতিপক্ষকে অকম্মা বা Evil প্রমাণ করে থাকে।
সম্মোহনকারী ও সম্মোহিত ব্যক্তিকে চেনার উপায় কি? যদি কাউকে দেখেন, অন্ধভাবে আরেকজনের বক্তব্যই নিজের মুখ দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে, বিনা বাক্যব্যয়ে ন্যায়-অন্যায় যৌক্তিক-অযৌক্তিক নির্বিশেষে অন্যের সব কথা মেনে নিচ্ছে, অন্যের কণ্ঠে কোরাস গাইছে, তোতাপাখির মত একজনের শেখানো বুলি আরেকজনের মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে— তাহলে বুঝবেন, এখানে সম্মোহন ও বশীকরণের ব্যাপার আছে। সম্মোহন ও বশীকরণ সাধারণত করা হয় স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে, কন্যা কর্তৃক মাতাকে। এমনকি কোন কোন পরিবারে মা কর্তৃক শিশুদেরকেও সম্মোহন করতে দেখা যায়। স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে স্বামীর মা-বোনদের বিরুদ্ধে হতে পারে, বাচ্চাদের বিরুদ্ধে হতে পারে, আবার পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতি/নাতনির বিরুদ্ধেও হতে পারে। কন্যা কর্তৃক মাতাকে মাতার অপর কোন পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতি/নাতনির বিরুদ্ধে হতে পারে। আর মা কর্তৃক শিশুকে হয়ে থাকে কোথাও পিতা, দাদী, চাচা-ফুপু বা ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে; আবার কোথাও মামা-মামী ও মামাতো বোনের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে কোন শিশুর মুখে যদি এমন কোন অকাল পক্ক ও overmatured হিংসাত্মক কথাবার্তা শোনা যায়, যেটা ঐ বয়সের শিশুর মুখ দিয়ে বেরোনোর কথা নয়, তাহলে বুঝতে হবে, তার অভিভাবকরা তার মুখ দিয়ে বলাচ্ছে।
এবার কন্যা কর্তৃক মাতাকে সম্মোহন করার একটি দৃষ্টান্ত পেশ করছি। কন্যা বেশ গম্ভীর দরদী কণ্ঠে ধীরে ধীরে তার মায়ের উদ্দেশ্যে বারবার রিপিট করে বলছে— "মা! তোমার তো এমন অসুখ আগে ছিল না, মা!" এই সম্মোহনের সূত্র ধরে পরে সেই মাকেই নিজ স্বামীর কাছে লবিং করতে দেখা যায়, "আমার তো কোনদিন এত অসুখ ছিল না, আসল কোত্থেকে? নিশ্চয়ই অমুক (নিজের এক ছেলের নাম) নিজের শ্বশুরবাড়ি থেকে কবিরাজি শিখে এসে আমাদেরকে অসুস্থ বানাচ্ছে!" উল্লেখ্য, এখানে প্রকৃত ঘটনাটি ছিল, মেয়ের প্ররোচনায় ঐ মা নিজের পুত্র, পুত্রবধূ, নাতিন এমনকি পুত্রের শ্বশুরবাড়ির মানুষজনের উপর যাদুটোনা করতে গিয়ে ভিকটিমদের রুকিয়ার ফলে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

বদনজর (Evil Eye): হিংসা বা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে কারো সুখ-শান্তি, মিল-মহব্বত, ধন-সম্পদ, শারীরিক সুস্থতা, চেহারার সৌন্দর্য্য ইত্যাদির দিকে তাকানোকে বদনজর বলে। হিংসার বশে প্রদানকৃত যেকোন নজরই বদনজর, আর কারো কোন কিছু দেখে সেটাকে বিশেষ বা অসাধারণ মনে করে বিস্ময় অনুভব করার ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রশংসা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শুভকামনা ছাড়া এটি করা হলে তা বদনজরে পরিণত হয়। এই বদনজর নেহায়েত উদ্দেশ্যহীনভাবে খেয়ালের বশেও হতে পারে, আবার অনিষ্টকামনাবশত উদ্দেশ্যমূলকভাবেও হতে পারে। ইচ্ছাকৃত বদনজর যাদুরই অন্তর্ভুক্ত। 
বদনজর সম্পর্কে একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “An evil eye can happen to anyone, good or bad, and it can affect many different areas of your life: your energy and happiness, your livestock, your home, your business, and other objects. An evil eye usually springs from intense jealousy from another person. For example, you may be happily married, but someone who is jealous may resent you and cast an evil eye on you. As a result, your marriage or household may begin to suffer. 
An evil eye may be purposely placed or unintentionally caused as a result of sending out negative energy toward another person. If you are experiencing drowsiness, bad luck, depression, and other black magic-like symptoms, you may be the victim of an evil eye curse.” [Ref: http://www.breakblackmagic.com/Symptoms
বদনজর বিষয়ে নবীর (সা.) হাদীসে সুস্পষ্ট পিলে চমকানো তথ্য রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বদনজর সত্য, ভাগ্যের চেয়েও আগে বেড়ে যায় এমন কিছু যদি থাকতো, তাহলে অবশ্যই সেটা হতো বদনজর! যদি তোমাদের বদনজরের জন্য গোসল করতে বলা হয় তবে গোসল করে নিও.." (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ) জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আল্লাহর ফায়সালা ও তাক্বদিরের পর, আমার উম্মতের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হবে বদনজরের কারণে!” (আবু দাউদ) জাবের রা. এবং আবু যর গিফারী রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত আর উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়!” (মুসনাদে শিহাব) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “বদনজর মানুষকে উঁচু থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়!” (আহমাদ, তাবারানী) [সূত্র: https://da-dk.facebook.com/16heraralo/posts/415149428823537:0
যাদুল মা'আদ গ্রন্থে ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বদনজর প্রসঙ্গে বলেন, “আল্লাহ মানুষের শরীরে এবং আত্মায় বিভিন্ন প্রকার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। বদনজরের ব্যাপারটা মূলত আত্মিক। কোনো কিছুর প্রতি মুগ্ধতা অথবা হিংসা থেকে অন্তরের এটা সৃষ্টি হয়ে চোখের মাধ্যমে প্রভাব ফেলে। এখানে চোখের শক্তি নেই। এজন্য অন্ধ ব্যাক্তির বদনজরও লাগতে পারে!!!” বদনজরের পদ্ধতি ও মাধ্যম সম্পর্কে উক্ত গ্রন্থে বলা হয়েছে, “বদনজর কখনো যোগাযোগের মাধ্যমে, কখনো সরাসরি দৃষ্টিপাতে, কখনো বদদোয়া বা তাবিজের মাধ্যমে, আবার কখনো ধ্যানের মাধ্যমেও হয়ে থাকে।” [সূত্র: https://www.facebook.com/TalimuddinF/posts/1853720901568058:0
ইমাম বুখারি রহ. যদি জানতেন অমুক ব্যক্তির রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস আছে তাহলে নাকি তাঁর থেকে হাদিস রিওয়ায়েত করতেন না! কারণ তাঁর খাবারের দিকে মানুষের নজর পড়তে পারে, যা স্মৃতিশক্তি দূর্বল করে দিতে পারে... এজন্য হতে পারে হাদিস বর্ণনায় সে ভুল করবে! [সূত্র: http://protectbd.blogspot.com/2017/11/1.html] সর্বোপরি সূরা ফালাকের শেষ আয়াতে বর্ণিত হিংসুকের হিংসাজনিত অনিষ্টের মধ্যেও বদনজর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। 
কিছু মানুষের প্রাকৃতিকভাবেই এমন আত্মিক ক্ষমতা থাকে যে, যে জিনিসের দিকেই বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে দৃষ্টিপাত করবে, সাথে সাথেই তা ছারখার হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে একটি ওয়েবসাইটে বর্ণিত হয়েছে, "Some people have the power of the evil eye such that as soon as they look at something and admire it, it breaks what they see. It is a spiritual effect that cannot be explained by physical laws. Fortunately, such people are few. This admiring look carries jealousy and wickedness. The evil eye can affect a person, a family, a vehicle, a shop, a house or anything else, including small objects." [Ref: http://destroyblackmagic.com/symptoms-overview/symptoms/]
কিছু কিছু মানুষ আছে স্বভাবগতভাবেই হিংসুক ও অনিষ্টকামী। মানুষের সুখ-শান্তি, ভালো, শুভ বা কল্যাণকর কিছু দেখলে এরা অশান্তি বোধ করে; পক্ষান্তরে মানুষের দু:খ-দুর্দশা, আর্তনাদ, অশুভ বা অকল্যাণকর জিনিস দেখলে এরা একপ্রকার বিকৃত সুখ অনুভব করে। উদাহরণস্বরূপ- কোন মা কর্তৃক শিশুকে কোলে নিতে বা আদর করতে দেখলে এরা গাত্রদাহ অনুভব করে, যার বহি:প্রকাশ ঘটে বিদ্রূপ ও সমালোচনার মধ্য দিয়ে; পক্ষান্তরে কোন মা কর্তৃক শিশুকে তুলোধনা করতে দেখলে অন্তরে আনন্দ অনুভব করে, যার বহি:প্রকাশ ঘটে নির্যাতনের সমর্থনে যুক্তি অন্বেষণের মধ্য দিয়ে। শুধু তাই নয়, যেসব মা বাচ্চাকে অকারণে বা অসদুদ্দেশ্যে বীভৎস নির্যাতন করে, তারা এদের কাছে অসম্ভব প্রিয়পাত্র হয়ে থাকে; পক্ষান্তরে যেসব মাকে শিশুর প্রতি একটু সহনশীল হতে দেখে, তারা এদের কাছে অপ্রিয় ও অসহ্য হয়ে থাকে। নিজে শৈশবে মায়ের আদর কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পায়নি বলে চোখের সামনে কোন শিশুর হাসিমুখ এবং মা ও শিশুর পারস্পরিক ভালোবাসা এরা সুনজরে দেখতে পারে না। [অবশ্য সবার প্রতি একরকমের অভিব্যক্তি নাও হতে পারে।] এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ বিকৃতমস্তিষ্ক ব্যক্তিরাই শয়তানের প্রিয়পাত্র হয়ে থাকে, ইবলীসের সাথে এদের আত্মিক বন্ধন স্থাপিত হয়; ফলে এদের বদনজরও হয়ে ওঠে অব্যর্থ গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র। এদের বিদ্বেষ ও অশুভকামনা ১০০% খাঁটি ও নির্ভেজাল হওয়ায় এবং হিংসাটা মাত্রার দিক থেকে তীব্র হওয়ায় এদের নজরের কার্যকারিতাও অতুলনীয়। আরেকটা কথা, আকস্মিকভাবে কৃত তাৎক্ষণিক বদনজর অনিচ্ছাকৃত হলেও পরিকল্পিতভাবে নিয়মিত প্রদত্ত ইচ্ছাকৃত বদনজর মূলত যাদুরই অন্তর্ভুক্ত। মূলত শয়তানের একান্ত আস্থাভাজন ও প্রিয়ভাজন ব্যক্তিরাই ইচ্ছাকৃত বদনজর প্রদানে সফল হয়ে থাকে এবং চোখ দিয়েই বড় বড় প্রাণঘাতী যাদু নিমিষে সাধন করে থাকে।

বদনজরের লক্ষণঃ মুম্বাইয়ের একজন অভিজ্ঞ আলেম মুফতি জুনাইদ সাহেব নজর লাগার অনেকগুলো আলামত বর্ণনা করেছিলেন। যেমনঃ 
১। শরীরে জ্বর থাকা, কিন্তু থার্মোমিটারে না উঠা। 
২। কোনো কারণ ছাড়াই কান্না আসা.. 
৩। প্রায়সময় কাজে মন না বসা, নামায যিকর ক্লাসে মন না বসা। 
৪। প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা। 
৫। চেহারা ধুসর/হলুদ হয়ে যাওয়া। 
৬। বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। 
৭। অহেতুক মেজাজ বিগড়ে থাকা। 
৮। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের সাথে দেখা হলেই ভালো না লাগা। 
৯। মেয়েদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চুল পড়া। শ্যাম্পুতে কাজ না করা। 
১০। পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া। 
১১। বিভিন্ন সব অসুখ লেগে থাকা যা দীর্ঘদিন চিকিৎসাতেও ভালো হয় না। (সর্দিকাশি, মাথাব্যথা ইত্যাদি) 
১২। হাত-পায়ে মাঝেমধ্যেই ব্যাথা করা, পুরো শরীরে ব্যাথা দৌড়ে বেড়ানো। 
১৩। ব্যবসায় ঝামেলা লেগে থাকা। 
১৪। আপনি যে কাজে অভিজ্ঞ সেটা করতে গেলেই অসুস্থ হয়ে যাওয়া। 
[সূত্র: http://protectbd.blogspot.com/2017/11/1.html

নজর লাগার কারণে শরীরে বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা, একাধিক প্রকারের ক্যান্সার, হার্ট এট্যাক (Heart Attack), শ্বাসকষ্ট-হাঁপানি, অবশ হওয়া (Paralysis), বন্ধ্যাত্ব, সুগার (Sugar), ব্লাড প্রেশার, মহিলাদের মাসিক ঋতুর অনিয়ম ও কিছু গোপন রোগ যেমন: মলাশয় (Colon) এবং কিছু মানসিক রোগ ইত্যাদি। [সূত্র: https://d1.islamhouse.com/data/bn/ih_books/single2/bn-altdawy-blqran-walsnaa.pdf

অনিষ্টকারী চেনার উপায়: (১) যেকোন অপরাধী চেনার একটি সহজ উপায় হলো সংশ্লিষ্ট অপরাধ বা অপরাধী সংক্রান্ত আলোচনায় বিব্রত বোধ করা। যারা যাদুটোনা বা অন্য কোন উপায়ে মানুষের অনিষ্ট সাধন করে এবং পরিবারের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদেরকে চেনার উপায় হলো- যে সমস্ত বইপত্র, গল্প-উপন্যাস, ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, টিভি প্রোগ্রাম বা নাটক-সিরিয়ালে এ সমস্ত বিষয় বর্ণিত, আলোচিত বা প্রদর্শিত হয়, সেগুলোতে আতঙ্কিত বোধ করা ও সেগুলোর প্রতি অতিরিক্ত এলার্জিগ্রস্ত হওয়া। নিছক শিশুদের উপযোগী সাধারণ একটা রূপকথার গল্প টাইপের কিছু টিভিতে দেখতে পেলেও এরা জলাতঙ্ক রোগীর ন্যায় আঁতকে উঠবে। বলাবাহুল্য, তাদের এ আতঙ্ক ও আপত্তির প্রকৃত কারণ তারা কখনো প্রকাশ করবে না, বরং তাদের উদ্বেগকে অন্য কোন বিষয়ের আড়ালে প্রকাশ করবে, যাতে করে মানুষের কাছে তাদের উৎকণ্ঠাকে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়। তাদের শয়তানী কর্মকাণ্ড ও অপতৎপরতার চিত্র প্রকাশ হয়ে পড়াটা তাদের আতংকের বিষয় হলেও এগুলোর প্রচার ঠেকিয়ে রাখার জন্য তারা ধর্মের নাম ব্যবহার করবে। ‘বিধর্মীদের জিনিস পড়লে বা দেখলে ধর্ম নষ্ট হয়ে যাবে’- এ টাইপের সরল সমীকরণের আওতায় ফেলে তারা নিজেদের নাশকতা ও অপকর্মের প্রকাশকারী মাধ্যমগুলোকে পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টির আড়ালে রাখা এবং এসবের দর্শকদেরকে বেদ্বীন সাব্যস্ত করার দ্বারা এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করে থাকে; অর্থাৎ নিজেদের দোষ ঢাকা ও অন্যদের দোষী করা উভয় কাজটাই হাসিল হয়। সূরা মুনাফিকূনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তারা প্রত্যেক শোরগোলকে নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে।” 
(২) অপরাধীদের মনে অপরাধ প্রকাশ হয়ে পড়ার ভয় হেতু অথবা জেদ ও হঠকারিতাবশত মাঝেমধ্যে তাদের মুখ দিয়ে ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’ টাইপের কথাবার্তা বের হয়ে আসে। যেমন- “(ভবিষ্যত অনিষ্টের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে) আমি যদি ওখানে যাই, তাহলে আমার নামে বলা হবে যে, আমি তাবীয করেছি।” “(অতীত ও চলমান নাশকতার ক্ষেত্রে) এবার ভাইয়া হয়তো এমন কোন কথা বলবে, যা আমাদের সবারই শুনতে খারাপ লাগবে!” 
(৩) যাদুটোনা বা যেকোন অপরাধ ও অপ্রীতিকর ঘটনার পিছনে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার একটি বড় guiding symptom হলো, সংশ্লিষ্ট কর্ম বা ঘটনার দ্বারা কে বা কারা লাভবান (beneficiary) হয়েছে সেটা দেখা। যেমন- কোন অদৃশ্য যাদুর প্রভাবে কোন বোধগম্য কারণ ছাড়াই কেউ দাম্পত্য জীবনযাপনের ক্ষমতা হারিয়ে বসল। সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্যহানির পর যদি দেখা যায়, তার দুর্বলতাকে কারণ ও অযুহাত হিসেবে দেখিয়ে তার স্ত্রী বড় গলায় জোর গলায় দাপটের সাথে সেই কাজগুলো তার নাকের ডগায় প্রকাশ্য দিবালোকে করতে শুরু করে দিয়েছে, যা সে এতকাল তাকে ফাঁকি দিয়ে তার অনুপস্থিতিতে সেরে নিত, তাহলে তার এ দুরবস্থায় দায়ী ব্যক্তি নির্ণয়ে একরকম রিপোর্ট আসবে। কিন্তু যদি দেখা যায়, তার স্ত্রী ঠিকই যতটা সম্ভব ধৈর্য্য ধরে আছে, আচার-আচরণে মাঝে মধ্যে পাগলামি করলেও কোন ফায়দা হাসিলের পথে যাচ্ছে না; অপরদিকে তার পরিবারের কিছু কিছু মানুষ নিজেদের ভবিষ্যদ্বানী সফল হবার গীত গেয়ে বগল বাজাতে শুরু করেছে, তাহলে এই কেসে আরেক রকম রিপোর্ট আসবে। 
(৪) কোন অপরাধের সাথে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা নিরূপনের আরেকটি লক্ষণ হলো, জেনেশুনে অপরাধের ঘটনা বা এর সাথে সম্পর্কিত বস্তুগুলোর অস্তিত্বকে অস্বীকার করার প্রবণতা। সবাই সব জিনিস নাও জানতে পারে, কিংবা সব জিনিস সবক্ষেত্রে সত্য বা প্রযোজ্য নাও হতে পারে; কিন্তু কারো সম্পর্কে যদি বুঝতে পারেন, সে কোন একটা বিষয় আসলে জানে ও বিশ্বাস করে, কিন্তু কোন কারণে তার অস্তিত্বকে নাকচ করে দেয়, তাহলে সেই বিষয় বা কর্মের সাথে তার সম্পর্ক থাকার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। যাদুটোনা, তাবিজ-তোমার, ঝাড়ফুক ইত্যাদিকে নিছক মূর্খতা, কুসংস্কার বা শেরেকি বলে একবাক্যে উড়িয়ে দেয়া এবং এসবের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার প্রবণতা যাদের আছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের বা নিজের ঘনিষ্ঠ কারো এসবের সাথে সংশ্লিষ্টতা আড়াল করবার জন্যই অস্বীকার করার কৌশলকে ঢালরূপে গ্রহণ করে থাকে। এগুলোকে মিথ্যা বা শেরেকি আখ্যা দেবার দ্বারা এবং শয়তানী যাদুটোনা ও শরীয়তসম্মত দোয়া-তাবিজকে এক কাতারে মাপার দ্বারা একদিকে নিজেদের শয়তানী কর্মকাণ্ডকে ঢেকে রাখা যায়, অপরদিকে এসব শয়তানী অনিষ্ট থেকে মানুষের আত্মরক্ষার উপায়কেও রুদ্ধ করা যায়।
তবে কোন কোন সময় অপরাধীরা সংশ্লিষ্ট অপরাধের অস্তিত্বকে স্বীকারও করতে পারে, যখন চাপার জোরে কথার মারপ্যাঁচে ফেলে ভিকটিমকেই অপরাধী প্রমাণের দরকার হয়। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট অনিষ্ট ও নাশকতা যখন ক্রমাগত ব্যর্থ ও বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন জালেমরা গোপন অনিষ্টের পাশাপাশি ভিকটিমকেই অপরাধী সাব্যস্ত করে দণ্ডিত ও লাঞ্ছিত করবার পদক্ষেপ নেয়। যাদুকর ডাইনীদের অনুগত ও বশীভূত একধরনের মানুষ আছে এতটাই 'জাতে মাতাল, তালে ঠিক' যে, যাদুর অস্তিত্ব এমনিতে বিশ্বাস না করলেও যাদুকর ডাইনীরা যখন নিরপরাধ ভিকটিমের দিকেই আঙ্গুল তোলে, তখন সেটা ঠিকই একবাক্যে বিশ্বাস করে নেয়।
(৫) কোন দম্পতির রুমের দরজা বন্ধ থাকা নিয়ে অতিরিক্ত পেরেশানি ও উদ্বেগ প্রকাশ করা এবং দরজা খোলা রাখানোর জন্য অস্থিরতার সাথে নানান রকম বাহানা তালাশ করা কোন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকারই ইঙ্গিতবহ। সাধারণত নজরদারি করা, যাদুটোনা করা কিংবা কোন কেলেংকারি ঘটিয়ে বা সাজিয়ে ঘরের বউকে অপদস্থ করবার হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা হয়ে থাকে দরজা বন্ধ থাকা।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টির যেকোন প্রবণতাই বিচ্ছেদকামনার নিদর্শন। রুমের দরজা খোলা রাখার দাবি করা, স্বামীকে শহরে একা রেখে স্ত্রীকে গ্রামে শ্বাশুড়ী-ননদের সাথে থাকার আবদার করা ইত্যাদি আচরণ মূলত অনিষ্টকামীরাই করে থাকে।
(৬) আপনার সুখী দাম্পত্য জীবন কাদের পছন্দ নয়, তা বোঝার উপায় হলো, আশপাশের মানুষদের মধ্যে আপনার দাম্পত্য সুখ নিয়ে কারা হিংসা ও বিদ্রূপ প্রকাশ করে থাকে। আপনি বউ নিয়ে খুব সুখে আরামে দিন কাটাচ্ছেন, অথবা বাচ্চাকে খুব আহলাদ দিয়ে দুধে-ভাতে রেখেছেন— এমন একটা অভিব্যক্তি যাদের কথাবার্তায় ও চোখেমুখে দেখতে পাবেন, তাহলে ধরে নেবেন, সুযোগ পেলে তারা আপনার দাম্পত্য সুখের উপর ছোবল মারবে এবং সুখকে কেড়ে নিতে সচেষ্ট হবে।
(৬) অযৌক্তিক হিংসা ও একপেশে মনোভাব পোষণকারীরা মানুষের জন্য বিপজ্জনক ও অনিষ্টকারী হয়ে থাকে। যেমন- পরিবারের কোন কর্ত্রী যদি একই পরিবারের মধ্যে কারো কারো রসনার চাহিদা চাহিবা মাত্র পূরণ করিতে বাধ্য থাকিবে মার্কা আচরণ করে এবং অন্য মানুষকে মেরে কেটে বা নিজের জানপ্রাণ দিয়ে হলেও তাদের শখ আহলাদ পূরণে সর্বদা নিয়োজিত থাকে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ঈর্ষা ও কৃপণতাবশত কৃচ্ছতা ও সংযমের উপদেশ প্রদানের ছলে খাদ্য হতে বঞ্চিত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা ও ধান্ধায় মেতে থাকে, তাহলে এই ধরনের কর্ত্রীদের পক্ষে যাদুকারিনী কিংবা পারতপক্ষে নজরদানকারিনী হবার চান্স বেশি থাকে। 
(৭) শত্রুভাবাপন্ন ব্যক্তিরা যখন গোপন পন্থায় অনিষ্ট সাধনের সবরকম চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, তখন তারা উদ্দেশ্য হাসিলে প্রকাশ্যে হুমকি বা চাপ প্রয়োগ কিংবা আবদার পেশ করতে শুরু করে। যেমন- “তুমি তোমার এই বউকে তালাক দিয়ে দাও, আমরা তোমার জন্য নতুন সুন্দর বউ নিয়ে আসব।” 
(৮) মানুষের গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত খবর জানার ব্যাপারে অযাচিত অনাবশ্যক কৌতুহল কোন কোন ক্ষেত্রে কুমতলবের ইঙ্গিতবহ।
(৯) খাবার আলাদা করা ও আগে খাওয়ার প্রবণতা: যৌক্তিক ও বোধগম্য কারণ ছাড়া কেউ যদি নিজেদের খাবার ও আপনাদের খাবার আলাদা করায় তৎপর থাকে, তাহলে এটা অনিষ্ট সাধনের আলামত। যাদুটোনার ক্ষেত্রে খাদ্য হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। তাই খাবারের মাধ্যমে যারা কারো অনিষ্ট করতে চায়, তারা নিজেদের খাবার রুচির ব্যাপারে মিথ্যা বাহানা দিয়ে হলেও খাবার আলাদা করবেই। [মিথ্যা বাহানার উদাহরণ হলো, আপনি যদি ঝাল রান্না করেন, আপনার প্রতিপক্ষ আবদার করবে, আমি ঝাল খেতে পারি না, আমার জন্য ঝাল ছাড়া আলাদা খাবার চাই। আর আপনি যদি ঝাল কম দিয়ে রান্না করেন, তাহলে বলবে, আমার জন্য আরেকটু ঝাল দিয়ে আলাদা খাবার রান্না করে দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঝাল খেতে না পারার দাবিদার ব্যক্তি ঝাল তরকারি পেলে যতটা খায়, ঝাল ছাড়া তরকারি তার চেয়ে কম খায়, এমনকি বোম্বাই মরিচ ভর্তাও চুরি করে খেতে পারে। শুধু তাই নয়, খাবার রুচির ব্যাপারে বাচ্চাদের দিয়েও মিথ্যা কথা বলাতে পারে; বাচ্চাদের মুখ দিয়ে ঝাল ছাড়া তরকারি খাবার আবদার পেশ করানো হলেও দেখা যায়, বাচ্চারাও কিঞ্চিত ঝাল দেয়া হলে সেটা তুলনামূলক বেশি খেতে পারে।]
যাদুকর ডাইনীরা নিজেদের খাবার ও প্রতিপক্ষের খাবার আলাদা করিয়ে তারপর প্রতিপক্ষের খাবারে ইচ্ছেমতো যাদুমন্ত্র করে দেয়। রান্নাঘরে বা টেবিলে না পারলেও যখন পারে ফ্রিজ খুলে প্রতিপক্ষের খাবার নষ্ট করে রাখে। খাবার আলাদা করানো সম্ভব না হলে রান্না হবার সাথে সাথে নিজেরা তাড়াহুড়ো করে আগে খেয়ে নেয়, তারপর বাকি খাবারটা নষ্ট করে রাখে। তাও যদি সম্ভব না হয়, যদি উভয় পক্ষ একসাথে টেবিলে বসে খাওয়া পড়ে, তাহলে প্রতিপক্ষের প্লেটের উপর চোখ দিয়ে যাদু করে। একশ্রেণির ডাইনী বুড়ি আছে, নিজের খাবার শেষ হলেও বা নিজে পরে খেলেও কোন প্রয়োজন ছাড়াই টেবিলে বসে থেকে মানুষের প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকে। আবার অনেক সময় নিজেরা তাড়াহুড়ো করে নিজেদের খাওয়া-দাওয়া আগে সেরে ফেলে ফ্রি হয়ে তারপর টেবিলে মানুষের খাবার সামনে বসে নিরবচ্ছিন্নভাবে চোখ দেবার কাজে বসে পড়ে। বিশেষ করে রমযানে সেহেরীর বেলায় তারা সবার আগে উঠে কাউকে না ডেকে নিজেরা একা একা খাওয়া-দাওয়া সেরে নেয়, তারপর রিল্যাক্স মুডে টেবিলে বসে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের প্লেটের দিকে বশীকরণ বা মারণ বাণ নিক্ষেপ করে— কাউকে পাশ থেকে তীর্যকভাবে, কাউকে সামনাসামনি।
আবার যদি দেখেন, এরা একবেলার খাবার অন্যবেলায় খেতে চাচ্ছে না, কোন না কোন অযুহাতে (পুরাতন হওয়া বা ঝাল-কমবেশি হওয়া) নিজেরা নতুন রান্না খাবার খেয়ে আগেরটা আপনাদের জন্য বরাদ্দ রেখেছে, তাহলেও বুঝে নেবেন, ওটার মধ্যে কিছু একটা করেছে।
যেসব পরিবারে শাশুড়ী-ননদেরা ডাইনী হয়, সেসব পরিবারে বউ অসুস্থ শরীরে নিজের শরীরের ও বাচ্চার ক্ষতি করে কঠোর পরিশ্রম করে সকলের জন্য খাবার তৈরি করলেও সেই খাবার থেকে নিজে ঠিকমত খেতে পায় না, বাচ্চার মুখেও নির্ভেজাল খাবার তুলে দিতে পারে না, স্বামীকেও খাওয়াতে পারে না; সর্বদা নিজের কষ্টার্জিত টাটকা খাবার নাগিনীদের বিষের মিশ্রণে নষ্ট বানিয়ে খেতে হয় স্বামী-সন্তানকে নিয়ে। 
চোখের যাদু বা বদনজরকারীকে চেনার জন্য দুটি বিষয় লক্ষ্য করবেন। খাবারে চোখ প্রদানের সময় চোখের কালার পরিবর্তিত হয় কিনা। [চোখের কালার সবসময় পরিবর্তিত নাও হতে পারে। যখন গভীর মনোযোগ দিয়ে নজর দেয়া হয় এবং নজরটা বেশি শক্তিশালী ও সিরিয়াস পর্যায়ের হয়, তখন চোখের কিনারার চারপাশে কালার পরিবর্তিত হয়।] আর আপনাদেরকে প্রদত্ত খাবার তারা নিজেরা খেতে রাজি হয় কিনা। যে খাবারে তারা নজর দিয়ে রাখবে, সেই খাবার তাদেরকে ঘাড় ধরেও খাওয়াতে পারবেন না।
একই পরিবারে অবস্থানরত যাদুকরদের হাত থেকে এই খাবারের মাধ্যমে করা যাদু avoid করা খুবই কঠিন। কারণ, যেই খাবারে যাদু করা হয় সেটা জানতে পেরে avoid করতে চাইলেও তারা আবার নতুন কৌশলে ভিকটিমকে যাদুর বস্তু খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করে, যা জানা সত্ত্বেও এড়ানোর উপায় থাকে না। যেমন- যাদুর কারণে ভিকটিম সবজি খাওয়া বন্ধ করলেও তখন আবার হয়তো সকালের নিয়মিত খাবার আলুভর্তাটা বানানোর দায়িত্ব যাদুকর নিজেই নিয়ে নেবে, ভিকটিমের আগেই উঠে গিয়ে সব তৈরি করে ফেলবে। ভিকটিমের পক্ষে সকালের রুকিয়ার আমল বাদ দিয়ে আলুভর্তা বানানোর জন্য আগে উঠে যাওয়া সম্ভব হবে না। এমনকি আলুভর্তাও যদি avoid করেন, শুধু ডিমভাজা দিয়ে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলেও ছাড়াছাড়ি নেই। তখন দেখা যাবে, আপনার আগেই আপনার জন্য ডিম ফ্রিজ থেকে নামিয়ে রেখে দেয়া হবে, আপনাকে আর কষ্ট করে নামাতে হবে না! কাঁচা ডিমের উপরেই যা করার করে রাখবে। আবার কখনো বা পুরানো দিনের এক চিমটি কলাভর্তা নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ানোর জন্য প্রকাশ্যে পীড়াপীড়ি ও আগ্রাসী আচরণ শুরু করবে। খাবার ফেললে যদি কষ্ট লাগে, তাহলে নিজে কেন খেল না? নাকি কষ্ট করে যত্ন করে এমন কিছু তৈরি করেছে, যা শুধু অন্যের জন্যই উপযোগী, নিজের জন্য নয়! আবার অনেক সময় দেখা যায়, যেই পেপে দিয়ে পরিবারের কর্তাকে নিয়মিত মারণ ও বশীকরণ করা হয়, সেই পেপেটাই কর্তাকে দিয়ে ভিকটিমের বাচ্চাকে ডেকে নিয়ে খাওয়ানো হয়; আবার ওটা খাওয়ার ডাকে সাড়া দিতে ভিকটিমের বাচ্চার দেরি হলে যাদুকরের বাচ্চারা এসে চার্জ করতে শুরু করে, মুরুব্বীর ডাকে কেন সাড়া দিচ্ছে না!
কখন কি খাওয়া বা না খাওয়া, কোথাও যাওয়া বা না যাওয়া, কোনটা উপকারী আর কোনটা ক্ষতিকর, সেটাও যাদুকর কুচক্রীরাই নির্ধারণ করে দেয় নিজেদের কর্মকাণ্ডের সুবিধা বিবেচনায়। যাদুকর ডাইনীদের মধ্যে যদি কোন ডাক্তার থেকে থাকে, তাহলে এই হালে পানি দেয়া অনেক সহজ হয়। যেমন- ভিকটিমকে সিদ্ধ ডিম খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে দাওয়াই দেয়া হবে, ভাজা ডিম অপেক্ষা সিদ্ধ ডিম অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। কারণ, প্রথমত সিদ্ধ ডিমটা কুচক্রী ব্যক্তি নিজে বানাচ্ছে, দ্বিতীয়ত যাদু করার কাজে সিদ্ধ ডিম অধিক উপযোগী।
খাবারের যাদু avoid করা সবচেয়ে বেশি কঠিন হয় রমযান মাসে। কারণ, রমযানে খাওয়া-দাওয়ার সময়কাল একেবারে নির্দিষ্ট ও সংক্ষিপ্ত। খাবার সময় আমাদের সামনে যা দেয়া হবে, তাই আমরা খেতে বাধ্য।
(১০) অসুস্থতা বা দুর্ঘটনা ঘটার সাথে সাথে (জানানোর পূর্বেই) খবর নিতে আসা অনেক ক্ষেত্রে ঐ ঘটনায় জড়িত থাকার নিদর্শন। অবশ্য ভালোবাসার মানুষের বিপদের কথা আল্লাহর তরফ থেকে মনের মধ্যে উদ্বেগ আকারে জাগ্রত হওয়াটা এর আওতাভুক্ত নয়। তথ্য যাচাই করতে আসা ব্যক্তির মতিগতি ও আচরণের ধরন দেখে বুঝে নিতে হবে।
আবার এই অসুস্থতা বা আঘাতকে দোয়া ও রুকিয়ার মাধ্যমে কাটিয়ে ফেলার সাথে সাথে কেউ যদি এসে গল্প জুড়ে দিয়ে মনোযোগ ঘুরানোর চেষ্টা করে, তাহলে বুঝবেন, ঐ ব্যক্তিই এই কাণ্ডটা ঘটিয়েছে।
(১১) কাউকে বিশেষ কোন খাদ্য বা পানীয় খাওয়ানোর ব্যাপারে অথবা কোন তেল বা লোশন মাখানোর ব্যাপারে অতিরিক্ত আগ্রহ ও উৎসাহ বশীকরণ বা উত্তেজিতকরণের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টার আলামত।
(১২) যাদুটোনা, বদনজর বা যেকোন কারসাজির মাধ্যমে অনিষ্টকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দুরবস্থার দায়টা আল্লাহর উপর বা অন্য কারো উপর বা অন্য কিছুর উপর চাপিয়ে দিয়ে এর পিছনে নিজেদের অপকীর্তিটাকে আড়াল করার চেষ্টা করে। এর কয়েকটি উদাহরণ হলো:- 
i) আল্লাহর উপর দোষারোপের নমুনা: (a) ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে— "আপনি এখানে না আসলে আপনার পা ভাঙত না, একথার কি কোন মানে আছে? এসব ঘটনা-দুর্ঘটনা সব তো আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়। নইলে বুয়া মরল কিভাবে?" কিংবা, "আমি ওকে মারি বলেই ও অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী হয়েছে, এর কি কোন যুক্তি আছে? মানুষের রোগব্যাধি ও অসুখ-বিসুখ সব তো আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়।" 
(b) ক্ষতির জন্য টার্গেটকৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে (অর্থাৎ, যার ক্ষতি করার লক্ষ্যে তাকে নির্দিষ্ট কোন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাঠানো হচ্ছে বা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত করার দ্বারা যার ক্ষতি করার পরিকল্পনা হচ্ছে)— "শুধু ওখানে গেলেই যে মানুষ মরবে, এমন কি কোন কথা আছে? হায়াত-মউত সব তো আল্লাহর হাতে! অমুকে তো সেখানে যায়নি, সে মরল কিভাবে? কিংবা অমুকে তো ওখানে গিয়েও মরেনি। ইত্যাদি" 
ii) অন্য কারো উপর দোষারোপের নমুনা: যেমন- ইচ্ছাকৃতভাবে চুলার আগুন দাউদাউ করে জ্বালিয়ে রেখে অগ্নিকাণ্ড ঘটার মতন দ্রব্যসামগ্রী ভিকটিমের হাতের কাছে এনে দিয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটানোর পর বলে দেয়া, "অমুকের দায়িত্ব ছিল চুলা বন্ধ করার।"
iii) অন্য কিছুর উপর দোষারোপের নমুনা: যেমন- দৃষ্টি বা স্পর্শ দিয়ে কারো জ্বর বানিয়ে কিংবা অন্য কাউকে জিন দিয়ে possess করে তার দ্বারা স্পর্শ করিয়ে কারো জ্বর বানিয়ে তারপর সেই জ্বরকে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া বা করোনা বলে চালিয়ে দেয়া। অথবা, শিশুর উপর প্রহার ও শারীরিক নির্যাতনজনিত জ্বরকে ভাইরাস জ্বর বলে চালিয়ে দেয়া।
iv) ভিকটিমের বয়স, অবস্থা বা লাইফস্টাইলকে দায়ী করা। যেমন- বয়স হলে তো চুল পাকবেই (চুল পাকার বয়স হোক বা না হোক), রোযার দিনে ক্লাস নিলে তো মাথা ঘুরাবেই, গর্ভাবস্থায় জ্বালাপোড়া হওয়া স্বাভাবিক ইত্যাদি। বিশেষ করে একজন বয়স্ক মানুষ যখন ডাইনীদের যাদুটোনার টার্গেট হয়, তখন তার ঠাণ্ডা ও কোষ্ঠকাঠিন্য সহ যাবতীয় সমস্যাকেই বয়সের দোষ বলে চালিয়ে দেয়া যায়।
v) সংশ্লিষ্ট রোগ, অসুস্থতা বা সমস্যাকে মিথ্যাভাবে স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দেয়া। যেমন- গর্ভাবস্থায় কেউ তলপেটে বা উরুতে জ্বালাপোড়ার শিকার হয়ে সাহায্য বা পরামর্শের মুখাপেক্ষী হলো, আর তাকে বলে দেয়া হলো, গর্ভাবস্থায় এমন জ্বালাপোড়া হওয়া স্বাভাবিক। অবশ্য যদি ডাক্তারী মতে কোন বিষয় বাস্তবেই স্বাভাবিক হয়ে থাকে যা যাদুর বাইরেও হওয়া সম্ভব, সেক্ষেত্রে কারো স্বাভাবিক বলার দ্বারা তার এতে জড়িত থাকা নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
# এখানে উল্লেখ্য যে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার লক্ষ্যে অনিষ্টকারীকে আড়াল করে আল্লাহকে বা অন্য কাউকে দায়ী করে প্রদানকৃত বক্তব্যগুলো অনিষ্টকারী নিজের মুখ দিয়েও প্রকাশ করতে পারে, অথবা অন্য কাউকে দিয়েও বলাতে পারে। সুতরাং বক্তা সবক্ষেত্রে অনিষ্টকারী নাও হতে পারেন, অনিষ্টকারীর মুখপাত্রও হতে পারেন।
(১৩) কারো নেতিবাচক ও অপ্রীতিকর ভবিষ্যদ্বানীকে যদি সত্য প্রমাণিত হতে দেখেন এবং এই সত্য প্রমাণিত হওয়া নিয়ে তাদেরকে গর্ব ও উল্লাস প্রকাশ করতে দেখেন, তাহলে ধরে নেবেন, তারা যাদু বা নজরের মাধ্যমে কিংবা প্রকাশ্য বা গোপনে জ্বালা-যন্ত্রণা দিয়ে অথবা যেকোন ধরনের কারসাজির মাধ্যমে কথিত ভবিষ্যদ্বানীকে বাস্তবায়িত করেছে।
(১৪) কেউ যখন যাদুর মাধ্যমে কারো নির্দিষ্ট কোন ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, তখন হতাশ ও বিক্ষুব্ধ হয়ে ভিকটিমকেই বিশেষ শক্তি বা জ্ঞানের অধিকারীরূপে প্রচার করতে শুরু করে। যেমন- কেউ কোন দম্পতির মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে ব্যর্থ হলে বলবে, বউ নিশ্চয়ই বশীকরণ জানে, তাই স্বামী তাকে ছাড়তে  চায় না। অথবা, বিচ্ছেদের যাদুর অংশ হিসেবে কোন পুরুষ বা নারীর চেহারা নষ্ট করে দেবার পর আল্লাহর রহমতে রুকিয়ার মাধ্যমে যখন চেহারার কদর্যতা একটু দূর হয়ে হারানো চেহারা কিছুটা ফিরে পেতে শুরু করে, তখন যাদুকারীরাই বলতে শুরু করে, এরা নিশ্চয়ই ঝাড়ফুঁক জানে, ঝাড়ফুঁক দিয়েই চেহারার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। 
অর্থাৎ, যাদুকর যখন দেখতে পায়, তাদের যাদু ব্যর্থ হচ্ছে, তখন ভাবে, এরা মনে হয় এসব কাজে আমাদের চেয়েও বড় ওস্তাদ! অথবা, তারা ঠিকই জানে যে, ভিকটিমরা তাদের মত অসৎ, অবৈধ ও জুলুমের পথে যায়নি; কিন্তু জেনেশুনেই অপবাদ আরোপ করে।

যাদুটোনা থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন: যাদুটোনার কাজে যে সমস্ত বস্তু ব্যবহৃত হয়, সে সমস্ত বস্তু সম্পর্কে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। নিজের ব্যবহার্য বস্তু যেমন সুরক্ষিত ও সতর্কাবস্থায় রাখা উচিত, তেমনি নিজের বাড়ির বা রুমের দরজার আশপাশে বা ভিতরে সন্দেহজনক বস্তু দেখলে ত্বরিত পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে আপনার গর্ভাবস্থায় বা যেকোন নাজুক অবস্থায় কারো মধ্যে যদি আপনার কাপড়চোপড় ‘ভুল করে’ নিজের মনে করে বারবার নিয়ে যাবার প্রবণতা দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে সাধু সাবধান! আর সংশ্লিষ্ট ‘ভুলকারী’ ব্যক্তি যদি আপনার প্রতি বিদ্বেষী ও শত্রুভাবাপন্ন হিসেবে ইতিমধ্যে আপনার কাছে বিবেচিত হয়ে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। এছাড়া খাবারের ব্যাপারেও সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। হিংসুকের হাতের কোন খাবার স্পর্শ করবেন না। আর যদি ঘরের খাবার তৈরি ও পরিবেশনের পুরো দায়িত্ব আপনার হাতে থেকে থাকে, তাহলে শত্রুভাবাপন্ন ব্যক্তি বাইরে থেকে কোন খাবারের প্যাকেট নিয়ে আসলে তাতে হাত বা মুখ লাগাবেন না, কোন অযুহাত দিয়ে বিনয়ের সাথে এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন, এ এমন এক জিনিস, যা ল্যাবে নিয়ে রাসায়নিক পরীক্ষা করলেও কোন বিষক্রিয়ার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবেন না, কিন্তু আপনার শরীরের উপর ঠিকই ভালো-মন্দ ক্রিয়া সাধনে সক্ষম। কোন খাবার আপনার প্রতিপক্ষসহ পরিবারের সবাই স্বচ্ছন্দে খেতে পারলেই যে সেটা আপনার জন্যও নিরাপদ হবে- এমন কোন গ্যারান্টি নেই। কারণ, বিষক্রিয়া সব মানব শরীরে কাজ করলেও যাদুটোনার ব্যাপারে সবসময় এমনটি নাও হতে পারে; যাদুটোনা যখন নামে নামে করা হয়, তখন শুধু ওটা সেই ব্যক্তির উপরই কার্যকর হবে, যে ব্যক্তির নাম ধরে মন্ত্রটি পাঠ করা হয়েছে- সে ছাড়া অন্য কেউ খেলেও তাদের উপর ওটার কোন প্রভাব পড়বে না। আর বদনজর থেকে বাঁচার জন্য খাবার-দাবার যথাসম্ভব ঢেকে রাখবেন, ঠিক যেমন সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন মাছির কবল থেকে। সন্দেহজনক হিংসুকদের সামনে খাবার তৈরি বা গ্রহণের কাজ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলবেন। বিশেষ করে নির্দিষ্ট সময়ে আপনার তৈরি যে নির্দিষ্ট খাবারটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যে বা যারা খেতে অস্বীকার করবে এবং সেই একই খাবার তারা আলাদাভাবে তৈরি করে খাবে, সেই খাবারে বদনজর প্রদানের আশংকা প্রবল থাকে। শত্রুভাবাপন্ন ব্যক্তিবর্গের দেয়া খাদ্য, পানীয়, তেল, পোশাক ইত্যাদি ব্যবহার না করাই উত্তম। বিশ্বস্ত পরিচিত লোকজনের প্রস্তুতকৃত ও পরিবেশিত খাদ্য ছাড়া অন্য কোন অজ্ঞাত উৎস থেকে আগত খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না। বাড়িতে কোন খাদ্য এলে তার প্রেরক সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। আবার কেউ যদি আপনাকে কারো জন্য খাদ্য দিয়ে নিজের নাম-পরিচয় বলতে নিষেধ করে, তাহলে সে খাদ্য প্রাপককে প্রদান করা যাবে না। অবশ্য কেউ ইতিমধ্যে যাদুটোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং তা নিরাময়ের উদ্দেশ্যে কেউ খাদ্য দিয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। সেলাইবিহীন কাপড় বা শাড়ি, পানির বোতল, তেলের শিশি ইত্যাদি উন্মুক্ত সাথে হাতের নাগালের মধ্যে রেখে বাইরে যাওয়া যাবে না। সন্দেহভাজন বা সন্দেহজনক আচরণকারী কোন ব্যক্তিকে জ্বর দেখা বা আদর করার ছলে নিজের বা নিজের বাচ্চার শরীর স্পর্শ করার সুযোগ দেবেন না। এদের কাউকে আপনার চোখে চোখ রেখে তাকানোর সুযোগ দেবেন না। কারণ, “Black magic can also be done by touching your body or looking straight into your eyes.” [Ref: http://www.blackmagicsymptoms.com/fqa] এমনকি ফোনের মাধ্যমেও এটি ঘটে থাকতে পারে। (প্রাগুক্ত)
খাবারের ক্ষেত্রে শত্রুভাবাপন্ন বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের দেয়া খাবার যেমন গ্রহণ করা যাবে না, তেমনি খাবার তৈরি বা পরিবেশনের কাজ থেকেও তাদেরকে যথাসম্ভব দূরে রাখতে হবে। আবার জামাকাপড় বা প্রসাধনীর ক্ষেত্রেও তাদের কারো দেয়া উপহার যেমন গ্রহণ করা যাবে না; তেমনি কাপড় তৈরি, ধৌতকরণ, ইস্ত্রি করা ইত্যাদি কাজেও তাদের কাউকে হাত লাগাতে দেয়া যাবে না। শাড়ির কিনারা কেটে নেবার কাজটি কিন্তু সবসময় সঙ্গোপনে হয় না, বরং অনেক সময় ব্লাউজ কেনার ছলে কালার ম্যাচিং করার অযুহাতে প্রকাশ্যে বলে কয়েই নেয়া হয়। এসব ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও রক্ষণশীলতা বজায় রাখতে হবে। তাদের দেয়া কাপড় উপহার হিসেবে গ্রহণও করা যাবে না, আবার নিজের কাপড় তাদের কাউকে ধার দেয়াও যাবে না। 
জামাকাপড়সহ নিজের ব্যবহার্য সামগ্রী শুধু শত্রু বা সন্দেহভাজনদের থেকে দূরে রাখলেই হবে না, বরং সেই সাথে আপনজনদের থেকেও দূরে রাখতে হবে। কারণ, যাদু জিনিসটা করোনা ভাইরাসের চেয়েও সংক্রামক, যা বস্তুর মাধ্যমে ছড়ায়। যেমন- আপনার শাশুড়ী-ননদ যদি আপনার কাপড়ে যাদু করে থাকে, আর আপনি যদি আপনার জামাকাপড় আপনার মা-বোনদেরকে পরতে দেন; অথবা বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে নিজের যাদু আক্রান্ত কাপড় শুকাতে দেন, আর আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন এরা কেউ তা তুলে আনতে গিয়ে হাত দিয়ে স্পর্শ করে; তাহলে তারাও অটোমেটিক যাদুতে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।
যাদুকররা যাদু করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে ভিকটিমের নাম, ঠিকানা, ছবি ও বর্তমান অবস্থান। এর মধ্যে প্রথম দুটি গোপন রাখা সম্ভব নয়, আত্মীয় ও পরিচিতজনদের মধ্যে আপনার শত্রু-মিত্র সকলেই আপনার নাম-ঠিকানা জানবে। কিন্তু হালনাগাদ ছবি ও বর্তমান অবস্থান একটু সচেতন হলেই গোপন রাখা সম্ভব। অযথা ফেসবুকে নিজের ছবি আপলোড দেয়া ও নিজের সর্বশেষ অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা উচিত নয়। যাদের যাদুটোনার সমস্যা আছে, তাদের যেকোন ভ্রমণকালে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ফোনেও নিজেদের প্রকৃত অবস্থান এমন কারো কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়, যাদের কাছ থেকে অনিষ্টকারীরা তথ্য লাভ করতে পারে। এছাড়া শারীরিক ভালো-মন্দ অবস্থা, শারীরিক অবস্থার উন্নতি-অবনতি, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি বিষয়ক তথ্যের ব্যাপারেও যথাসম্ভব গোপনীয়তা বজায় রাখা উচিত। গর্ভাবস্থার কথা যদি অনিষ্টকারীরা জেনেও ফেলে, তথাপি গর্ভাবস্থার সময়কাল ও ডেলিভারির সময়কাল কোনভাবেই তাদেরকে জানতে দেওয়া যাবে না। 
খাদ্য, ব্যবহার্য বস্তু, ছবি ও তথ্য সংক্রান্ত সতর্কতা বিষয়ে উপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইটটিতে যা বলা হয়েছে, তা একনজরে এই:-
* Do not eat or drink any item from anyone unless the person shares that food item with you.
* Black Magic is done using your picture, clothes, hair, nails, blood, saliva, skin tissue & used menstrual pads
* Black magic can also be done using your picture, name and your mother's name hence do not give sensitive information to everyone
নিজেদের যেকোন দুর্বলতা-সবলতা, সাফল্য-ব্যর্থতা, সম্ভাবনা-আশঙ্কার কথা বৈরীভাবাপন্ন ব্যক্তিদের সামনে প্রকাশ করতে নেই। এছাড়া আপনজনদের মধ্যেও যারা এসব বিষয়ে অজ্ঞ বা উদাসীন এবং যে কারো কাছে যেকোন কথা বা তথ্য বলে দিতে পারে, তাদের সাথেও সবকিছু শেয়ার করতে নেই। নিজেদের আয়-ব্যয়, শারীরিক সুস্থতা-অসুস্থতা, পছন্দ-অপছন্দ, খাবারের রুচি, চাকুরীর ইন্টারভিউয়ের তারিখ, ব্যবসায়িক লেনদেনের তারিখ, সফরের সময়সূচি, বাচ্চার পরীক্ষার তারিখ, বাচ্চার মেধা, গর্ভধারণ, ডেলিভারির তারিখ ইত্যাদি ছোট-বড় কোন বিষয়েই সঠিক তথ্য সবার সাথে শেয়ার করতে নেই; বিশেষ করে বৈরীভাবাপন্ন পরিবেশে।
যাদুকারিনীদের পাতা ফাঁদে পা দেয়া থেকে বাঁচবার জন্য ধৈর্য্য ও সহনশীলতাও অবলম্বন করা জরুরী। বিশেষ করে পরিবারে ভাঙ্গন ধরানোর উদ্দেশ্যে কৃত যাদুটোনা থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা ও সচেতনতা খুব দরকার। নিজের জীবনসঙ্গী বা আপনজন কাউকে অস্বাভাবিক বিশ্রী আচরণ করতে দেখলে তার পরিপ্রেক্ষিতে কোন তাৎক্ষণিক হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া চলবে না, বরং এর সম্ভাব্য কারণ ও উৎস খতিয়ে দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ এমনি এমনি উদ্দেশ্যহীনভাবে অবোধগম্য আচরণ করে না। কারণ, আপনজনের সাথে খামাখা বিবাদ করে কারো কোন লাভ নেই। যদি অসঙ্গত আচরণকারীর মধ্যে উক্ত আচরণের পিছনে কোন ফায়দা বা বোধগম্য মোটিভ খুঁজে না পান, তাহলে তৃতীয় পক্ষের স্বার্থ বা উদ্দেশ্য আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা বুদ্ধিমানের কাজ। 

যাদুর প্রবণতা রোধে প্রতিষেধকমূলক সুপারিশ: যাদু করার আকাঙ্ক্ষা বা প্রবণতাই যাতে সৃষ্টি হতে না পারে, সেজন্য নিম্নলিখিত নীতিমালা মেনে চলা যেতে পারে:-
(ক) সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে পার্থিব সাফল্যকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে না শিখিয়ে দ্বীনী ও পারলৌকিক সাফল্যের দিকে আগ্রহী করে তুলতে হবে।
(খ) দ্বীনী সাফল্যের আগ্রহটাও যাতে ভুল পথে চালিত হতে না পারে, বিশেষ করে কোন সন্তান যাতে তান্ত্রিক ও মারেফতি গোষ্ঠীর খপ্পরে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(গ) একাধিক সন্তান-সন্ততি থাকলে পারিবারিক কোন সম্পত্তি কোন একজনের নামে নামকরণ বা নিবন্ধিত করা যাবে না। [অবশ্য হিংসা ও শত্রুতা সৃষ্টি হয়ে যাবার পর আর এটা বাতিল করে লাভ নেই, বরং তাতে হিংসুক ও অনিষ্টকারীদেরকেই পুরষ্কৃত করা হবে।]
(ঘ) নি:সন্তান হয়ে থাকলে অন্য কোন নিকটাত্মীয়কে সম্পত্তির মালিক বা উত্তরাধিকারী করবার চিন্তা করা যাবে না। সমাজে এমন ঘটনাও শোনা গেছে যে, কেউ নিজের সন্তান-সন্ততি না থাকায় ভাইয়ের সন্তানদেরকে নিজের উত্তরাধিকারী মনোনীত করবার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তিনি যাতে আজীবন নি:সন্তান থাকেন সেই ব্যবস্থাই করে দিয়েছে তার ভাই।
(ঙ) রক্ত সম্পর্কের বাইরে কোন বহিরাগতকে নিজেদের ঘরে স্থায়ীভাবে রাখা যাবে না। বিশেষ করে কারো কোন ধর্মভাই বা ধর্মবোনকে ঘরে রাখতে দেয়া যাবে না।
(চ) 'বেস্ট ফ্রেন্ড', 'জান', 'কলিজা' এসব শব্দ থেকে সাবধান! অধিকাংশ সর্বনাশ কিন্তু এদের দ্বারাই ঘটে থাকে। অতিরিক্ত খাতির দেখানো বা অতিরিক্ত ভালবাসার দাবি করা মানুষদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব ও প্রাইভেসি বজায় রাখতে হবে। 

যাদুটোনা প্রতিরোধে নৈতিক পদ্ধতি বনাম অনৈতিক পদ্ধতি: যাদুটোনার কবল থেকে মুক্ত হবার জন্য মানুষ যাদের শরণাপন্ন হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে আবার নানান ধরনের লোক আছে। যাদুটোনার প্রভাব নিবারণে ধর্মীয় দিক থেকে যেমন তাওহীদী পন্থা বনাম শেরেকী-কুফরী পন্থা উভয়ই প্রচলিত আছে, তেমনি নৈতিক দিক থেকে ন্যায়সঙ্গত ও মানবিক পন্থার পাশাপাশি অন্যায় ও অমানবিক পন্থাও অবলম্বিত হয়ে থাকে। এসব পেশায় নিয়োজিতদের মধ্যে যারা মূল অপরাধীকে চিহ্নিত করতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং কোন নিরপরাধ মানুষ বা প্রাণীর ক্ষতিসাধনের প্রক্রিয়া ছাড়া ভিকটিমকে যাদুটোনার কুপ্রভাব থেকে মুক্ত করতে পারে না, তারা সম্ভবত নিজেরাই যাদুটোনার কাজে লিপ্ত থেকে থাকে এবং নিজেদের গোঁমর ফাঁস হবার ভয়েই যাদুর মূল উৎস খুঁজে বের করে তা নিষ্ক্রিয় করার কাজে গড়িমসি করে। অতএব, যারা বান মারা আর বান তোলা দুটোর ব্যবসাই করে থাকে, এসব অনৈতিক দুর্বৃত্তদের পরিহার করে চলা উচিত। যারা ধার্মিকতা, নৈতিকতা ও মানবিকতা বজায় রেখে ধর্মীয় নিয়ম-কানুন মেনে মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়, শুধু তাদের সহায়তাই গ্রহণ করা উচিত। 
কোন কোন সূত্রে আবার কথিত কোন ফেরেশতার নাম ধরে সাহায্য প্রার্থনার মন্ত্র পাওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ফেরেশতাগণ আল্লাহর হুকুম ছাড়া নিজস্ব ইচ্ছাশক্তির বলে কোন কার্য সাধন করতে পারেন না।মুমিন কেবল আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে, তারপর আল্লাহ নিজে সরাসরি হোক বা কোন ফেরেশতা পাঠিয়ে হোক তাকে বিপদমুক্ত করবেন। সরাসরি ফেরেশতাকে ডাকবার কোন বিধান ইসলামে নেই। [অবশ্য পথ চলতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেললে “হে আল্লাহর বান্দারা, আমাকে সাহায্য কর” মর্মে উক্ত স্থানে উপস্থিত ফেরেশতাদের কাছে সাহায্যের অনুরোধ করবার একটি হাদীস আছে, তবে তা অবশ্যই প্রার্থনার ভঙ্গিতে নয়, বরং মানুষ পরস্পরের কাছে সাধারণভাবে যেরূপ সাহায্য চেয়ে থাকে অনেকটা সেরূপ।] অতএব, কোন বিশেষ নামধারী ফেরেশতাকে শক্তিমান বা উদ্ধারকর্তা বলে প্রশংসাপূর্বক তার কাছে দোয়ার ভঙ্গিতে স্তুতিবাক্য ও সাহায্য প্রার্থনা করার যেসব প্রেসক্রিপশন পাওয়া যায়, সেগুলো বর্জনীয়। কারণ, সেখানে মূলত: ফেরেশতার নাম দিয়ে কোন জ্বিনকে তলব করা হয়। 
প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি কথা উল্লেখ করতে চাই, যেটা আমার ব্যক্তিগত নিজস্ব অনুমান মাত্র। সেটা হলো, অতীতকালের মহান ব্যক্তিদের নাম ধরে যে সাহায্য প্রার্থনা করা হয় কিংবা তাদের প্রতিমূর্তি নির্মাণ করে তাদের সমীপে উপাসনা করা হয়, তা মূলত সেই ঐতিহাসিক ব্যক্তিবর্গের কাছে পৌঁছায় না, বরং বর্তমানকালের জিনেরা কেউ কেউ অতীতের মহান ব্যক্তিবর্গের নাম ধারণ করে (অর্থাৎ, তাদের নামে নিজেদের নামকরণ করে) মানুষের কাছে সম্মান, স্বীকৃতি ও প্রার্থনা প্রত্যাশা করে এবং মানুষের কাছ থেকে আরাধনা পেয়ে বিনিময়ে কিছুটা সাহায্য-সহযোগিতা করে নিজেদের কেরামতি ফলায়। এ কারণেই দেখা যায়, আল্লাহর কাছে প্রার্থনার দ্বারা যেমন মানুষের উপকার ও বিপদমুক্তি ঘটে, অন্যান্য উপাস্যের কাছে প্রার্থনার দ্বারাও মানুষের উদ্দেশ্য ও মনষ্কামনা কিছু না কিছু পূর্ণ হয়। এ দেখে বিভ্রান্ত হবার কোন কারণ নেই, কারণ জিনেরাও আল্লাহর একটি মাখলুক হিসেবে মানুষকে সহায়তা করবার কিছু সীমিত ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সাহায্যটাও অদৃশ্য স্থান থেকে আসার কারণে তাদেরকেও মানুষ উপাস্য ভেবে বসে। “অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তা তাদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত।” (সূরা জিন: ৬) বিশেষ করে কোন জিন যদি শয়তান জিন হয়ে থাকে, তাহলে নিজের নামে না হলেও যেকোন গায়রুল্লাহর নামে উপাসনা মানুষকে করাতে পারলেই তার কার্যসিদ্ধি হলো, যেহেতু মানুষকে এক আল্লাহর এবাদত থেকে ফিরিয়ে রেখে জাহান্নামের সহযাত্রী বানানোটাই শয়তানের মূল লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য হাসিলে কিছু পার্থিব সাহায্য ও সুবিধা দিয়ে হলেও মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকে শয়তানেরা। আফ্রিকার একটি মাজারে রুকিয়া (কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে জিনকে হাজির হতে বাধ্য করা) করতে গিয়ে সেখানে তৎপর একটি জিন চক্র ধরা পড়েছিল, যারা কিনা মাজারকেন্দ্রিক অলৌকিক কেরামতি দেখিয়ে মানুষকে কবরবাসী বুযুর্গদের কাছে প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করতো। পরবর্তীতে বাংলাদেশেও এক রোগীর উপর রুকিয়া করতে গিয়ে শাহ পরান (রহ.) পরিচয়ধারী জিন ধরা পড়েছে। 
যাদুটোনার অনিষ্টে আক্রান্ত মানুষেরা স্বভাবতই এ থেকে মুক্তির পথ খোঁজে, ভুক্তভোগী ও সংক্ষুব্ধ মানুষ অনিষ্টকারীকে চেনার ব্যাপারে এবং চিনতে পারলে শায়েস্তা করার ব্যাপারে উদগ্রীব থাকে। এ বিষয়টাকেই পুঁজি করে পেশাদার যাদুকর তান্ত্রিকরা যাদুর ভিকটিমদেরকেও যাদুর দিকে ধাবিত করার প্রয়াস চালায়। যাদুর কবল থেকে মুক্তি ও সুস্থতা লাভ করা এবং অনিষ্টকারী যাদুকরকে শায়েস্তা করবার ক্ষেত্রে কোরআনী পন্থায় না গিয়ে পাল্টা যাদুটোনা করার প্রেসক্রিপশন দেয়। কোনটা বৈধ তদবির আর কোনটা কুফরী যাদু, তা সাধারণ মানুষের জানা না থাকায় অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে এদের ফাঁদে পা দেয়। এছাড়া সাধারণ মানুষ আরবী শব্দ মাত্রই ইসলামী মনে করে বিধায় মঙ্গল-পাঠা মার্কা ঘরের মাঝে লিখিত ‘জারুত’, ‘বারুত’, ‘মারুত’ ইত্যাদি হাবিজাবি সব শব্দকেই ইসলামী তদবির মনে করে বসে। এমনকি কোন কোন তাবিজের কিতাবে ‘ইবলিস’, ‘শয়তান’ ইত্যাদি নামও সুন্দর আরবী অক্ষরে লিখে তদবির হিসেবে গচিয়ে দেয়া হয়। 
ধ্যান বা জ্যোতিষশাস্ত্রের মাধ্যমে যারা চিকিৎসা প্রদান করেন, তাদের কাছেও চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত নয়। যদিও আমরা যাদুটোনার লক্ষণ সম্পর্কে এবং যাদুটোনা কে বা কারা করে সে সম্পর্কে অধিকাংশ তথ্য এসব ওয়েবসাইট থেকেই পেয়েছি, তবুও যেহেতু এ বিদ্যাগুলো যাদুতেও ব্যবহার হওয়া সম্ভব, তাই কুফর-শিরক পরিহারের স্বার্থে এদের সাহায্য গ্রহণ না করাই বাঞ্ছনীয়। যাদুটোনার লক্ষণ সংক্রান্ত ডায়াগনোসিস ও তথ্য লাভের প্রয়োজনে আমরা প্রচুর ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়েছি, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে মাত্র দু'তিনটি ওয়েবসাইটই ইসলামসম্মত, যেখান থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশনা গ্রহণ করা যায়। বাদবাকিগুলো আমরা শুধু তথ্য জানার জন্য অধ্যয়ন করব, চিকিৎসা গ্রহণের জন্য নয়।
যারা শুধুমাত্র কোরআন-হাদীসের দোয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা বা প্রতিকার করে থাকেন, তাদের পরামর্শই কেবল গ্রহণ করতে হবে। অবশ্য কোন ঝাড়ফুঁক বা মন্ত্র যদি শেরেক-কুফর বা শয়তানী থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকে, সেটাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবে কোন বাড়াবাড়ি বা হারাম কাজ কোরআনের আয়াত দিয়ে করা হলেও পরিত্যাজ্য। যেমন- কেউ কেউ নূহ (আ.)-এর বদদোয়াটি দিয়ে বিশেষ পন্থায় শত্রুকে সবংশে নির্মূলের তদবির দিয়ে থাকেন, যা বৈধ নয়। কারণ, শুধুমাত্র যাদুকর অনিষ্টকারীকেই শায়েস্তা করা সঙ্গত, তার শিশুদেরকে নয়। তবে কোন ঘরে সবাই অপরাধী হলে এবং কোন নিষ্পাপ শিশু না থাকলে একান্ত নিরূপায় হওয়া সাপেক্ষে বৈধ হতে পারে। কোরআনের আয়াত দিয়ে মেয়ে পটানোর তদবির করাও বৈধ নয়। যারা কুফরী ও শেরেকী মন্ত্র বা পদ্ধতি suggest করে থাকে, তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। আর যারা কোরআনী তদবির প্রদান করেন, বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত কাজে তাদের সহায়তা ও পরামর্শ নিতে হবে, শুধুমাত্র অন্যায় ও অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। 
সাধারণত যেসব তদবির বা তাবিজে কোন নির্দিষ্ট বস্তু (যেমন- মাটি, বস্ত্রের টুকরা, শরীরের অংশ ইত্যাদি) বা নাম উল্লেখ করার (যেমন- অমুকের পুত্র অমুক) দরকার হয়, সেগুলো কুফর-শেরেক বা যাদুর অন্তর্ভু্ক্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে রোগী বা ভিকটিমের নিজে ব্যবহারের জন্য কোরআনের আয়াত বা দোয়ার দ্বারা খাদ্য, পানি, তেল বা ব্যবহার্য বস্তুতে দম করা বৈধ। শত্রুকে ঘায়েল করবার জন্য যখন শত্রুর শরীরের অংশ (যেমন- চুল, নখ) তলব করা হয়, তখন সেটা বৈধ হবে না। 

মানুষ কেন যাদুটোনার শিকার হয়ঃ যাদুটোনার উৎপত্তি সংক্রান্ত আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, "যদিও কিনা সেটা ব্যবহার করে তারা কারো ক্ষতি করতে পারতো না, যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করতেন।" (আল-বাক্বারাহ: ১০২) মূলত: মানুষ যখন আল্লাহর দ্বীন থেকে গাফেল হয়, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর শাস্তি হিসেবে তাদেরকে নানারূপ ভোগান্তির সম্মুখীন করে দেন। কখনো সরাসরি শাস্তি নাযিল করেন, আবার কখনো কোন শত্রুকে তাদের উপর অত্যাচার বা অনিষ্ট করার সুযোগ দেন। যাদুটোনা মূলত: এরই একটি অংশ। এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে এই লিংকের প্রবন্ধে:- https://quranerkotha.com/baqarah-102-103/ । বনী ইসরাইলের উপর ফেরাউন কর্তৃক আরোপিত অত্যাচার ও দুর্দশাকেও আল্লাহতাআলা আল্লাহর গযব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যা এ আয়াতে বলা হয়েছে, "আর (স্মরণ কর) সে সময়ের কথা, যখন আমি তোমাদিগকে মুক্তিদান করেছি ফেরআউনের লোকদের কবল থেকে যারা তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দান করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদিগকে অব্যাহতি দিত। বস্তুতঃ এটা ছিল তোমাদের উপর তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে আরোপিত এক মহা বিপদ।" (সূরা বাকারা: ৪৯) এখানে দেখা যাচ্ছে, অত্যাচারটা ফেরাউন করলেও প্রকৃতপক্ষে বনী ইসরাইলের কর্মকাণ্ডে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণেই আল্লাহ তাআলা আযাব হিসেবে তাদের উপর এটা নাযিল করেছিলেন, অর্থাৎ ফেরাউনকে তাদের উপর অত্যাচার চালানোর সুযোগ দিয়েছিলেন। 
আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত গযবের আওতায় হোক [যেমন- 'যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমরা তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী' (যুখরুফ ৪৩/৩৬)], কিংবা শয়তানের স্বপ্রণোদিত আগ্রাসন হোক, অথবা কোন অনিষ্টকারী যাদুকর কর্তৃক শয়তান লেলিয়ে দেবার মধ্য দিয়ে হোক, মানুষ মূলত শয়তানের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হবার কারণে। আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফলতির নিদর্শন হলো আল্লাহর এবাদত ও আল্লাহর দ্বীন শিক্ষার পরিবর্তে অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় তুচ্ছ বিষয়ে বেশি মনোযোগী হওয়া। আর সেই সাথে যদি ধৈর্য্য (সবর) ও তাকওয়ার অভাব থাকে, স্বভাবে অধৈর্য্য ও অস্থিরতার ভাব বর্তমান থাকে, অহংকার ও আত্মম্ভরিতায় যদি কেউ অন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে তার মস্তিষ্ক শয়তান অবতরণের উর্বর সমতল ক্ষেত্ররূপে পরিণত হয়। এমতাবস্থায় শয়তানের দ্বারা বশীভূত হওয়া বা অশুভ শক্তির হাতের পুতুলে পরিণত হওয়া সম্ভবপর হয়। "যারা আপন রবের উপর ঈমান আনে ও তাওয়াক্কুল করে, তাদের উপর তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই। তার আধিপত্য তো তাদের উপরই চলে, যারা তাকে বন্ধু মনে করে এবং যারা তাকে অংশীদার মানে।" (সূরা নাহল: ৯৯-১০০) 
মূলত: যাদের কাছে সন্তানদের ক্লাসের পরীক্ষায় প্রথম হওয়া, ইংরেজি উচ্চারণ নিখুঁত হওয়া বা নাচ-গানে পারদর্শী হওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এসবের পিছনেই নিজের ও সন্তানের শতভাগ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে, আর সেই তুলনায় আল্লাহর স্মরণ তথা ধর্মশিক্ষা ও ধর্মচর্চা তাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে থাকে, তাদের উপর আল্লাহ কর্তৃক শয়তান চাপিয়ে দেয়াটাই অনিবার্য- আর এক্ষেত্রে মানুষের অনিষ্ট বা যাদুটোনা ইত্যাদি নিছক উছিলা মাত্র। অতএব, যেকোন অনিষ্ট ও অকল্যাণ থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদেরকে সর্বাগ্রে সপরিবারে আল্লাহমুখী হতে হবে। এর বিকল্প নেই।
যাদু দিয়ে যদি সব মানুষকেই কাবু করা যেত, তাহলে যুগে যুগে যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য ও মানবতার মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে আসছেন, তাদেরকে শত্রুপক্ষ যাদু দিয়েই ধরাশায়ী করে ফেলত, কোনমতেই তাঁরা টিকে থাকতে পারতেন না। তাঁরা মূলত দুনিয়ার লোভ-লালসা থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহর স্মরণে ও আল্লাহর দ্বীনের সেবায় মগ্ন ছিলেন বলেই আল্লাহর রহমতে আপনাআপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব ধরনের অশুভ প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থেকেছেন, এর জন্য তাঁদেরকে আলাদাভাবে ভাবতে হয়নি। তবে আমাদের নবীজীর (সা.) উপর যে যাদুর প্রভাব পড়েছিল, সেটাও ছিল সাময়িক। যাদুর দ্বারা নবীর (সা.) কিছু অসুবিধা সৃষ্টি হলেও তা তাঁকে পরাজিত ও ঘায়েল করতে পারেনি। 
ড. আবদুস সালাম আজাদী "বান-টোনা, জাদু, চালান, বদনজর ও জিনেধরা- লক্ষণ ও প্রতিকার" নামক একটি বইয়ে "বদনজর ও যাদু কাদের উপর পড়ে" এই অনুচ্ছেদের আওতায় যেসব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন, তা নিম্নরূপ:- 
১। যারা বেশি গর্ব করে, অহংকার করে, নিজের কীর্তি বা সম্পদ বা মর্যাদা মানুষকে বেশি বেশি শুনায়, নিজের সন্তানদের নিয়ে সব সময় গর্ব করে বেড়ায়, অন্যকে ছোট করে অপমান করে, লাঞ্জিত করে, কিংবা নিজের কোন নিয়ামত পাওয়ার কথা সব লোকদের সামনে যেয়ে বলে বেড়ায়। 
২। যারা বেশি বেশি নেতৃত্ব চায়, সব কাজেই নিজকে বড় দেখতে চায়, অন্য কেউ বড় হোক সেটা চায়না এদের উপর বদনজর বা যাদু খুব বেশি কাজ করে। 
৩। যে সব সুন্দরী মেয়ে নিজদের সৌন্দর্য প্রচার করতে সব সময় ব্যস্ত থাকে এবং অন্যদেরকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করে। 
৪। যে সব বাচ্চাদের উপর দু’আ না পড়া হয় এবং তাদের প্রতি মানুষকে আকর্ষণের জন্য বেশি বেশি গাল গল্প করা হয়। 
৫। যে সব শরীর নাপাক থাকে, হারাম দিয়ে বড় হয়ে ওঠে এবং সব সময় নোংরামিতে লিপ্ত থাকে। 
[বইটির কিয়দংশ এখানে পাবেন:- https://www.facebook.com/ahmedrashid.bahar/posts/1353067028112774

গোঁদের উপর বিষফোঁড়াঃ যাদুটোনা বা বদনজর বিষয়ে সবচেয়ে মুশকিলের কথাটি হলো, এই ফেতনার ভিকটিমদের দশা হয় 'না পারি সইতে, না পারি কইতে' অবস্থা। কেননা, একেতো এটা একটা গোপন অনিষ্ট এবং তাও আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে (বলতে গেলে প্রায় সকল ক্ষেত্রে) এটি ঘটে থাকে কাছের মানুষজনের দ্বারাই, যাদের বেলায় এসব বিষয় হয় আপনার নিজেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, কিংবা আপনি বিশ্বাস করলেও কাউকে বিশ্বাস করানোটা অবশ্যই অসম্ভব ব্যাপার হবে। আপনি সবকিছু দেখবেন, শুনবেন, জানবেন; আপনার অনিষ্টকারীও বুঝতে পারবে যে আপনি তার মতিগতি ও কার্যকলাপ সবই টের পাচ্ছেন; কিন্তু আপনার শত্রু মূলত: আপনার এই দুর্বলতাটির উপর ভরসা করেই গায়ে বল পাবে যে, আপনি তার দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসা তো দূরের কথা, তার কৃতকর্মের ব্যাপারে আকারে-ইঙ্গিতে কিছু বোঝাতে গেলেও আপনার নিজেকেই বোল্ড হতে হবে- পরিবারে ও সমাজে বিদ্রূপের পাত্র হয়ে পড়বেন। এমতাবস্থায় যাদের কাছ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও ক্রোধের শিকার হবেন তাদের কথা নাহয় বাদই দিলাম, আপনার প্রতি সবচাইতে নমনীয় ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণটিও বড়জোর এই হতে পারে যে, আপনার মানসিক রোগের উত্তম চিকিৎসার সুব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর মামলা করার বিষয়টি তো মাথায়ই আনতে পারবেন না! মনে করুন, “তুমি আমাকে যাদু করেছ” বা “অমুকে আমাকে যাদু করেছে” এই কথাটি মুখ ফুটে বলার পর কেউ কি আপনাকে সুস্থ-স্বাভাবিক মনুষ্য রূপে গণ্য করবে? কেউ প্রকাশ্যে আপনার দিকে লাঠি-বল্লম নিয়ে তেড়ে আসলে তাকে আপনি সহজেই মোকাবেলা করতে পারবেন, কেউ আপনাকে গালিগালাজ করলে তাও আপনি মৌখিকভাবে কিছু পাল্টা কথা শোনাতে পারবেন, কিন্তু যাদুটোনা বা যেকোন গোপন অনিষ্টের ক্ষেত্রে নিজে থেকে পাল্টা কিছু করা বা বলা সম্ভব নয়। আবার অনিষ্টকারীর সাথে আপোষ-মীমাংসা ও সমঝোতা করে অনিষ্ট থেকে রেহাই পাবেন- সেই সুযোগও এক্ষেত্রে থাকে না। কোন ছিনতাইকারী প্রকাশ্যে আপনার সামনে চাকু ধরে আপনার কাছ থেকে কিছু কেড়ে নিতে চাইলে টাকার ব্যাগটা দিয়ে দেবার বিনিময়ে প্রাণরক্ষার সুযোগ থাকে। কোন শক্তিশালী রাষ্ট্র কোন দুর্বল রাষ্ট্রের উপর যুদ্ধের হুমকি বা অবরোধ আরোপ করলে সেখানেও আলাপ-আলোচনা করে ছাড় দিয়ে দাবি মেনে নিয়ে কিছুকাল অবকাশ লাভের সুযোগ হয়তো থাকতে পারে। কিন্তু যখন সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ হাতে নেবার উদ্দেশ্যে কেউ আপনার বিরুদ্ধে যাদুটোনা বা যেকোন ধরনের গোপন অনিষ্ট করবে, তখন সেই সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েও নিষ্কৃতি লাভের সুযোগ আপনার নেই। কারণ, আপনার বিরুদ্ধে সংঘটিত অনিষ্ট ও বিপর্যয়গুলো অদৃশ্য থেকেই ঘটছে, কেউ এর দায় স্বীকার করছে না, ফলে আপনাকে এসব থেকে অব্যাহতি প্রদানের গ্যারান্টিও কেউ দেবে না। যাদুটোনা ও বদনজর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর কালামের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। 
যাদু ও অনিষ্টের শিকার ব্যক্তিদের চুপ থেকেও শান্তি নেই। অনিষ্ট ও নাশকতাকারীদের সম্পর্কে যদি কোন উচ্চবাচ্য নাও করে, তবুও উল্টো নিজেরা দোষী সাব্যস্ত হতে হয়। যে ব্যক্তি কুফরী কালাম ও বদনজরের দ্বারা আপনাকে বউ-বাচ্চাসহ ধুকে ধুকে মারার চেষ্টায় সর্বদা ব্যস্ত, সেই ব্যক্তির সামান্য পায়ে ব্যথা হলে আপনি তার সাহায্যে দৌড়ে যেতে অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হলেও আপনাকে অবহেলা ও হৃদয়হীনতার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে। অথচ তার সেই পায়ে ব্যথাটাও হয়ে থাকে আপনাদের ক্ষতি করতে গিয়েই। হিংসুক ও অনিষ্টকারীদের প্রতি আপনার মনের ক্ষোভ বা অসন্তোষের খবর আপনার পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা জানতে পারলে আপনাকে উদারতা ও ক্ষমাশীলতার বাণী শোনানো হবে। আপনাকে উপদেশ দেয়া হবে, “কারো কথায় বা ব্যবহারে যদি কোনদিন কোন দু:খ পেয়ে থাক, তাহলে সেটা ক্ষমা করে দেয়াই তো ইসলামের আদর্শ”। পরিকল্পিত অব্যাহত সার্বক্ষণিক হত্যাচেষ্টা ও বিচ্ছেদের যাদুর শিকার মানুষের কাছে এ ধরনের একপেশে উপদেশবাণী যে কতটা বিরক্তিকর ও পীড়াদায়ক, তা কেবল ভুক্তভোগীই বুঝবেন। "আমার দ্বারা কারো কোন ক্ষতি না হয়, কেউ যেন কোন কষ্ট না পায়"— এ বিষয়ে সতর্ক থাকার উপদেশ কখনো যাদুকরদেরকে দেয়া হয় না, বরং শুধু যাদুর ভিকটিমদেরকেই দেয়া হয়। এমনকি স্বয়ং অপরাধী ডাইনীর মুখেও চড়া গলায় উপদেশবাণী শোনা যাবে, “বাচ্চাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করা চলবে না।” অথচ ভুক্তভোগীরা জানে, এই ব্যক্তি বাচ্চাদের মাঝে শুধু বৈষম্য করেই ক্ষান্ত হয় না, বরং কুফরী কালাম ও বদনজরের দ্বারা সার্বক্ষণিকভাবে শিশুহত্যার চেষ্টায় লিপ্ত। নিজেরা জেনেশুনে মিথ্যা ও অন্যায়ের উপর পুরোদমে প্রতিষ্ঠিত থাকার পরও তাদের মুখেই সতর্কবাণী শোনা শুনতে হবে, “সর্বদা সোজা পথে থাকবে, কখনো বাঁকা পথে যাবে না।” যাদুটোনার ভিকটিমদের জন্য যাদুজনিত শারীরিক, মানসিক ও সম্পর্কগত ক্ষতির পাশাপাশি free extra bonus হিসেবে যা পাওয়া যাবে তা হলো, শারীরিক ও মানসিক কষ্ট হেতু যাদুকর ও অনিষ্টকারীদের প্রতি easy হতে ও সাদর সম্ভাষণ জানাতে না পারার কারণে নিজেদেরকেই হিংসুক ও সংকীর্ণমনা হিসেবে সাব্যস্ত হতে হবে পরিবারে ও সমাজে। মানুষ ভাববে, এরাই মানুষের সাথে মানিয়ে চলতে শেখেনি, এদের মধ্যে কোন উদারতা ও ভালোবাসা নেই, মানুষকে আপন ভাবা বা আপন করে নেবার যোগ্যতা নেই। যেহেতু আপনি সরাসরি তাদের মূল অপকর্মের বিষয়ে ইঙ্গিত-ইশারা করতে পারছেন না, শুধুমাত্র বড়জোর শত্রুপক্ষের বাহ্যিক হিংসাত্মক আচরণের কথাই উল্লেখ করছেন, সেহেতু যাদুকর ডাইনী বুড়িই জোর গলায় আপনাকে নসীহত শোনাবে, "অতীতের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মনে ক্ষোভ পুষে রাখতে নেই।" অর্থাৎ, কার্যত মানুষের সামনে এটাই প্রকাশ পাবে যে, তারা বেশ উদার ও বন্ধুপরায়ণ, আর আপনারাই তুচ্ছ বিষয়ে ক্ষোভ পোষণকারী। এমনকি নিজেদের দু:খ-কষ্টে মানুষের সংশ্লিষ্টতা জানতে না পারলেও বা জানতে পেরেও এ ব্যাপারে কোন ক্ষোভ বা অভিযোগ প্রকাশ না করলেও অনিষ্টকারীরা ঠিকই ধরে নেবে যে, আমরা যা করেছি তাতে আর ভিকটিমরা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা বা আমাদেরকে স্বত:স্ফূর্তভাবে খুশিমনে সাদরে বরণ করে নেবার কথা নয়। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অনিষ্টকারীদের আগমনে শুধু মনে মনে অসুবিধা বোধ করলেও তাদের নামে পরিবারের কর্তাব্যক্তি ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে যেই information যাবে তা হলো, “এরা আমাদেরকে বোঝা মনে করে, আমাদের মেয়েদের আগমনকে ভালো চোখে দেখে না।” শুধু তাই নয়, মানবসৃষ্ট শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে একটু দম ফেলার জন্য সাংসারিক কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে দু’তিন ঘন্টার জন্য বাইরে থাকলেও আত্মীয় মহলে দেখানো হবে, “কত বড় হৃদয়হীন মেয়ে! নিজের বুড়ো শাশুড়ীকে ফেলে রেখে দুই টাকা দামের চাকুরী করে। এসব না করে অসহায় শাশুড়ীকে একটু হেল্প করলেও তো পারে!” মোটকথা, কুচক্রী শয়তানরা যার অনিষ্ট সাধনে বদ্ধপরিকর হয়, তার বিরুদ্ধে নাশকতা এবং রাজনৈতিক চালবাজি ও কূটনৈতিক তৎপরতা একই সাথে যুগপৎ চালাতে থাকে। এমনও দেখা গেছে, খাবারে নাশকতার মাধ্যমে শিশুহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে যাদুকর ডাইনীরা সম্মিলিতভাবে পরিবারের কর্তার কাছে উল্টো নিজেরা দুর্ব্যবহারের শিকার হবার মনগড়া অভিযোগ দায়ের করেছে এবং পরিবারের কর্তাও সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিযোগের ভিত্তিতে ভিকটিমদেরকেই দোষী সাব্যস্ত করে বসে আছেন, খুনীদের দু:খেই সমবেদনা জানাচ্ছেন, নিজের ডাইনী পিশাচিনী কন্যাকেই মজলুম ও অবহেলিত ভেবে তার প্রতিই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন। অথচ সেই কথিত দুর্ব্যবহার বলতে বিষাক্ত প্রাণঘাতী শরবতের গ্লাসে চুমুক দেয়া থেকে নিজেদের বাচ্চাকে ফিরিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছুই ভিকটিমদের স্মরণে নেই। তাদের দেয়া খাদ্য বা পানীয় Avoid করার কারণে যদি তারা নিজেদেরকে অপমানিত মনে করে থাকে, তাহলে সৎসাহস থাকলে নিশ্চয়ই সেটা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতো। প্রকৃত কারণটা উল্লেখ না করে অনির্দিষ্টভাবে দুর্ব্যবহার ও অবহেলার অভিযোগ করা থেকেই প্রমাণিত হয়, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ ছিল।
ভেবে দেখুন, ইসলামী আইনে যারা চরম শাস্তিযোগ্য, যেই ভয়ঙ্কর অপরাধীদেরকে আল্লাহর দুনিয়ায় বাঁচিয়ে রাখাটাই জায়েয নেই, উল্টো সেই দুর্বৃত্তদের আনুগত্য ও খেদমতে ত্রুটি হবার অভিযোগে নিরপরাধ সরলমনা মানুষদেরকেই যখন লাঞ্ছিত ও কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয় এবং সেই সমস্ত জালেমদের বড় গলায় উদ্ধত আস্ফালন চোখের সামনে দেখে যেতে হয়, সেটা কতটা অসহনীয় ও দু:সহ ব্যাপার! বিশেষ করে কোন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে যদি এই সমস্ত আল্লাহদ্রোহী মানবতাবিরোধী ব্যক্তিরা বরণীয় ও বিশ্বস্ত হিসেবে স্বীকৃত হয়, অপরদিকে আল্লাহর মজলুম ও ভিকটিম বান্দারা ধিকৃত ও কালপ্রিট সাব্যস্ত হয়, তাহলে এটা মেনে নেয়া আরো কষ্টকর বৈকি! 
একজন যাদুকর যেহেতু হিংসুক, স্বার্থপর ও চালাক-চতুর হয়ে থাকে, তাই সে দরকারি কাজগুলো যথাসম্ভব যাকে সে হিংসা করে বা প্রতিপক্ষ মনে করে তাকে দিয়েই করে থাকে, নিজে কাজের তুলনায় অকাজই বেশি করে; কিন্তু কাজের সুনামটা নিজের পকেটে নিয়ে নেয়, আর অকম্মা হবার বদনামটা ভিকটিমের অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেয়। কিন্তু এই অকাজের অংশ হিসেবে খাবার-দাবার নিয়ে অযথা হাতানো ও নাড়াচাড়া করলেও পরিবারের মুরুব্বী ও আত্মীয়-স্বজনরা মনে করে, বেচারী বুঝি কাজ করতে গিয়ে ও সংসারের ঘানি টানতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অপরদিকে যার ক্ষতি করতে গিয়ে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, জালেমের অসুস্থতাকে সেই মজলুম ব্যক্তির অবহেলা ও উদাসীনতার ফল হিসেবেই গণ্য করা হয়। ভিকটিমকে অসুস্থ বানিয়ে রেখে ও কাজের সময় বাণ মেরে কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে অকম্মা, দায়িত্বহীন ও উদাসীন প্রমাণ করা হয়; জালেমরাই অসুস্থতার ভেক করে মানুষের sympathy বাগিয়ে নেয়। ভিকটিমের বাচ্চাকে অসুস্থ বানিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়— দেখো, এরা নিজেদের বাচ্চাকে আমাদের বাচ্চাদের সাথে খেলতে দিচ্ছে না, বাচ্চাদেরকেও হিংসা করে, বাচ্চাদের মাঝেও পার্থক্য করে, হিংসা-বিদ্বেষ শেখায়! আর এ অসুস্থ বানানোর কাজগুলো তারা সময়মতই করে, ঠিক যে সময় করলে ভুক্তভোগীদেরকে শারীরিক-মানসিক-কূটনৈতিক সবদিক থেকে নাজেহাল করা যাবে।
মোটকথা, যাদুকর ডাইনীরা সবসময় অপরাধী ও অনিষ্টকারী হয়েও অসাধারণ বাগ্মিতা, দৃঢ় মনোবল, প্রো-অ্যাকটিভ দৃষ্টিভঙ্গি আর সম্মোহনী ক্ষমতার জোরে তাদেরকে কখনো জড়তা বা সঙ্কোচ অনুভব করতে হয় না, বরং চোর বা চোরের মা হয়েও তারা সর্বদা নি:সঙ্কোচে বড় গলায় কথা বলতে পারে। প্রচারণার ক্ষেত্রেও যাদুকররাই সবসময় আক্রমণাত্মক অবস্থানে থাকে, আর ভিকটিমদেরকেই রক্ষণাত্মক অবস্থানে থাকতে হয়। ভিকটিম একদিকে যাদুর বাণে জর্জরিত হওয়া এবং অপরদিকে সংসারের সকল কাজ করার পরও মুরুব্বী ও আত্মীয় মহলে যাদুকর ডাইনীর অনুকূলেই খবরের শিরোনাম হবে- "বেচারীর কাজে কোন বিরাম নাই, সবসময় শুধু কাজ আর কাজ করতেই থাকে, আর সংসারের সব কাজ করতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে!" এসব প্রচারণা শুনে মানুষ জালেমকেই ভিকটিম ভাবতে থাকে এবং ভিকটিমকেই মুরুব্বীর প্রতি উদাসীন ও দায়িত্বহীন মনে করে। অথচ আড়ালের খবরটি হলো, এরা অসুস্থ হয়ে থাকলেও সেটা কেবল কুফরী ও শয়তানী কাজ করতে গিয়েই হয়ে থাকে। এদের সংসারের কাজ বলতে শুধু খাবারের পাত্র হাতিয়ে নজর লাগানো ছাড়া আর কিছুই নেই।
যেসব ক্ষেত্রে যাদুকর ডাইনীরা পারিবারিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকে, ক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে মজবুত অবস্থানে থাকে, সেসব ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ্যে ভিকটিমকে দেখিয়ে দেখিয়ে চোখ দিয়ে নজর মারতে থাকে। উদ্দেশ্য, ভিকটিমরা যদি নিরূপায় হয়ে কোন অভিযোগ করে বসে, তখন কুধারণা ও অবিশ্বাসের দায়ে তাদেরকে বোল্ড আউট করা যাবে। আর ভিকটিমরা যদি ধৈর্য্য ধরে থাকে এবং প্রকাশ্য প্রতিবাদের পরিবর্তে আল্লাহর রহমতে দোয়া ও প্রার্থনার দ্বারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তখন ভিকটিমের অনুসৃত রুকিয়া পদ্ধতির দিকে ইঙ্গিত করে ভিকটিমকেই যাদুকর ও বদনজরকারী সাব্যস্ত করা হয়। এরকম পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ না করে জড়তা প্রদর্শন করলে ভিকটিমকে যাদুতে লিপ্ত থাকার দায়ে বোল্ড আউট করা যাবে, আর আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রয়োজনে নিজের আমলের প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অপরাধীর দিকে ইঙ্গিত করলে কুধারণা ও অবিশ্বাস প্রকাশের দায়ে ক্যাচ আউট করা হবে।
সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার ঘটে তখনই, যখন যাদুকর ডাইনীদের পক্ষ থেকে ভিকটিমদেরকেই তন্ত্র-মন্ত্র ও যাদুটোনার অপবাদ দেয়া হয় এবং অনিষ্টকারীরাই ভিকটিম বনে যায়। এ বিষয়টা খুবই দু:খজনক যে, ভিকটিমরা কখনো নিজেদের দুর্ভোগের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না, কথার মারপ্যাঁচে পড়ে প্রকাশ করতে বাধ্য হলেও আপনজনকে সন্দেহ ও অবিশ্বাস করার দায়ে বহিষ্কৃত হয়; অথচ অনিষ্টকারীরা যখন ভিকটিমকেই অনিষ্টকারী সাব্যস্ত করে, তখন সেটা একবাক্যে মেনে নেয়া হয়। ভিকটিমের বাচ্চা মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে প্রসবকাল, শৈশবকাল, বাল্যকাল সব স্তরেই ক্রমাগত প্রাণনাশের চেষ্টা ও অসভ্য আচরণের শিকার হওয়া সত্ত্বেও ভিকটিমরা কখনো বাচ্চার ব্যাপারে নিরাপত্তাহীনতার কথা প্রকাশ করতে পারে না, জেরার মুখে বাধ্য হয়ে প্রকাশ করলেও ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিরাপত্তা অর্জনের নির্দেশ দেয়া হয় (যদিও দুনিয়ার কোথাও গেলেই এদের মারণ বাণ থেকে রেহাই পাওয়া যায় না); অথচ অনিষ্টকারীরা যখন উল্টো ভিকটিমের তরফ থেকেই নিজেদের বাচ্চার নিরাপত্তাহীনতা বোধ করার মিথ্যা দাবি করে, তখন সেটা ঠিকই আমলে নেয়া হয়, সিরিয়াসভাবে নেয়া হয়। এর কারণ হলো, প্রথমত যাদুতে লিপ্ত ব্যক্তিরা যাদু ও সম্মোহনের পাশাপাশি কূটবুদ্ধি ও সংঘবদ্ধ লবিংয়ে পারদর্শী হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ন্যায়নীতিবোধের অভাব ও পক্ষপাতদুষ্ট স্বভাব অন্যায়ের পক্ষে ফয়সালা দিতে ভূমিকা রাখে। তৃতীয়ত, অপরাধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর ভিকটিমের সংখ্যালঘিষ্ঠতাও ন্যায়বিচারকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে থাকে। যেমন- কোন পরিবারে চার ভাই-বোনের মধ্যে যদি একজন ভিকটিম আর তিনজনই যাদুকর হয়, এমনকি তাদের আম্মাজানও ডাইনীকূলের সদস্য হয়, তাহলে পিতা কার পক্ষে যাবেন? এরূপ ক্ষেত্রে পিতার পক্ষে এটা বিশ্বাস করাই অধিক সহজ হবে যে, এক ছেলেই শ্বশুরবাড়ির পাল্লায় পড়ে অন্যরকম হয়ে গেছে এবং শ্বশুরবাড়ির কবিরাজের সাহায্যে এটা সেটা করে বাদবাকি সবাইকে নাজেহাল করছে। কারণ, সবাই তো আর খারাপ হতে পারে না, খারাপ হলে ঐ একজনই হয়ে থাকবে বৈকি! কিন্তু তারপরও বলি, যদি ন্যায়নীতিবোধ থাকে, সত্য জানার ও ন্যায়সঙ্গত ফয়সালা করার সদিচ্ছা থাকে, তাহলে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব। বিশেষ করে সন্তানদের মধ্যে কারা কোন্ ধরনের মানুষের সাথে ওঠাবসা করে, কে কোন্ গোষ্ঠীর সদস্য, সেই গোষ্ঠীর আকীদা ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিলে সত্য বের করা কোন ব্যাপারই নয়। আসলে গায়ের জোরে একপক্ষকে মুখের উপর দাবিয়ে দেয়া আর আরেক পক্ষের সকল অভিযোগ ও আবদার 'সামি'না ওয়া আত্ব'না' বলে কবুল করে নেয়াটাই সকল বেইনসাফির মূল কারণ।

ছলনা ও জালিয়াতি: যাদুকররা ছলনা ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকৃত অবস্থার বিপরীত চিত্র মানুষের সামনে চিত্রায়িত করতে পারে— সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য বানাতে পারে। সরলকে কুটিল ও কুটিলকে সরল, চরিত্রবানকে দুশ্চরিত্র ও দুশ্চরিত্রকে চরিত্রবান, মুমিনকে কাফের ও কাফেরকে মুমিন, মজলুমকে জালেম  জালেমকে মজলুম, ভিকটিমকে অপরাধী ও অপরাধীকে ভিকটিম, যাদুর শিকারকে যাদুকর ও যাদুকরকে যাদুর শিকার হিসেবে তুলে ধরতে পারে। যাদুর দ্বারা কৃত্রিম লক্ষণ সৃষ্টির মাধ্যমে তারা এমনটি করে থাকে।
রূপকথার গল্পভিত্তিক টিভি সিরিয়ালে আমরা কারসাজির মাধ্যমে সত্যকে পাল্টে দেবার কিছু দৃশ্য দেখেছি। যেমন- রাজকুমার যখন বলল যে, রাক্ষসীদের তো আয়নায় দেখা যায় না, এবার তোমরা দেখলেই বুঝতে পারবে; তখন সাথে সাথে রাক্ষসীরা আয়নার উপর কৃত্রিম প্রতিবিম্ব তৈরি করে রাজকুমারকে বোকা সাজিয়ে দিল। রাজকুমার যখন ইচ্ছাধারী নাগিনীকে ঝাঁপিতে ভরে তারপর সেটাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করল, অমনি রাক্ষসী রানী তার মায়াশক্তি দিয়ে মূল নাগিনীকে বের করে সরিয়ে নিয়ে ঝাঁপির ভিতরে একটা নিরীহ সাপকে ভরে দিল।
ছলনা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সত্যের বিপরীত তথ্য প্রকাশ করার কিছু দৃষ্টান্ত নিম্নে উল্লেখ করা হলো:-
(ক) যাদুকর ব্যক্তি পীর বা সাধু সেজে যাদুবিদ্যার দ্বারা আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়ে সেটাকে কেরামতি হিসেবে জাহির করে; আল্লাহর ওলী ও রাসূলের (সা.) প্রতিনিধি হবার প্রমাণস্বরূপ পেশ করে। এমনকি এদের মুখের কথায় কেউ মরে গেলে সেটাকে 'আল্লাহর ওলীর সাথে বেয়াদবির ফল' রূপে চিহ্নিত করে।
(খ) আমরা সাধারণত স্বপ্নে কোন ইঙ্গিত পেলে সেটাকে আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত সতর্কবাণী হিসেবে গণ্য করে থাকি। কিন্তু যাদুকররা যাদুবিদ্যার মাধ্যমে এই স্বপ্নের উপরেও প্রভাব বিস্তার করে, স্বপ্নকে manipulation করে, স্বপ্নের মাধ্যমে মানুষকে ভুল বার্তা প্রদান করে। স্বপ্নের মধ্যে যাদু ও জিনের মাধ্যমে সৃষ্ট চিত্রকে আল্লাহর ইশারা ভেবে ভিকটিমের জীবনে ভুল ও ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
(গ) সাধারণভাবে মানুষের চারিত্রিক ভালো-মন্দ জানার একটা অন্যতম লক্ষণ হিসেবে শরীরের গন্ধকে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যাদুকররা দুর্গন্ধযুক্ত জিনকে পাঠিয়ে বা জিনের মাধ্যমে দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু ছিটিয়ে দিয়ে নিরপরাধ innocent মানুষকেও আপনজনদের কাছে সন্দেহের পাত্র বানাতে পারে।
(ঘ) সাধারণভাবে আমরা নামাজী ও পর্দাশীল মানুষদেরকে দ্বীনদার হিসেবে জানি এবং এসবের বিষয়ে গাফেল ব্যক্তিদেরকে ধর্মবিমুখ হিসেবে গণ্য করি। কিন্তু যাদুকররা ওযুর সমস্যা ঘটিয়ে নামাজে বিঘ্ন ঘটায়, ঠাণ্ডা-এলার্জি-ঘাম সৃষ্টি করে চাদর খুলতে বাধ্য করে; আর এভাবে ভুক্তভোগীদেরকে ধর্মবিমুখ হিসেবে দাঁড় করানোর প্রয়াস চালায়। অপরদিকে নিজেরা ঘন্টার পর ঘন্টা জায়নামাজে পড়ে থেকে নামাজের মহড়া দিয়ে এমনকি নামাজের সুরতে শয়তানী ধ্যানে নিমজ্জিত থেকেও ধার্মিক হিসেবে বাহবা পায় মুরুব্বিয়ানে কেরামের কাছে। পর্দা-হিজাব, নফল রোযা সবই তারা দৃশ্যত নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করে খাঁটি ধার্মিক বনে যায়। নিজেদের বাচ্চাদেরকেও লেলিয়ে দেয় ভিকটিমদের বাচ্চার কোরআন খতমের হিসাব নিতে ও তারাবির নামাজের রাকাত গুনতে।
(ঙ) জিনদের রূপ পরিবর্তনের ক্ষমতা থাকায় এটাকে ব্যবহার করে যাদুকরদের প্রেরিত জিনেরা (অথবা কুমতলববাজ জিনেরা) কোন মানুষের রূপ ধারণ করে অসঙ্গত আচরণের অভিনয় করে মানুষের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি ও দাম্পত্য বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে সম্ভব হলে জিনদের মাধ্যমে উপর্যুপরি ধর্ষণের দ্বারা শারীরিক বিকৃতি অথবা গর্ভধারণ ঘটিয়ে ভিকটিমকে চরিত্রহীন প্রমাণ করাও হতে পারে।
(চ) যাদুকর ডাইনীরা জিন দিয়ে অত্যাচার করে নিরপরাধ মানুষের অকালে শারীরিক গঠন পরিবর্তন করে দিয়ে খারাপ প্রমাণ করতে পারে। অপরদিকে নিজেরা খারাপ হয়েও জিনের শক্তি দিয়ে শারীরিক গঠন ঠিক করে নিয়ে ভালো সেজে থাকতে পারে। 
(ছ) যাদুর তাণ্ডব থেকে বাঁচার জন্য ভিকটিমরা মহামারির মধ্যে ঘর বা শহর ত্যাগে বাধ্য হলে যাদুর মাধ্যমে তাদের উপর সংশ্লিষ্ট মহামারীর লক্ষণ ও উপসর্গ কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করার জোরালো প্রয়াস চালানো হয়, যাতে ভিকটিমদেরকে মহামারি প্রতিরোধের বেলায় দায়িত্বহীন ও উদাসীন প্রমাণের পাশাপাশি রোগের বাহক সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যাবর্তন রোধ করা যায়।
(জ) সাধারণভাবে আমরা জানি, যাদুর ভিকটিমদের কোরআন তেলাওয়াত ও কোরআন শ্রবণের দ্বারা ভিকটিম সুস্থ হয়ে ওঠে এবং যাদুকর অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু অনেক সময় ভিকটিমদের রুকিয়া ও অভিসম্পাতের ফলে আল্লাহর গযবে অসুস্থ হয়ে পড়া যাদুকরও নিজেকে যাদুর ভিকটিম এবং ভিকটিমকে যাদুকর হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস চালাতে পারে। অসুস্থতায় গোঙাতে থাকা যাদুকর মানুষকে শুনিয়ে শুনিয়ে আল্লাহর যিকির ও কোরআন তেলাওয়াত করে তারপর প্রচার করবে, যিকির ও তেলাওয়াতের দ্বারা সুস্থবোধ করছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর ব্যাখ্যা হতে পারে নিম্নরূপ:-
(i) যাদুকর উচ্চস্বরে আল্লাহর যিকির বা কোরআন তেলাওয়াত করলেও নীরবে বা মনে মনে যাদুর ধ্যানে মত্ত হয়; যাদুর মাধ্যমেই নিজের Healing এবং প্রতিপক্ষের উপর আঘাত হানতে থাকে। যারা নামাজের সুরতেও মানুষের উপর দৃষ্টি বা ধ্যানের মাধ্যমে জিন চালান করতে পারে, তারা কোরআন তেলাওয়াতের সময় অন্য কাজ করা মোটেই অসম্ভব নয়।
সন্ত্রাসীরা যেমন বোমা বানানোর সময় তার শব্দকে ঢেকে রাখার জন্য হাই ভলিউমে গান বাজিয়ে থাকে, তেমনি যাদুকর দুর্বৃত্তরা নিজেদের কুফরী ও অপকর্ম ঢেকে রাখার জন্য নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের অভিনয় করে— কোরআনের অডিও প্লে করে তার আড়ালে অন্য কোন কুকর্মে নিয়োজিত থাকে।
(ii) হতে পারে, সে যেহেতু আক্রান্ত হচ্ছে নিজেরই বিদ্রোহী জিনের দ্বারা, আর যেকোন জিন কাফের অবস্থায় থাকলে কোরআন তেলাওয়াতের দ্বারা অস্বিস্তি বোধ করে, তাই কোরআন তেলাওয়াত তার ক্ষেত্রেও জিনকে দূরে সরিয়ে দেয়ায় ভূমিকা রাখতে পারে। [ভিকটিম যখন দীর্ঘমেয়াদী রুকিয়া ও জিনকে ইসলাম গ্রহণ করানোর পরিবর্তে Reversal আয়াতের দ্বারা শর্টকাট পদ্ধতিতে দ্রুত নিরাময়ের পথ বেছে নেয়, তখন যাদুকরের জিনগুলো ইসলাম গ্রহণ না করেই যাদুকরের বিরুদ্ধে পাল্টা চড়াও হয় বিধায় তারা তখনো কোরআন তেলাওয়াতের দ্বারা কাবু হবার পর্যায়ে থেকে যায়, এমনকি তা যাদুকরের তরফ থেকে হলেও।]
(iii) কোরআন যেহেতু গোটা মানব জাতির জন্য শেফা, তাই যাদুকরও হয়তো কোরআন থেকে এই সুবিধা পেয়ে থাকতে পারে।
(iv) আমরা জানি, সাধারণভাবে শয়তানরা আল্লাহর এবাদত ও কোরআন তেলাওয়াতে অসন্তুষ্ট হয় এবং অস্বস্তি অনুভব করে, পক্ষান্তরে কুফরী কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় আর উদ্দিষ্ট কার্য সিদ্ধ করে দেয়। কিন্তু প্রয়োজনবোধে এই ব্যাপারে শয়তানও খানিকটা কৌশলী হতে পারে এবং বাহ্যত এর বিপরীত আচরণ করতে পারে। শয়তান যদি মনে করে, তার বন্ধুদের দ্বারা মানুষের সামনে আসল পরিচয় প্রকাশ ও প্রকাশ্য কুফরী করার পরিবর্তে ধোঁকাবাজি ও মুনাফেকির দ্বারা মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করাটা শয়তানী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অধিক সহায়ক হবে, তাহলে সেক্ষেত্রে মিত্রদের লোক দেখানো এবাদত বা তেলাওয়াতে সে দূরে সরে যায় না, বরং আরো ভালোভাবে কার্য সাধন করে দেয়। ঠিক যেমন ভণ্ড পীর বা কাল্ট লিডাররা আল্লাহর নামে কোন কার্য সাধনের হুকুম দিলেও শয়তান সেই কার্য সাধন করে দিতে পারে; কারণ এর দ্বারা শয়তানের কেরামতি প্রকাশ না হলেও শয়তান তার নিজের ওলীকে মানুষের কাছে আল্লাহর ওলীরূপে গ্রহণযোগ্য করাতে পারে, যা তাকে মানুষের উপর further ধোঁকাবাজি করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেবে। মন্দ লোককে ভালো লোক হিসেবে, শয়তানের চরকে আল্লাহর ওলী হিসেবে এবং যাদুকরকে যাদুর ভিকটিম হিসেবে পরিচিত করতে পারলেও তার দ্বারা শয়তানের আসল উদ্দেশ্যই হাসিল হবে হোক না তার ক্রেডিট একটু কম হবে। তাই এরকম ক্ষেত্রে জালেমকে মজলুম ও মজলুমকে জালেম প্রমাণের প্রয়োজনে যাদুর জন্য নিয়োজিত জিন শয়তানরা যাদুকরকে কোরআন তেলাওয়াতের সময়ও সাহায্য করতে পারে, যাতে তাকে কোরআন তেলাওয়াতের দ্বারা নিরাময় লাভ করতে দেখে মানুষ তাকে মুমিন মনে করে।
(ঝ) কোন যাদুকর ডাইনীকে বদনজর প্রদানরত অবস্থায় তার ঐ কাজের দিকে ইঙ্গিত করে তাকে 'ট্যারা' সাব্যস্ত করা হলে সে আপনার চোখে জিন চালান করে দিয়ে আপনাকেই ট্যারা প্রমাণ করে ছাড়বে।
(ঞ) টার্গেটকৃত ভিকটিম ঘরে থাকা অবস্থায় পরিবারের কর্তাকে বশ করা ও চাপ দেয়ার জন্য অসুস্থ বানিয়ে রাখা হলেও ভিকটিমকে বিতাড়িত করার পর ঠিকই কর্তাকে সুস্থ রাখা হবে; যাতে প্রমাণ করা যায়, ভিকটিমরাই এর জন্য দায়ী ছিল।

মোটকথা, যাদুকররা যাদুর মাধ্যমে প্রতিটা পদে পদে নিজেকে সফল, দায়িত্বশীল ও ভালো প্রমাণ করবে এবং প্রতিপক্ষকে ব্যর্থ, দায়িত্বহীন ও খারাপ প্রমাণ করবে। যেমন- ছেলেকে ধ্বজভঙ্গ বা বউকে বন্ধ্যা প্রমাণ করা, বিবাহ বিচ্ছেদের ভবিষ্যদ্বাণী করা, বাচ্চার মাকে বাচ্চা পালনে (যেমন- খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, কোলে নেয়া, সুস্থ রাখা, দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ রাখা ইত্যাদি কাজে) ব্যর্থ বা দায়িত্বহীন প্রমাণ করা, ছেলেকে চাকুরী-ব্যবসায় আর বউকে সাংসারিক কাজে অযোগ্য প্রমাণ করা, কাউকে ধর্মবিমুখ বা দুশ্চরিত্র প্রমাণ করা, কাউকে ঝগড়াটে বা নিষ্ঠুর প্রমাণ করা ইত্যাদি নিশ্চিত করবার জন্য যত মানুষের উপর যত রকমের শারীরিক, মানসিক বা পারিপার্শ্বিক সমস্যা সৃষ্টির দরকার হয়, তা সবই করে থাকে। এককথায়, এরা যার নামে যে অভিযোগ প্রচার করবে, তলে তলে সেটাকে সত্য প্রমাণের ব্যবস্থাও করে রাখবে কৃত্রিমভাবে। কারো দাম্পত্য সমস্যা দেখলে বলবে, আমরা বলেছিলাম না, এ বিয়ে টিকবে না, এ বৌ থাকবে না? এমনকি এসব যাদুকরের গুরুরাও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রচার করে থাকে, আমাদের কথাই সব সময় সত্য প্রমাণিত হয়, আমরা যেটা বুঝি আগে অন্যরা সেটা বোঝে অনেক পরে, আমরা বলেছিলাম না এটা ঠিক নয় বরং ওটা ঠিক? ইত্যাদি।
যাদুটোনা জিনিসটাই মূলত কুফরী ও শয়তানির সাথে সম্পর্কিত। এ জগতে কাফের ও শয়তানরাই সবচেয়ে কুটিল, কুচক্রী, হিংস্র ও মিথ্যুক হয়ে থাকে। কাজেই যারা মন-মানসিকতা ও তৎপরতায় কুফর, শয়তানি ও কুচক্রীপনার ধারক-বাহক হয়, তারা কুটলামি আর শয়তানির সাথে যাদুতেও সমান পারদর্শী হয়ে থাকে। মানুষকে ঘায়ের করবার জন্য প্যারানরমাল তৎপরতার সাথে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা সমান তালে চালাতে থাকে।

যাদুটোনা থেকে নিরাময়ের উপায়: যাদুটোনার দ্বারা কেউ আক্রান্ত হয়ে থাকলে তা থেকে নিরাময়ের জন্য কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে চিকিৎসা করবেন। কোরআনের আয়াতের সাহায্যে যাদু, বদনজর, জিন ও যেকোন রোগব্যাধির চিকিৎসা বর্তমানে রুকিয়া নামে পরিচিত। রুকিয়া সম্পর্কে এখানে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হলো:- 
(ক) Basic বা মৌলিক রুকিয়া: Basic বা মৌলিক রুকিয়া হলো সকাল-সন্ধ্যার মাসনূন দোয়া ও আমলগুলো নিয়মিত আদায় করা; ঘুমানোর সময় সূরা ফাতেহা, আয়াতুল কুরসী, ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে বুকে ফুঁ দেয়া এবং হাতে ফুঁ দিয়ে তা দিয়ে মাথা থেকে শুরু করে বুক সহ পুরো শরীর মাসেহ করা। এছাড়া সূরা ফাতেহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা কাফেরূন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস ৩, ৭ বা ১১ বার পড়ে পানি পড়ে নিয়মিত পান করা ও তা দিয়ে গোসল করা; এ সূরাগুলো পড়ে সরিষার তেল পড়ে তা গায়ে মাখা ও শরীরের প্রবেশদ্বারে (যেমন- নাক, কান) দেয়া ইত্যাদি কাজও প্রাথমিক রুকিয়ার অন্তর্ভুক্ত।
যাদুর প্রাথমিক বা মৌলিক চিকিৎসার ব্যাপারে নির্দেশনা পেতে এ ওয়েবপেজটি দেখতে পারেন:- https://islamqa.info/bn/12918 ।
(খ) প্রাথমিক রুকিয়ায় কাজ না হলে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত তেলাওয়াত ও শ্রবণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেম ও রাকীগণ। এর মধ্যে কোন কোন অডিও আছে ডায়াগনোসিসের জন্য, অর্থাৎ যাদু আছে কিনা তা নিশ্চিত হবার জন্য।  কোন কোন অডিও আছে জিনকে শায়েস্তা করার জন্য, তবে অনেক সময় জিনগুলো ভিকটিমের কাছে টিকতে না পেরে ফিরে গিয়ে যাদুকরকেই জ্বালাতে শুরু করে। বিষয়বস্তুর দিক থেকে কোন কোন অডিও তৈরি হয়েছে কোরআনের আগুন সংক্রান্ত আয়াতগুলো নিয়ে, আবার কোন কোন অডিও তৈরি হয়েছে হত্যা, যুদ্ধ, মৃত্যু ও ধ্বংস সংক্রান্ত আয়াতগুলো নিয়ে।
(গ) লানতের রুকিয়া: যাদুর অনিষ্ট যদি মারাত্মক পর্যায়ের হয়, অথবা যাদুকররা যদি বারবার যাদুর পুনরাবৃত্তি করতে থাকে, তাহলে নিম্নের আয়াতটি বারবার তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানানো যেতে পারে, যাতে যাদুর ক্রিয়া ঘুরে গিয়ে যাদুকরের উপরে আপতিত হয়:-
رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا
"হে আমাদের প্রভু! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে মহা অভিসম্পাত করুন।" (সূরা আহযাব: ৬৮)
আয়াতটি নফল নামাযের মধ্যে (বিশেষ করে তাহাজ্জুদের মধ্যে) পড়তে পারলে বেশি কার্যকর। প্রতি রাকাতে ১০০ বার করে ২ রাকাত নামায পড়া যেতে পারে। সম্ভব হলে বিতর সহ ১১ রাকাতে মোট ১১০০ বার পড়ে (প্রতি দুই রাকাত পর পর পানিতে ফুঁ দিয়ে) কয়েক বালতি পানি তৈরি করে তা দিয়ে ভিকটিমদের গোসল করানো যেতে পারে।
[বি:দ্র: দোয়া-কালাম ও রুকিয়ার দ্বারা বারবার নিরাময় লাভের পরও যদি যাদুটোনার লক্ষণসমূহের বারবার পুনরাবির্ভাব ঘটে, অর্থাৎ অনিষ্টকামী যাদুকারিনীরা যদি একই অনিষ্টের বারবার পুনরাবৃত্তি করতে থাকে, হিংসুক শয়তানরা যদি আপনার অনিষ্ট সাধনে মরিয়া হয়ে লেগে থাকে, তদুপরি তাদের কৃত যাদুটোনা যদি খুবই ভয়ংকর, শক্তিশালী ও দুর্দমনীয় হয়, তাদেরকে শায়েস্তা ও দমন করা ছাড়া তাদের অশুভ দৃষ্টির কবল থেকে আপনার ও আপনার মত অন্যান্য নিরপরাধ মানুষের নিস্তার লাভের কোন সুযোগ ও অপশন যদি অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে এরূপ নিরূপায় অবস্থায়ই কেবল এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানিয়ে উক্ত জালেম দুর্বৃত্তদের উপর শাস্তি নাযিলের দ্বারা দয়াময় আল্লাহর কাছে ন্যায়বিচার লাভের চেষ্টা করা যেতে পারে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এ আয়াতটির আমল রাকীগণ উৎসাহিত করেন না।]
(ঘ) তাৎক্ষণিক রুকিয়া: যখন কেউ আকস্মিক আক্রমণের শিকার হয়, তখন অনেক সময় দীর্ঘ আমল করার সময় ও সুযোগ পাওয়া যায় না। সেরকম ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সংক্ষিপ্ত দোয়া পড়া যেতে পারে। যেমন-
(i) যদি কেউ আপনাদের কারো শরীর বা খাবারের দিকে অস্বাভাবিক দৃষ্টি দেয় (অর্থাৎ, বদনজর বা চোখের যাদু করে), তখন তার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে মনে মনে এই দোয়াটি পড়বেন—
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
অর্থ: I seek refuge in the Perfect Words of Allah, from every devil and every poisonous reptile, and from every evil eye. (Sunan Ibn Majah)
[This was the dua that Prophet Ibraheem (as) used to make for his sons, and also that which Prophet Muhammad (saw) used to make for his grandchildren, Hassan and Hussein.]
বলাবাহুল্য, দোয়া পড়া ব্যতীত কখনো তাদের চোখে চোখ পড়লে যাদুতে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকে। আর চোখে চোখ রেখে দোয়া পড়ার আমলটি করতে গেলেও উল্টো যাদুটোনার দায়ে অভিযুক্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
(ii) কাউকে অসৎ উদ্দেশ্যে ধ্যানে বসতে দেখলে এবং তার প্রভাবে আপনাদের কারো শারীরিক সমস্যা অনুভূত হলে নিম্নোক্ত আয়াতগুলো পড়তে পারেন—
وَمَكَرُواْ وَمَكَرَ اللهُ - وَاللّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
অর্থ: এবং তারা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম কুশলী। (সূরা আল-ইমরান: ৫৪)
وَلَا يَحِيقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ إِلَّا بِأَهْلِهِ
অর্থ: কুচক্র কেবল কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে। (সূরা ফাতির: ৪৩)
إِنَّهُمْ يَكِيدُونَ كَيْدًا - وَأَكِيدُ كَيْدًا
অর্থ: তারা কায়দা করে, আর আমিও কায়দা করি। (সূরা তারিক: ১৫-১৬)
(iii) যদি জরুরী পরিস্থিতিতে আকস্মিকভাবে শরীরের চামড়ার উপরে উদ্ভূত প্যারানরমাল উপসর্গ দ্রুত উপশমের প্রয়োজন হয়, তাহলে বিশেষ কোন ছোট বাক্য বার বার উচ্চারণের দ্বারা আগ্রাসী জিনগুলোকে দমন করা যায়। আমরা এখানে এরকম দুটি বাক্য আলোচনা করব।
একটি বাক্য হলো:- حَرِّقُوهُ যার অর্থ, "পোড়াও তাকে।" যদিও এ বাক্যটি বলেছিল অত্যাচারী নমরূদের নেতৃত্বাধীন কাফেররা আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে পেড়ানোর হীন উদ্দেশ্যে, তথাপি সর্বনামবাচক বাক্য হওয়ায় উপস্থিত যে কারো সম্পর্কে প্রয়োগের সুযোগ থাকায় কারো শরীরে উপস্থিত জিনকে এই বাক্যটি উচ্চারণের দ্বারা পুড়িয়ে বা তাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে ভুলেও এ বাক্যটিকে কোন আমল হিসেবে নেয়া যাবে না, এটা উচ্চারণের দ্বারা কোন সওয়াব বা ফযীলতের আশা করা যাবে না। জিন-যাদু বা যেকোন বিপদ থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে আল্লাহর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা এবং কোরআন ও হাদীসে নির্দেশিত দোয়াগুলো পাঠ করার দ্বারা যে সওয়াব ও বরকত লাভ করা যায়, এই 'হাররিকূহ' বাক্যটির দ্বারা এরকম কোন ফযীলত আশা করা যাবে না। শুধুমাত্র শরীরে জুড়ে বসা জিনকে পোড়ানোর জন্য এ বাক্যটি ব্যবহার করা যাবে।
মনে করুন, অফিসে লোকে লোকারন্য ও কর্মব্যস্ত অবস্থায় আপনার শরীরের এমন কোথাও জিনেরা এসে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া ঘটাতে লাগল, যখন কোন দোয়া বা রুকিয়া করারও উপায় নেই, এমনকি হাত দিয়ে চুলকিয়ে উপশম করবারও সুযোগ নেই। তখন সেরকম ক্ষেত্রে এই ছোট্ট বাক্যটিই হতে পারে স্বস্তি লাভের শর্টকাট উপায়। কিন্তু এটাকে নিয়মিত আমল হিসেবে নির্ধারণ না করাই ভালো। কেননা, বাক্যটি কোরআনে উল্লেখিত হলেও এটা উদ্ধৃত হয়েছে কাফেরদের অসৎ উদ্দেশ্যে কৃত উক্তি হিসেবে।
আরেকটি বাক্য হলো:- لَّنُحَرِّقَنَّهُ যার অর্থ, "আমরা ওটাকে/তাকে জ্বালিয়ে দেবই।" মূসা (আ.) গোবৎস্যনির্মাতা সামেরীকে লক্ষ্য করে তার নির্মিত বাছুরের মূর্তিটাকে জ্বালিয়ে দেবার ঘোষণা দিতে এ উক্তিটি করেছিলেন। যাদুর ভিকটিমদের জন্য অফিসে বা লোকসমক্ষে জিনঘটিত চুলকানি উপশমে এই বাক্যটিও কার্যকর প্রতীয়মান হয়েছে। لَّنُحَرِّقَنَّهُ অংশটুকু কয়েকবার করে পড়ার পর পুরো বাক্য لَّنُحَرِّقَنَّهُ ثُمَّ لَنَنسِفَنَّهُ فِي الْيَمِّ نَسْفًا (যার অর্থ, "আমরা সেটি জালিয়ে দেবই। অতঃপর একে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে ছড়িয়ে দেবই।") একবার করে পড়া যেতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে এ বাক্যটি নির্দ্বিধায় যত খুশী পড়া যায়। আমার মতে, 'হাররিকুহ' অপেক্ষা 'লানুহাররিক্বন্নাহ' পড়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। কারণ, কমন সেন্স বলে, একজন নবীর (আ.) দুশমনদের উক্তি অপেক্ষা একজন নবীর (আ.) উক্তি অধিক গ্রহণযোগ্য।

এছাড়া আরো কিছু আয়াত আছে, যার মাধ্যমে যাদুকরের যাদুকে যাদুকরের দিকে বুমেরাং করার চেষ্টা করা যায়।

তবে একথাও মনে রাখতে হবে, তওবা ও তাকওয়া ছাড়া কোন আমল দিয়েই কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা যায় না। যাদুটোনা থেকে বেঁচে থাকা বা যাদুটোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে নিরাময় লাভ করা কিংবা অনিষ্টকারীদের শায়েস্তা করা ইত্যাদি কোনটাই আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সম্ভব নয়। আর আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে হলে আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকা এবং নাফরমানি পরিহার করা অপরিহার্য। একটি ওয়েবসাইটে যাদুর চিকিৎসা সংক্রান্ত আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, "To get Allah (SWT)'s protection, one should have a very good relationship with Allah (SWT), that's all and no more." (Ref: http://quran.mu/
দুর্বল ঈমান দিয়ে শয়তানি শক্তির সাথে পেরে ওঠা যায় না, বরং এর জন্য দরকার শক্তিশালী ঈমান। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তিনটি গুণ যার মধ্যে রয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। (১) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার নিকট অন্য সব কিছু হতে তার নিকট অধিক প্রিয় হওয়া। (২) কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা। (৩) কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা। (বুখারি ও মুসলিম) এককথায়, কেউ যখন জীবন গেলেও ঈমান দিতে রাজি হবে না, অর্থাৎ ঈমান হারানোর চেয়ে জীবন হারানোকে শ্রেয়জ্ঞান করবে, তখন বুঝতে হবে সে শক্তিশালী ও দৃঢ় ঈমানের অধিকারী হয়েছে এবং আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় লাভের আশা করতে পারে। অপরদিকে যদি কারো অবস্থা এই হয় যে, সামান্য দুনিয়াবি স্বার্থের বিনিময়ে দ্বীনকে বিসর্জন দিতে রাজি থাকে, তাহলে এ অবস্থায় সে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আশা করতে পারে না, বরং শয়তানি শক্তির হাতে লাঞ্ছিত ও পরাজিত অবস্থায় থাকাটাই তার ললাট লিখন হয়ে দাড়ায়। রাসূল (সা.) পণ্যের দোষ গোপন করতে নিষেধ করেছেন এবং সত্যবাদি ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদেরকে নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের সাথে হাশর হবার সুসংবাদ দিয়েছেন। এখন আমি যদি ওজর পেশ করি যে, 'নির্ভেজাল মাল কেউ নিতে চায় না, আমার কি দোষ', তাহলে এটা আমার ঈমানে দুর্বলতার পরিচায়ক। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।" [মিশকাতুল মাসাবীহ,৬১] যাদুর অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তান্ত্রিক বা শিরকী তাবিজ প্রদানকারী হুজুরের শরণাপন্ন হওয়া এবং নিজের মনকে এই বলে সান্ত্বনা দেয়া যে, সে যদি কুফরি করে তার পাপ হবে, আমার ওটা দেখার দরকার নেই- এই মানসিকতা মুমিনের পরিচায়ক নয়। যেখানে একটু ধৈর্য ধরে চেষ্টা করলেই সৎ পথে ও ঈমানের পথে থেকেই প্রয়োজন পূরণ ও সাফল্য অর্জন সম্ভব, সেখানে ঠুনকো অযুহাতে হারাম ও শিরককে প্রশ্রয়দান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

রুকিয়াতে বাধা: যাদুর রোগী বা ভিকটিম যখন রুকিয়ার মাধ্যমে যাদুর কবল থেকে মুক্তি লাভের চেষ্টা করে, তখন যাদুকর ও জিনদের তরফ থেকে প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যেক্ষেত্রে যাদু শুধু কোন পেশাদার তান্ত্রিকের সাহায্য নিয়ে একবার করে রাখা হয়, সেক্ষেত্রে একবার নিরাময় করতে পারলেই হুমকিমুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে বিদ্বেষপরায়ণ ব্যক্তি নিজেই যাদুবিদ্যায় পারদর্শী হয় এবং বারবার বাইরে না গিয়েই ঘরে বসে চোখের চাহনি বা মনের কল্পনার দ্বারা যখন ইচ্ছা তখন যাদু করতে পারার ক্ষমতাসম্পন্ন হয়, সেসব ক্ষেত্রে ভিকটিম চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে গেলে তারা গুপ্তচর জিনের মাধ্যমে অথবা নিজেরা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে টের পেয়ে যায় এবং তৎক্ষণাৎ নতুন যাদুর বাণ নিক্ষেপ করে। আর রোগী যাতে দোয়া-কালাম, এবাদত ও রুকিয়ার মাধ্যমে নিরাময়ের চেষ্টা চালাতে না পারে, সেজন্য নানান ভাবে বাধার সৃষ্টি করে।
যেসব রুকিয়ার দ্বারা যাদু থেকে ভিকটিমের নিরাময়ের পাশাপাশি যাদুকরের উপরেও Effect হয়, সেসব ক্ষেত্রেও স্থান-কাল ও পাত্র ভেদে অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে। যাদুকরদের মধ্যে যাদের মনে একটু ডর-ভয় আছে, তারা এক-আধ বার শাস্তিপ্রাপ্ত হলেই বুঝতে পারে যে, তাদের কৃতকর্মের কারণে মজলুমের দোয়ায় আল্লাহর গযব নাযিল হচ্ছে, তাই তারা এসব কাজ ছেড়ে দেয়, কেউ কেউ তওবা করে ভালোও হয়ে যায়। কিন্তু যারা একটু বেপরোয়া ও অতিরিক্ত জেদী, যাদের প্রতিহিংসাও চরমতম পর্যায়ের, তারা শাস্তি পেয়ে আরো অধিক মরিয়া হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যারা তাদের যাদুর দীক্ষাদানকারী কাল্ট গুরুর কাছে অধ্যবসায়ী হওয়া ও বিজয়ী হওয়ার শিক্ষা পেয়েছে, 'আমি সাহসী, আমি পারি, আমি পারব' এ জাতীয় দৃঢ়প্রত্যয়ী হবার প্রেরণা লাভ করেছে, তারা একবার না পারলে শত সহস্রবার চেষ্টা চালিয়ে যায়। মৃত্যুশয্যায় বসেও তারা জিন চালান করতে পারে; তারা শেষ নি:শ্বাস ও শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়ে যায়। এছাড়া তারা যাদুশক্তির বলে নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি নিমিষে কাটিয়ে উঠে পুনরায় দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে বাণ মারতে শুরু করে, ঠিক যেমন রূপকথার গল্পের রাক্ষসী রাণী কর্মদোষে বার্ধক্যে নিপতিত হবার পর হঠাৎ করে কিছু একটা পান করে যৌবন ফিরে পায়। প্রতিশোধমূলক হামলায় রোগীর আপনজনদের মধ্যে শিশু-বৃদ্ধ সবাই আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যাদুর রোগীকে কেউ চিকিৎসা দিলে তার উপরেও আক্রমণ হয়। এজন্য যাদুর চিকিৎসক তথা রাকীগণ বিভিন্ন সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকদের পরিবারও ঝুঁকিতে থাকে।
যাদুর চিকিৎসা ও রুকিয়ার আমলে যেসব উপায়ে বাধা সৃষ্টি করা হয়, তা হলো:-
(ক) জিন প্রেরণ করে জ্বালাতন করার মাধ্যমে। যাদুর জিনেরা নিজেদের উপর ইফেক্ট হওয়ায় নিজেরাও স্বত:প্রণোদিতভাবে বাধা দিতে পারে, আবার যাদুকরও রোগীর আমলের সময় বা চিকিৎসার সময় জিন প্রেরণ করে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
(খ) কোন না কোন বাহানায় নিজেরা এসে বা বাচ্চাদেরকে পাঠিয়ে কথা, শব্দ বা চার্জ (জিজ্ঞাসাবাদ) করার মাধ্যমে। ভিকটিমরা ফ্রি থাকা অবস্থায় তাদের কাছে নিজেদের বাচ্চাদেরকে ঘেঁষতে না দিলেও জরুরী কাজের সময় (বিশেষ করে রুকিয়ার সময়) বাচ্চাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। [সমালোচনা ও কূটনৈতিক চাপের ভয়ে ভিকটিমরা দরজা বন্ধ করে রুকিয়া করতে পারে না। অপরদিকে যাদুকররা ঠিকই নিজেদের বাচ্চাদেরকেও রুমের বাইরে বের করে দিয়ে নিজেরা দরজা বন্ধ করে যাদুটোনা করতে পারে, অথবা বিশ্রাম গ্রহণ করে যাদুটোনার প্রয়োজনে রাত জাগার জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে পারে।]
(গ) রোগী তাহাজ্জুদরত অবস্থায় সেহেরীতে ডাকার ছলে দরজা টাকাটাকি করার মাধ্যমে। তবে যাদুকর ডাইনীরা নিজেরা যখন সেহেরীর সময়ে সেহেরী না খেয়ে ধ্যানে বসে, তখন তারা একে অপরকে পাহারা দেয় এবং ডাকতে সবাইকে নিষেধ করে।
(ঘ) রুকিয়ার আমল নিয়ে বিদ্রূপ ও কটাক্ষ করার মাধ্যমে। [যেমন- "আপনি তসবীহ পাঠ করেন, আবার টিভি দেখেন!" অথচ এরা নিজেরা যে ধার্মিক সেজে থেকে কুফরী কাজে লিপ্ত থাকে, এতে কোন সমস্যা নেই। বলাবাহুল্য, টিভি ও ফেসবুককে এরা ধর্মবিমুখতা হিসেবে সাব্যস্ত করে থাকে ধর্মপ্রীতির জন্য নয়, বরং তাদের কুফরী কর্মকাণ্ডের তথ্যসমূহ টিভি ও ফেসবুক মারফত প্রকাশ হবার কারণেই এরা টিভি ও ফেসবুকের উপর বিরক্ত।]
(ঙ) জিন পাঠিয়ে ওজু নষ্ট করা বা পিরিয়ড ঘটানোর মাধ্যমে।
(চ) অতিরিক্ত কাজের চাপ (যেমন- খাবারের অতিরিক্ত আইটেম তৈরির ফরমায়েশ) দিয়ে ভিকটিমকে ব্যস্ত রাখা ও ভিকটিমের সময় নষ্ট করার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে অপরাধীরা বয়স্ক বা অসুস্থ হিসেবে আগমন করলে তাদের আবদারকে Deny করার উপায় থাকে না। বিশেষ করে রুকিয়া ও আমলের সময় (যেমন- ফজরের পরে) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাড়াহুড়া করে খাবার তৈরির তাড়া দেয়া হলে রুকিয়া বিঘ্নিত হয়।
অপরদিকে যাদুকরকে কখনো ভিকটিমের সেবার জন্য নিজেদের যাদু বন্ধ রাখার প্রয়োজন হয় না। তারা ভিকটিমের প্রতি উদাসীন হলেও কেউ কিছু বলবে না। এমনকি ভিকটিমকে খাবার দিতে হলেও সেটা যাদুকরের জন্য একটা সুযোগ হিসেবে কাজ করে— মানে খাবারের মধ্যে নাশকতা করতে পারে।
ঘরে কোন কাজের মানুষ থাকার কারণে যদি ভিকটিমের রুকিয়া বাধাগ্রস্ত করার কাজটি সম্ভব না হয়, তাহলে যাদু বা নজরের মাধ্যমে সেই কাজের মানুষকেও অসুস্থ বানিয়ে দেয়া হয়।
(ছ) যাদুর মাধ্যমে ভিকটিমের কর্মস্থলে অতিরিক্ত কাজের চাপ সৃষ্টি করে।
(জ) অনেক সময় যাদুকর ডাইনীরা বাণ মারার সাথে সাথে নিজেরা ছুটে গিয়ে অথবা বাচ্চাদেরকে পাঠিয়ে দিয়ে নজরদারি করে, ভিকটিম কিভাবে এটা overcome করছে। প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ বা চার্জ করে বা করায়।
(ঝ) অনেক সময় জিনেরা রুকিয়ার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতে সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। এ প্রসঙ্গে একটি ওয়েবসাইটে বর্ণিত কয়েকটি লক্ষণ হলো:-
-electronic devices breaking down
-hearing strange electronic noises
-internet not working, or videos won’t play [সূত্র: https://blackmagicsymptoms.com/fqa/]
কারো কারো দেখা যায়, মোবাইলে রুকিয়ার অডিও শুনতে গেলে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। আবার কারো কারো ইয়ারফোনে সমস্যা দেখা দেয়, সাউন্ড অন্যরকম হয়ে যায়।
(ঞ) ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে।
(ট) চুলকানি বা ভুয়া টয়লেটের বেগ সৃষ্টির মাধ্যমে।
(ঠ) আপনজনের ভাগ্য নিয়ে গুজব বা সন্দেহ জাগিয়ে মিথ্যা টেনশন সৃষ্টি করে মনোযোগ ঘুরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে।
(ড) ভিকটিমের বাচ্চাকে উত্তেজিত বা জ্বালাতন করে ক্রন্দন বা পাগলামি করানোর মাধ্যমে।
(ঢ) সবচেয়ে বেশি আক্রমণ হয় ভিকটিমের মুখের উপর। কারণ, এই মুখ দিয়েই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়, রুকিয়া করা হয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, সত্য প্রকাশ করা— তাও হয় এই মুখ দিয়েই। এজন্য মুখের উপর জালেমদের আক্রোশ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। দৃশ্যমান জীবনেও দেখা গেছে, কোন গৃহকর্মী তাদের কূটচক্রান্ত ও কুটনামির খবর ভিকটিমের কাছে প্রকাশ করে দিলে সেই অপরাধে তার উপর নির্যাতনের সময় জালেমরা একে অপরকে কমান্ড দিতে থাকে— "গায়ে মেরে লাভ নেই, মুখে মারো!"

সবচেয়ে বড় সতর্কতার বিষয় হলো, কোন প্রাপ্তবয়স্ক রোগী যখন নিজের সমস্যার জন্য রুকিয়া করবে, তখন রোগীর সাথে পেরে না উঠলে যাদুকরেরা রোগীর নাবালেগ মাসুম বাচ্চার উপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ করে থাকে। এমনকি রোগীর আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের মধ্যে যেকোন অবলা শিশুই আক্রান্ত হতে পারে।

এই সমাজে যারা যাদুতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থতা ও দুর্ভোগ পোহাতে থাকে, তাদের সিংহভাগই আজীবন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অনবহিতই থেকে যায়। যাদের ভাগ্য ভালো, তারা কেউ ১০ বছর, কেউ ২০ বছর, আবার কেউবা ৪০ বছর ভোগার পর আল্লাহর ইচ্ছায় জানার সৌভাগ্য হয়। সাধারণ নিরপরাধ মানুষ শরীর, মন ও পরিবেশে অজ্ঞাত ও রহস্যজনক সমস্যা ও উপসর্গ দেখেও কারো মনে কোন প্রশ্ন জাগে না যে, এমনটি কেন হচ্ছে। অথচ যাদুকররা যখন যাদু দিয়ে আশানুরূপ ক্ষতিসাধনে ব্যর্থ হয়, যাদুকরের যাদু যখন বাধার সম্মুখীন হয়, যাদুর কার্যকারিতা যখন কমে যায়, কিংবা যাদু যখন ব্যর্থ বা বুমেরাং হয়, তখন কিন্তু ঠিকই তৎক্ষণাৎ অনুসন্ধান শুরু করে, আমাদের প্রচেষ্টা কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে, ভিকটিম কোন ঝাড়ফুঁক জানে কিনা। ভিকটিমদের শরীরের দিকে তাকিয়েও ফলো করে, যাদুর প্রভাব কতটুকু কার্যকর হচ্ছে। চেহারার সৃষ্ট কালো দাগ আছে নাকি দূর হয়েছে, সেটা খেয়াল করে। উপর্যুপরি যাদুর পরও কোন শিশুকে সুস্থ থাকতে দেখলে তার শরীরের দিকে খেয়াল করে খুঁজে বের করে, কী এমন আছে যার কারণে যাদু কাজ করছে না। যেমন- শিশুটির গায়ে তেল মাখা দেখলে হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করে এবং নিজেদের বাচ্চাদেরকে সম্মোহনের মাধ্যমে ঐ তেল মাখার ব্যাপারে খবরদারি করতে লেলিয়ে দেয়। ভিকটিমের চিকিৎসা পদ্ধতি জিন দিয়ে বা মানুষ দিয়ে খুঁজে বের করে উপরে বর্ণিত পন্থাগুলোতে বাধার সৃষ্টি করা হয়। শেষ পর্যন্ত ভিকটিমের আত্মরক্ষার চিকিৎসাকে যাদুর কাতারে ফেলে কালবিলম্ব না করে ভিকটিমকে কাঠগড়ায় তুলে ছাড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাদুকরের যাদু ও তার মোকাবেলায় ভিকটিমের রুকিয়া যখন দীর্ঘদিন চলে, তখন এক পর্যায়ে ভিকটিমকেই যাদুকর প্রমাণ করা হয়।
যাদুর ভিকটিম যখন যাদুকরদের কবল থেকে মুক্তি লাভের জন্য কোন আমল করে, তখন স্বভাবতই গোপনীয়তা অবলম্বন করে। যেকোন মানুষ শত্রুর কবল থেকে আত্মরক্ষার যেকোন প্রচেষ্টা শত্রুর নজর থেকে গোপন রাখতেই সচেষ্ট থাকবে— এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বিষয়টির উপর গোযেন্দাগিরি করে যাদুকর ডাইনীরা ভিকটিমকে রীতিমতো আসামী বানিয়ে দেয়। পানি পড়ার কাজ কেন গোপনে করতে হবে, তসবীহ পাঠ আমরা কেউ লুকিয়ে করি নাকি, তসবীহ জিনিসটা কাপড়ের নিচে লুকিয়ে রাখার কী আছে— ইত্যাদি প্রশ্ন তুলে ভিকটিমের আমলগুলোকে অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণ করতে চায়। অর্থাৎ, এরা ভিকটিমের দিকে ইঙ্গিত করে বোঝাতে চায়, মানুষের ক্ষতি করার জন্য করছে বলেই বুঝি রাখঢাক করার প্রয়োজন হচ্ছে।

যাদুকরের পরিণতি: 'যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি' বইয়ের ৪র্থ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, "যাদুকর জ্বিন ও শয়তানকে তার অধীনে নিয়ে খারাপ কাজ করে থাকে। অতঃপুর যদি জ্বিন কখনও আনুগত্য না করে, তাহলে যাদুকর তাবিজের মাধ্যমে সেই নেতা জিনের নৈকট্য লাভ করে এবং তার গুণ কীর্তন ও তার নিকট ফরিয়াদ করে তার (গোত্রের প্রধান জিনের) কাছে অভিযোগ করে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা না করে তার কাছেই সাহায্য চায়। অতঃপর সেই জ্বিন সরদার সেই সাধারণ জিনকে শাস্তি প্রদান করে এবং যাদুকরের আনুগত্যে বাধ্য করে।
এভাবে যাদুকর আর তার অনুগত জ্বিনের মাঝে বৈরী সম্পর্ক এবং শক্ৰতা ও সৃষ্টি হয়, আর এই জ্বিন যাদুকরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধাবোধ করে না; এমনকি তার সন্তান ও ধন-সম্পদে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে এবং যাদুকরকেও অনেক কষ্ট দিয়ে থাকে। যেমন- স্থায়ীভাবে মাথা ব্যথা, ঘুম না আসা, রাতে ভয় পাওয়া ইত্যাদি। আর যাদুকরের সাধারণত সন্তানও জন্ম লাভ করে না। কেননা জ্বিন মাতৃগর্ভে শিশুকে মেরে ফেলে। আর এই বিষয় যাদুকরদের নিকট প্রসিদ্ধ। এমনকি যাদুকর সন্তানের আশায় যাদু করা থেকে বিরত থাকে।" ('যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি', ওয়াহিদ বিন আবদুস সালাম বালী, পৃ. ৩৮) 
সূরা বাকারার ১০২ নম্বর আয়াতে যাদুচর্চার উৎপত্তি বিষয়ক আলোচনা শেষে বলে দেয়া হয়েছে, "তারা এমন জিনিস শিখল, যার দ্বারা তাদের কেবল ক্ষতিই হয়, কোন উপকার হয় না। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্মবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ, যদি তারা জানত।" সূরা ফাতিরের ৪৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "কুচক্র কেবল কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে।" যারা প্রাকৃতিক শক্তি ও জিনদেরকে বশ করে নিজেদের অন্যায় ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করে, তাদের এ যাদুশক্তি যখন হ্রাস পায়, প্রাকৃতিক শক্তি ও জিন বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ যখন শিথিল হয়ে আসে, তখন এই শক্তিগুলোর বিদ্রোহ ও অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে ওঠে। যাদুর ভিকটিমরা তো তবু কোরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার দ্বারা মুক্তির চেষ্টা চালাতে পারে, কিংবা যাদুর কবলে পড়ে দুনিয়ার জীবনে মরে গেলেও মজলুম হিসেবে আখেরাতে আল্লাহর রহমত লাভের আশা রাখে। কিন্তু যাদুকরের জন্য ভয়ঙ্কর ও মর্মান্তিক পরিণতি থেকে বাঁচার কোন উপায়ই থাকবে না। আর পরকালে তাদের কি হবে, তা তো সূরা বাকারার উল্লেখিত আয়াতে বলেই দেয়া হয়েছে। এছাড়া সূরা আল ইমরানের ১৯২ নম্বর আয়াতের শেষে বলে দেয়া হয়েছে, "আর জালেমদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই।" 
সাপুড়িয়ার মৃত্যু কার কামড়ে হয়, সেই প্রবাদটা আশাকরি নতুন করে কাউকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না।

ভিকটিম বনাম অপরাধীর পার্থক্য করার উপায়: যাদুর ভিকটিমরা যখন রুকিয়া তথা কোরআন তেলাওয়াত বা শ্রবণ এবং হাদীসের দোয়া পাঠের দ্বারা সুস্থতা অর্জন করে, তখন যাদুকর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরকম ক্ষেত্রে এই অপরাধী জালেমরা চোরের মায়ের বড় গলায় ভিকটিমকেই যাদুকর সাব্যস্ত করে এবং নিজেদের ও নিজেদের বাচ্চাকাচ্চাদেরকে যাদুর দ্বারা প্রাণনাশের হুমকির শিকার বলে মরাকান্না জুড়ে দেয়। এমনকি সম্মোহন ও বশীকরণ ক্ষমতার জোরে এবং বাকপটুতা ও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পরিবারের কর্তাকে দিয়ে নিজেদের অভিযোগের সপক্ষে রায় আদায় করে।
এরকম ক্ষেত্রে বুঝবেন কিভাবে, কে অন্যায়ভাবে অনিষ্টকারী, আর কে ন্যায়সঙ্গত প্রতিকারকারী?
# যাদুকররা নিজেদের সুবিধামাফিক একসময় যাদুর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে, এমনকি যেসব টিভি সিরিয়ালে যাদুকরদের অপকীর্তি সচিত্র দেখানো হয় সেগুলোকেও অবাস্তব ও ফালতু সাব্যস্ত করে। আবার পরবর্তীতে ভোল পাল্টে যাদুর অস্তিত্বকে স্বীকার করতে শুরু করে। অপরদিকে যারা ভিকটিম, তারা সবসময়ই যাদুর অস্তিত্বকে স্বীকার করে। কারণ, তাদের কিছু লুকানোর নেই।
# চোখে চোখ রাখার কাজটি যাদুবিদ্যা ও সম্মোহনেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে এই চোখের যাদুকে প্রতিহত করবার জন্য ভিকটিমকেও অপরাধীর চোখে চোখ রাখতে হতে পারে। তাহলে দৃষ্টিপাতকারী দুই ব্যক্তির মধ্যে কে যাদুকর, আর কে ভিকটিম বা ভিকটিমের সাহায্যকারী, তা বোঝার উপায় হলো:-
* যাদুকর সব সময় চোখ দেবে ভিকটিমের চোখের উপর, কিন্তু খাবার সময় দৃষ্টি দেবে শুধু খাবারের উপর। এবং উভয় ক্ষেত্রেই যেচে আগ বাড়িয়ে দেবে। অপরদিকে ভিকটিম কখনোই যেচে কারো চোখে চোখ রাখবে না। যখন কাউকে খাবারের উপর বা কারো চোখের উপর অসৎ উদ্দেশ্যে দৃষ্টিপাত করতে দেখবে, তখন দৃষ্টিপাতকারীর চোখে চোখ রেখে নজরের দোয়া পড়বে। সুতরাং যাকে দেখবেন অপর কারো অস্বাভাবিক দৃষ্টিপাত ছাড়াই নিজে আগ বাড়িয়ে অস্বাভাবিক দৃষ্টিটাত করছে, সে যাদুকর। পক্ষান্তরে যে শুধুমাত্র অপরের বদনজর ঠেকানোর জন্য নির্দিষ্ট দোয়া পড়ে দৃষ্টিপাত করবে, সে যাদুকর নয়। তদুপরি ভিকটিম কখনো কারো খাবারের দিকে ওভাবে দৃষ্টিপাত করবে না। আর বদনজরকারীর চোখের দিকে দৃষ্টিপাতটাও কেবল ততক্ষণই করবে, যতক্ষণ অপরাধী ব্যক্তি কারো চোখ বা খাবারের উপর দৃষ্টিপাত করছে। অপরাধী ব্যক্তি চোখ সরিয়ে নেয়া মাত্র ভিকটিম বা প্রতিরোধকারী ব্যক্তিও চোখ সরিয়ে নেবে।
# ভিকটিম ব্যক্তি অন্যকে যা খেতে দেবে, তা নিজেও খেতে রাজি হবে। পছন্দ না হলেও পরীক্ষা দেয়া ও নিজের সততা প্রমাণের জন্য সামান্য এক লোকমা হলেও নিতে সম্মত হবে। কিন্তু অপরাধী ব্যক্তি যখন অন্যকে দেয়ার উদ্দেশ্যে খাবারের কোন অংশের উপর কিছু করে রাখবে, তখন সেটা সেই অপরাধী ব্যক্তিকে ঘাড় ধরেও খাওয়াতে পারবেন না। 
অবশ্য যাদুকর ডাইনী যখন এতটাই দক্ষতা ও পারদর্শিতা অর্জন করে যে, সংশ্লিষ্ট খাবারটি খেলে কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না সেটা Customized করে দিতে পারে; অথবা এমন ব্যবস্থা করতে পারে যে, যাদুর জিনগুলো শুধুমাত্র মুমিনদের ক্ষতি করবে, আর শয়তানদের কোন ক্ষতি করবে না; তখন সেই খাবার ভিকটিমরা খেতে রাজি হবে না, জালেমরা খেতে রাজি হবে।
# যাদুকররা কাজ করে থাকে কুফরী বা শিরকী তন্ত্র-মন্ত্রের মাধ্যমে। এরা হয় পেশাদার কবিরাজের কাছ থেকে এগুলো গ্রহণ করে, অথবা কোন শিরকী আকীদাসম্পন্ন গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে এসব বিদ্যায় সিদ্ধি লাভ করে থাকে। যাদুতে টার্গেটকৃত ব্যক্তির নাম দাগিয়ে কার্য সাধন করা হয়। অপরদিকে যারা ন্যায়সঙ্গত প্রতিকারকারী, তারা শুধুমাত্র কোরআনের আয়াত ও হাদীসের দোয়ার সাহায্যেই সংকট উত্তরণের চেষ্টা করে। আর সেক্ষেত্রে কারো নাম দাগিয়ে প্রার্থনা করা হয় না, বরং অনিষ্টকারী যে বা যারাই হোক সে আপনাআপনি শায়েস্তা হবে। এর জন্য এমনকি অনিষ্টকারীর নাম জানারও দরকার পড়ে না। আবার নাম উল্লেখ করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্দোষ হয়ে থাকলে তার কোন ক্ষতি হবে না। আল্লাহর কাছে কারো বিরুদ্ধে প্রার্থনা বা লানত করার সময় সে ব্যক্তি দোষী হয়ে থাকলেই কেবল শাস্তি পাবে, নির্দোষ হলে কিছু হবে না। [অবশ্য কোন কোন অভিশাপ অনেক সময় অন্যায়ভাবে হলেও লেগে যায়, তবে সেটা অভিশাপদাতার অনুতাপের কারণ হয়।] অপরদিকে গায়রুল্লাহর কাছে (যেমন- প্রকৃতি, অন্তর্গুরু, দেব-দেবী, বিভিন্ন অর্থহীন অজ্ঞাত আরবী নাম ইত্যাদি) কাউকে শায়েস্তা করার আবদার জানালে সেই বেচারা নির্দোষ হলেও শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
মূলত: যারা অন্যায়ভাবে নিরপরাধ মানুষের ক্ষতি করতে চায়, তাদেরই কুফর-শিরক ও যাদুটোনার আশ্রয় নেবার প্রয়োজন হয়। পক্ষান্তরে অপরাধী জালেম ও শয়তান যাদুকরদের শায়েস্তা করবার জন্য আল্লাহর কালামই যথেষ্ট। এজন্য দেখবেন, যাদের ন্যায়-অন্যায় নির্বিশেষে যা ইচ্ছা তা পাওয়ার প্রবণতা থাকে, তারা এক আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হতে পারে না, শুধু কোরআন-হাদীসের দোয়াকে যথেষ্ট মনে করে না। বরং তাদেরকে ধরনা দিতে হয় মাজার ও ভণ্ডপীরের দরবারে, কিংবা কোন জ্যোতিষ গুরুর আখড়াতে, অথবা কোন কালীসাধকের ডেরায়। প্রার্থনা জানাতে হয় কথিত কোন মুর্শীদ বা অন্তর্গুরুর কাছে, ভরসা স্থাপন করতে হয় অন্তর্গুরুর উপরেই। অপরদিকে যারা শুধু ন্যায়সঙ্গতভাবে বৈধ জিনিস পেতে চায়, অন্যের জুলুম ও অনিষ্ট থেকে বাঁচতে চায়, জালেম ও অপরাধীর শাস্তি চায়, তারা এক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, কোরআন তেলাওয়াত বা শ্রবণ করে, হাদীসে বর্ণিত দোয়া পাঠ করে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে নিজের ভাগ্যবিধাতারূপে বরণ করে নেবার প্রয়োজন তাদের হয় না।
আমরা এখানে ক্লিয়ার করতে চাই:-
* কোরআনের আয়াত বা হাদীসের দোয়া তেলাওয়াত বা শ্রবণের দ্বারা কোন নিরপরাধ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা নেই। যখন কোন আয়াত বা হাদীসের দোয়ার দ্বারা বিশেষ কোন ধরনের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়, অথবা অনিষ্টকারী জালেমের শাস্তি কামনা করা হয়, তখন সেই দোয়াটি শুধুমাত্র দোয়াতে বর্ণিত সুনির্দিষ্ট অনিষ্ট থাকলেই সেক্ষেত্রে কার্যকর হবে, কেউ জালেম বা অনিষ্টকারী হয়ে থাকলেই কেবল শায়েস্তা হবে। যেমন- যখন কোন নজরদাতার নজর প্রদানকালে তার চোখের দিকে তাকিয়ে নজরের দোয়া পড়া হয়, তখন সেই নজর অসৎউদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়ে থাকলে এই দোয়ার দ্বারা কোন effect-ই হবে না। কেউ যদি বলে, নজরের দোয়ার দ্বারা সে অস্বস্তি বোধ করছে, তাহলে বুঝতে হবে, তার এই নজরটা নেক নজর ছিল না। অনুরূপভাবে, কেউ কোরআন বা হাদীসের কোন দোয়ার দ্বারা জালেমের শাস্তি প্রার্থনা করল। সেক্ষেত্রে সে যদি কারো দ্বারা মজলুম হয়ে থাকে, তাহলেই সে এর দ্বারা শাস্তি পেতে পারে। তার উপর যে ব্যক্তি কোন অনিষ্ট করেনি, তাকে সন্দেহ করে দোয়া পাঠ করলেও তার কোন কার্যকারিতা থাকবে না। অপরদিকে নাম-পরিচয় না জানা অনির্দিষ্ট ব্যক্তিও শাস্তি পেতে পারে, যদি সে প্রার্থনাকারীর অনিষ্ট সাধন করে থাকে।
অতএব, যে ব্যক্তি শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে রুকিয়া করছে, তার রুকিয়ার প্রভাবে কেউ শাস্তিপ্রাপ্ত হলে তার জন্য সে দায়ী নয়, বরং শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিই দায়ী। কারণ, সে যদি তার উপর আদৌ কিছু না করে থাকত, তাহলে তার তেলাওয়াত বা প্রার্থনার দ্বারা তার উপর কোন প্রভাব পড়ত না।
# যদি কোথাও দেখেন, উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই পরিবারের কর্তা এসব মামলায় রায় প্রদান করছে, তাহলে কর্তা যাদের পক্ষে রায় দেবে, বুঝতে হবে তারাই যাদুকর। কারণ, কেবল যাদুকরদের পক্ষেই সম্ভব তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই মানুষকে বশ করে নিজেদের পক্ষে বাগানো।
# বিবদমান সকলের জীবনী তথা লাইফ হিস্ট্রি যাচাই বা স্মরণ করে দেখুন, বৈষয়িক চিন্তা কাদের মধ্যে বেশি। ছোটবেলা থেকে কে কোন্ বিষয় নিয়ে বেশি মেতে ছিল? যেই ছেলেটা দ্বীন বা উম্মাহ নিয়ে বেশি ভাবে, সে আর যাই হোক, বিষয়-সম্পত্তির জন্য হিংসা বা নাশকতায় লিপ্ত হবে না। বরং শত্রুতা-ভালোবাসা যা করার সব আল্লাহর জন্য ও ন্যায়নীতির জন্যই করবে। সে কখনো নিরপরাধ মানুষের উপর জুলুমের চিন্তা করবে না, তবে জুলুমের শিকার হলে প্রতিশোধ নিতে পারে। আর প্রতিশোধ নিতে গিয়েও দ্বীন ও ঈমান বিসর্জন দেবে না। অপরদিকে যেই ছেলেমেয়েরা বাপের তুলনামূলক অস্বচ্ছল অবস্থাটা পার করেছে চাচাতো ভাই-বোনদের সাথে তুলনা করে ও হীনমন্যতায় ভুগে, আর্থিক অবস্থার অসমতা নিয়ে সর্বদা হিংসা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে; আর বাপের স্বচ্ছলতা লাভের পর বাপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ নিয়ে অনাবশ্যক মাতামাতি ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আসছে, এমনকি ভাইয়ের বিয়ের সময় পারিবারিক সম্পদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনবহিত পাত্রীপক্ষকে সম্পদলোভী সাব্যস্ত করে সিনক্রিয়েট করেছে; তাদের পক্ষেই সম্ভব বৈষয়িক চিন্তার বশে যাদুটোনার আশ্রয় নিয়ে প্রতিপক্ষকে নির্মূলে প্রবৃত্ত হওয়া।
# বিশেষ করে পরিবারে যদি অতীত জুলুমের রেকর্ড থেকে থাকে, পরিবারের ভিতর ধর্মদ্রোহিতা, শিশু নির্যাতন ও শয়তানি তৎপরতা সংঘটিত হয়ে থাকে; তাহলে বিচার করে দেখতে হবে, সেই সমস্ত পরিস্থিতিতে কারা জালেমের পক্ষে ছিল, আর কারা মজলুমের পক্ষে ছিল। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যারা ধর্ম ও মানবতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকে, তাদের পক্ষে কুফরী কর্মে লিপ্ত হওয়াটা অসম্ভব। আর যারা ধর্ম ও মানবতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ধর্মদ্রোহী জালেম ব্যক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকে, তারাই পারে কুফরী ও শয়তানী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে।
# কে কোন্ ধরনের দল বা গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত, তাদের কর্মকাণ্ড ও চিন্তা-চেতনা বিচার করলেও অপরাধী চিহ্নিত করা সহজ হবে। যারা তাওহীদের পক্ষে, দ্বীনের পক্ষে, মজলুমের পক্ষে, ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে, তারা কখনো দ্বীন বিসর্জন দিয়ে কুফরী কর্মে প্রবৃত্ত হবে না, কাউকে এ ধরনের কাজ করতেও দেবে না। পক্ষান্তরে যারা এমন কোন সেকুলার কাম সুফিবাদী সংঘের সদস্য হয়, জ্যোতিষ গুরুর শিষ্য হয়— যাদের কাছে দ্বীন ইসলামের কোন গুরুত্ব নেই, মজলুম মুসলিমদের আর্তনাদের কোন মূল্য নেই, যারা ইসলাম ও পৌত্তলিকতাকে এক পাটায় ব্লেন্ড করে খায়, বৈষয়িক সাফল্য লাভের কায়দা-কৌশল অধিক গুরুত্ব সহকারে শিখায়, মানুষের কাছে বাহ্যিক মিষ্টি কথা দিয়ে ভালো সাজার উপায় শিক্ষা দেয়, আবার ধর্মের নামে রাসূলের (সা.) প্রতিনিধি হবার ভগলা মার্কা দাবিও করে, স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে এক ভাবার কুফরী দর্শন প্রচার করে, তাদের পক্ষেই সম্ভব শিরক-কুফরের আশ্রয় নিয়ে মানুষের ক্ষতি সাধন করার।
যারা এক আল্লাহর কাছেই গায়েবি মদদ কামনা করে, তারা জ্ঞাতসারে কোন নিরপরাধ মানুষের ক্ষতির চিন্তা করে না, আর অপরাধীর শাস্তি কামনার ক্ষেত্রেও আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে প্রার্থনা জানায় না। অপরদিকে যারা প্রকৃতি, দেব-দেবী, কাল্পনিক মুর্শিদ, মনের গুরু এসবের ধ্যান করে ইচ্ছাপূরণের সাধনা করে, কেবল তারাই পারে কুফরী ও শিরকী পদ্ধতির সাহায্যে নিরপরাধ মানুষের ক্ষতি সাধনের কাজে নিয়োজিত থাকতে।

যদি কোন পরিবারে দেখা যায়, একটি পক্ষ অসুস্থ হলে আরেকটি পক্ষ সুস্থ হয়, আবার একটি পক্ষ সুস্থ হলে অপর পক্ষ অসুস্থ হয়, তাহলে সেখানে এই সম্ভাবনাই প্রবল যে, যেকোন একটি পক্ষ অন্যায়ভাবে যাদুটোনার মাধ্যমে অপর পক্ষের ক্ষতিসাধন করছে, আর অপর পক্ষ ভিকটিম হিসেবে শরীয়তসম্মত রুকিয়া ও প্রার্থনার সাহায্যে মোকাবেলা করে যাচ্ছে। যদি কোন এক পক্ষ অথবা উভয় পক্ষের তরফ থেকে এ সংক্রান্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তাহলে প্রকৃত অপরাধীকে নির্ণয় করার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে:-
(ক) উভয় পক্ষকে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বলবেন, "আমাদের কার মনে কী উদ্দেশ্য আছে, আমরা কে কি ধরনের তৎপরতায় লিপ্ত আছি, তা আল্লাহ প্রকাশ করে দিন।" যেকোন অপরাধীরা শপথ করে মিথ্যা কথা বলতে পারে, এমনকি নিজের উপর লানতের প্রার্থনা করতেও রাজি হতে পারে (যেহেতু লানতের বিষয়টাও দুনিয়াতে হওয়া জরুরী নয়, আখেরাতেও হতে পারে, তাই নগদ শাস্তির ভয় না থাকায় অপরাধীরা নিজের উপর লানত করে হলেও অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করতে পারে), কিন্তু সত্য প্রকাশের প্রার্থনা জানাতে ভুলেও রাজি হবে না।
(খ) নিজে এস্তেখারা করে দেখতে পারেন।
(গ) পেশাদার রাকীর মাধ্যমে সরাসরি রুকিয়া করে বিবদমান উভয় পক্ষের সকলের শরীরের জিনকে হাজির করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং জিনগুলোকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য নিতে হবে। অবশ্য জিনের স্বীকারোক্তিতে প্রাপ্ত তথ্য যাচাইসাপেক্ষ। মানুষের মধ্যকার সন্ত্রাসীদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে নির্দেশদাতা ও গডফাদার সংক্রান্ত তথ্য লাভের ক্ষেত্রে যেমন তাদের তথ্য বিনা বিচারে গ্রহণ করা হয় না, বরং অন্যান্য ক্লু এর সাথে মিলিয়ে দেখে যাচাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তেমনি জিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাপ্ত তথ্যের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।

বি:দ্র: (ক) ভিকটিম ব্যক্তির রুকিয়া বা লানতের ফলে যাদেরকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখবেন, তারা সবাই যে যাদুতে জড়িত হয়ে থাকবে— এমনটি নাও হতে পারে। কেউ কেউ এমনও থাকতে পারে, যারা যাদুর বিষয়ে জানত না, কিন্তু যাদুর বেনিফিশিয়ারী ছিল। যেমন- কোন মহিলা নিজের দাম্পত্য সুখের স্বার্থে অন্য কোন দম্পতির মধ্যে নারীরটা নিজে নিয়ে শক্তি অর্জন করল এবং পুরুষেরটা এনে দিয়ে নিজের স্বামীকে শক্তিশালী করল। সেক্ষেত্রে ভিকটিম দম্পতি রুকিয়া করলে বা দোয়া পড়লে তার প্রভাব যাদুকর মহিলার স্বামীর উপরেও পড়তে পারে। কারণ, এরূপ ক্ষেত্রে যাদুকর মহিলার স্বামীর নিজস্ব স্বাভাবিক শক্তি-সামর্থ্যের বাইরে অতিরিক্ত যেটুকু যাদুর মাধ্যমে সংগ্রহ করে দেয়া হয়েছিল, সেটুকু চলে যাবে; ফলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি দেখা দিতে পারে। কিন্তু সেজন্য এটা ভাবা যাবে না যে, তিনিও (যাদুকর মহিলার স্বামী) যাদুতে জড়িত ছিলেন। একইভাবে, কোন মহিলা নিজের বাচ্চাদের সুস্থ করার জন্য আরেকজনের বাচ্চাদের সুস্থতা কেড়ে নিয়ে নিজের বাচ্চাদের সুস্থ করে তুলল। এখন ভিকটিম বাচ্চার মা-বাবা যদি বাচ্চার নিয়তে রুকিয়া বা দোয়া করতে শুরু করে, তাহলে ভিকটিম বাচ্চারা সুস্থ হয়ে ওঠার সাথে সাথে যাদুকরের বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। সেজন্য একথা বলা যাবে না যে, ঐ বাচ্চাগুলোও যাদুতে জড়িত ছিল।
(খ) কেউ যদি অন্যকে সুস্থ বা সক্ষম হতে দেখেন এবং সেই সাথে নিজে অসুস্থ বা অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলেও একথা নিশ্চিতভাবে ভাবা যাবে না যে, অমুক আমাকে যাদু করেছে। কারণ, এমনও হতে পারে যে, কেউ নিজের স্বার্থে অন্যের স্বাস্থ্য কেড়ে নিয়ে নিজের আপনজনকে সুস্থ করেছিল; আর এখন প্রতিপক্ষ শরীয়তসম্মত রুকিয়া বা দোয়া করাতে প্রথম পক্ষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যেমন- উপরের উদাহরণে বর্ণিত যাদুকর মহিলার স্বামীকে যেমন যাদুকর ভাবা যাবে না, তেমনি তিনিও সদ্য সুস্থতা লাভ করতে দেখা দম্পতির কাউকে যাদুকর ভাবতে পারবেন না। একইভাবে, উপরের উদাহরণে উল্লেখিত যাদুকর মহিলার বাচ্চাদেরকে যেমন যাদুকর ভাবা যাবে না, তেমনি সদ্য সুস্থতা লাভকারী বাচ্চাগুলোর পিতামাতাকেও যাদুকর ভাবা যাবে না।

উপসংহারঃ সংক্ষেপে বলা যায়, মানুষের জীবনে যে কোন অসুবিধা, ব্যর্থতা ও প্রতিবন্ধকতা (blockage) তা সে শারীরিক সুস্থতার বিষয়ে হোক, অর্থনৈতিক তথা চাকুরী-ব্যবসার ব্যাপারে হোক, দাম্পত্য সম্পর্ক সংক্রান্ত হোক, ধর্মীয় ও নৈতিক বিষয়ে হোক, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে হোক; সেগুলো যাদুটোনা, জিন বা বদনজরের দ্বারা সাধিত হওয়া সম্ভব। বিশেষ করে যেসব সমস্যার কারণ অজ্ঞাত ও রহস্যজনক হয়ে থাকে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ (যেমন রোগের ক্ষেত্রে নিরাময়যোগ্য চিকিৎসা) গ্রহণের পরও কোন সমাধান না পাওয়া যায়, সেসব সমস্যা যাদুঘটিত হবার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। তবে যে পরিবারে যাদুটোনা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে কে যে ক্রিমিন্যাল কে যে ভিকটিম, কে যে নাটের গুরু কে যে হাতের পুতুল, তা নির্ণয় করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। কারণ, অনেক সময় একজন বিদ্বেষপরায়ণ ব্যক্তি তার প্রতিপক্ষের উপর যাদুটোনা করবার জন্য তৃতীয় ব্যক্তিকেও বশীভূত ও মোহগ্রস্ত করে ব্যবহার করতে পারে।
অত্র প্রবন্ধে বর্ণিত যাদুর লক্ষণগুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং যথারীতি সেগুলোর রেফারেন্সও প্রদান করা হয়েছে। কাজেই বর্ণিত লক্ষণগুলোকে কারো মনগড়া ভাবারও সুযোগ নেই, কিংবা মনের ভুল হিসেবে দেখারও কারণ নেই। কোন ভুক্তভোগী ব্যক্তি বা পরিবারের রোগব্যাধি, পরিস্থিতি ও ঘটনা-দুর্ঘটনা সব মিলিয়ে যদি বর্ণিত লক্ষণগুলোর ৮০% মিলে যায় এবং সেগুলোর মধ্যে দু'একটা লক্ষণ এমনও পাওয়া যায় যেগুলো জিন-যাদুর প্রভাব ছাড়া এমনিতে মনোদৈহিক কারণে হওয়া অসম্ভব [যেমনটি বর্ণিত হয়েছে "ডাক্তারী সমস্যা বনাম জিন-যাদুর সমস্যার পার্থক্য নিরূপণ" শীর্ষক অনুচ্ছেদের 'গ' নং পয়েন্টে], তাহলে তাদের জিন বা যাদুর ভিকটিম হবার ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ থাকবে না। আর এরূপ ভিকটিমদের নিকটবর্তী মানুষজনের মধ্যে যদি কারো গতিবিধি, আচার-আচরণ, মতিগতি ও চাহনি অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক প্রতীয়মান হয় এবং তারা যদি ভিকটিমদের প্রতি সামনে বা পিছনে হিংসা ও বিরূপ ভাব প্রকাশকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে তাদের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করাকে কোন মিথ্যা অপবাদ বা ভুল বুঝাবুঝি ভেবে উড়িয়ে দেয়া যাবে না।
যাদুকরদের যাদুর আঘাত যখন তীব্র আকার ধারণ করে, ভিকটিমদের শরীরের উপর লাগাতারভাবে উপর্যুপরি নিক্ষিপ্ত হতে থাকে, তখন শরীরের কোন নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং যুদ্ধক্ষেত্রের তীর বা গুলির মতই যেকোন স্থানে বিঁধতে পারে। চরম পর্যায়ে যাওয়ার পর ভিকটিমদের জন্য আর লক্ষণ মিলিয়ে দেখারও প্রয়োজন থাকে না; যাদুটোনায় আক্রান্ত হলাম কিনা, তা যাচাই করে দেখাটাও নিষ্প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। সেরকম পর্যায়ে যাদুর বাণ থেকে আত্মরক্ষা কিভাবে করতে হবে, সেটাই একমাত্র প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। যাদুর লক্ষণ বর্ণনা দরকার হয় প্রাথমিক অবস্থায় ভিকটিমের সমস্যা নির্ণয়ের জন্য, রেফারেন্স সংকলন করতে হয় মানুষের কাছে প্রমাণ হিসেবে পেশ করার জন্য। যদিও বিষের যাতনা কেবল সেই বুঝবে, যাকে আশীবিষে দংশিয়েছে।
আমাদের সমাজে সংঘটিত ঘটনা-দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যকের পিছনে নেপথ্য কারণ হয়ে থাকে যাদুটোনা। কিন্তু এ বিষয়ে সচেতনতা ও প্রত্যক্ষ প্রমাণ না থাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। কোন লোক রাগের মাথায় বউকে একটা টাক দিয়ে মেরে ফেলল, অথবা তালাক দিয়ে দিল, সেক্ষেত্রে ঐ লোকটাই আইনের আওতায় আসবে। কোন ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগী মরে গেল, সেখানে ডাক্তারই মার খাবে, হাসপাতাল ভাংচুর হবে। কোন গাড়িতে চাপা পড়ে পথচারী মারা গেল, সেক্ষেত্রে গাড়ি ভাংচুর হবে, আর ড্রাাইভার হয় ছাত্র বা পাবলিকের হাতে মার খাবে অথবা আইনের হাতে বিচারের সম্মুখীন হবে। কিন্তু নেপথ্যে থেকে ইচ্ছাকৃত ও সুপরিকল্পিতভাবে ঠাণ্ডা মাথায় যাদু বা জিন চালান করে যে বা যারা এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। ডাক্তার বা ড্রাইভারের ভুলের পিছনেও যে রোগী বা পথচারীর পারিবারিক হিংসার সম্পর্ক থাকতে পারে, একথা কারো মাথাতেই আসবে না। তবে কোন নির্দিষ্ট দুর্ঘটনার পিছনে কার পরিবারের কোন্ হিংসুক ব্যক্তির চালান করা জিনের সম্পর্ক আছে, সেটা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তাই সামগ্রিকভাবে দেশ থেকে যাদু ও যাদুকরদের উচ্ছেদ করাটাই যাদুজনিত দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করা এবং এসবের কবল থেকে সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ। তবে এখনো যেহেতু এ বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা চালু হয়নি, তাই সকলের ব্যক্তিগত উদ্যোগে রুকিয়া ও দোয়ার মাধ্যমে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে নিরাময় ও সুরক্ষিত করার দিকে মনোযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনা পরীক্ষার চেয়েও বেশি জরুরী হলো যাদুর উপস্থিতি পরীক্ষা করা।
এককথায়, যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে
(ক) উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলোর মধ্যে অধিকাংশ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, অথবা কোন ধরনের অস্বাভাবিক সমস্যা বা অসুস্থতা দেখা যায়;
(খ) ডাক্তারী পরীক্ষায় ধরা পড়ে না বা ডাক্তারী চিকিৎসায় ফল পাওয়া যায় না— এমন কোন উপসর্গ বিদ্যমান থাকে;
(গ) তিনি নিজে কোনরূপ যাদুটোনায় জড়িত না হয়ে থাকেন;
তাহলে তাকে যাদুর শিকার বলে ধরে নেয়া যায়।


3 comments: